সাংবিধানিক পন্থায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ফলপ্রসূ করতে সব রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
বুধবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কালো দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
ঢাবি উপাচার্য বলেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশকে অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক পদ্ধতির অনুসরণে কি রকম পর্যুদস্ত হয় তা আমরা আগে দেখেছি। তাই সব রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানাব, তাদের সবার উচিত সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় দেশের আসন্ন নির্বাচনকে ফলপ্রসূ করতে।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে যেমন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে ক্ষমতা হস্তান্তর করার পরিকল্পনা করা হয়, সেভাবেই ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি বেঁচে যান। পরের ঘটনাগুলো তারই ধারাবাহিকতায় ঘটেছে।
কালো দিবস উপলক্ষে তিনি বলেন, ২০০৭ সালের ২৩ আগস্ট স্বৈরশাসকদের দ্বারা তখন সমগ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আক্রান্ত হয়েছিল। যার মূল লক্ষ্য ছিল দেশকে আবারও পাকিস্তানি অগণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে নেওয়া। একটি ভয়ংকর পটভূমির ওপর এ ঘটনার জন্ম দিয়েছিল। একদিকে দেশে স্বৈরশাসন, অন্যদিকে সন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদের উত্থান- সব মিলিয়ে আমাদের শিক্ষকদের জন্য কঠিন সময় পার করতে হয়েছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, তখন নীল দলের একটি সভায় মাত্র ১৭ জন এসেছিলেন এবং কনভেনিং সভায় মাত্র ৫ জন এসেছিলেন। এমন একটা পরিস্থিতিতে সবাই খুবই আতঙ্কিত ছিলেন। অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনসহ অনেক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আমরা নিয়মিত জেলে তাদের দেখতে যেতাম। ঢাকার আদালতে যেতাম, আন্দোলন করতাম তাদের মুক্তির জন্য।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত মাত্র একবার শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত দুই নির্বাচনে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হচ্ছে। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে কেউ আন্দোলন করার সাহস করত না। আমরা গুটিকয়েক শিক্ষকরা সবসময়ই তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেছি। যদি আজকের শিক্ষক ও ছাত্ররা আন্দোলন না করত তাহলে তারা সহজেই এ দেশ ছাড়ত না। পরবর্তীতে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসেন।
তিনি আরও বলেন, আজকেও একটি দল অগণতান্ত্রিক উপায়ে চালানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের মাঠে শক্তি নেই, এজন্য তারা ভিন্ন পথ অবলম্বন করতে চাচ্ছে। ’৫২ থেকে শুরু করে ’৬৯, ’৭১ থেকে পরবর্তী সব আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যুগপৎ ভূমিকা রেখেছেন। এখনো বিরোধীদের কূটচাল নস্যাৎ করতে ভূমিকা রেখে যাবে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী আন্দোলন রোধ করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনা ক্যাম্প করতে দেওয়া ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রথম ভুল। তৎকালীন শিক্ষক সমিতি সে সময় প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা পালন করেছে। সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন গ্রেপ্তার হলেও শিক্ষক সমিতি কোনো আলোচনায়ও বসতে চায়নি। তৎকালীন শিক্ষক সমিতিতে যারা ছিলেন তারা সেনাবাহিনীদের সমর্থন করেছিলেন কিনা- এ ব্যাপারে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকারের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মমতাজউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
২০০৭ সালের ২০-২৩ আগস্ট তৎকালীন সেনা সমর্থিত তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনার স্মরণে পরের বছর ২০০৮ সাল থেকে প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।
মন্তব্য করুন