জয়নাল আবেদীন, ববি
প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৫, ১০:০৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কক্ষ সংকট ও সেশনজটে হতাশা বাড়ছে ববি শিক্ষার্থীদের

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : কালবেলা
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : কালবেলা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চাহিদার মাত্র ৩২ শতাংশ শিক্ষক দিয়ে চলছে ২৫ বিভাগের কার্যক্রম। প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে ২১০ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষাছুটিতে রয়েছেন ৫৪ জন। বর্তমানে ১৫৬ শিক্ষক নিয়েই চলছে ১৫০ ব্যাচের কার্যক্রম।

ফলে সেশনজট তীব্র হয়ে উঠেছে অনেক বিভাগে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, কক্ষ ও শিক্ষক সংকটের কারণেই একাডেমিক গতিশীলতা থমকে যাচ্ছে, বাড়ছে হতাশা।

রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে জানা যায়, অর্গানোগ্রামে ৪৯৩ শিক্ষক চাহিদা দেওয়া হয়, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অনুমোদন দেয় ২৬৬ শিক্ষক, যা শতকরা ৫৪ শতাংশ। গত বছরের ২২ ডিসেম্বরের তথ্যমতে, ছাড়কৃত বা অনুমোদন দেওয়া শিক্ষকের মধ্যে থেকে ২১০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

বাকি ৫৬টি শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে, যা এখনো নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি। হিসাব করে দেখা যায়, চাহিদা থেকে ছাড়কৃত শিক্ষকের মধ্যে মাত্র ৪৩ শতাংশ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এরই মধ্যে আবার ৫৪ জন শিক্ষাছুটিতে থাকায় বর্তমানে পাঠদান নিচ্ছে ১৫৬ জন, যা মোট চাহিদার ৩২ শতাংশ শিক্ষক।

হিসাব করে দেখা যায়, বর্তমানে ৬৪ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র একজন। ২০২৪ সালের মার্চ ও জুন মাসে ৫২ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও হয়নি বোর্ড। এমনকি এই বিজ্ঞপ্তি পুনঃবিজ্ঞপ্তি দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি এখনো বাস্তবায়ন করেননি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী ৪৯ অধ্যাপক থাকার কথা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে অনুমোদনকৃত পদের সংখ্যা ১১টি। অথচ প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য রয়েছে মাত্র একজন অধ্যাপক।

শিক্ষক সংকট, কক্ষ সংকট ও শিক্ষকদের আন্তরিকতার অভাবে প্রায় বিভাগে সেশনজট রয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। ইংরেজি বিভাগ, রসায়ন বিভাগ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, লোকপ্রশাসন বিভাগ, উপকূলীয় অধ্যয়ন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে রয়েছে তীব্র সেশনজট। এ ছাড়া অন্যান্য বিভাগে ব্যাচভিত্তিক সেশনজট রয়েছে। গত ১৪ বছরে সেশনজট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করলেও ফলপ্রসূ হয়নি বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

সেশনজট ও শিক্ষক সংকট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ বিভাগের ১০ শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, আমাদের একাডেমিক ভবন নির্মাণ যেমন দরকার, তেমনি শিক্ষক সংকট দূরীকরণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তাহলে সেশনজট নিরসন করা সম্ভব হবে।

রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন জানান, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কক্ষ সংকট তো রয়েছে; কিন্তু শিক্ষক সংকট চরমে। অন্তত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অনুপাতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া দরকার। তাহলে সেশনজট থেকে মুক্ত পাবে শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরে এখন পর্যন্ত পাঁচজন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেছেন। উপাচার্যরা সেশনজট মুক্ত করার ঘোষণা দিলেও তা শুধু মুখে ও কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। প্রতিটি বিভাগের জন্য এক থেকে দুটি করে কক্ষ থাকলেও কাগজে-কলমে তা নির্ধারিত নয়। বর্তমানে ২৫ বিভাগের জন্য কক্ষ রয়েছে ৩৬টি, শিক্ষক রয়েছে মাত্র ১৫৬ জন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন সহযোগী অধ্যাপক ড. ধীমান কুমার রায় কালবেলাকে জানান, একদিকে আমাদের শিক্ষক সংকট, অন্যদিকে কক্ষ সংকট রয়েছে। দুটোই আমাদের প্রয়োজন। শিক্ষক বেশি হলে পাঠদান নিতে জায়গার প্রয়োজন পড়বে, আবার কক্ষ বেশি হলে শিক্ষকের প্রয়োজন পড়বে। তাই সেশনজট নিরসনে কক্ষ বাড়ানো ও শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। তাহলে একাডেমিক গতিশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী কালবেলাকে বলেন, আমার জানা মতে, শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াটা শুরু করার জন্য আমি উপাচার্যকে অবগত করেছিলাম। পরে আমার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়নি।

কক্ষ ও শিক্ষক সংকট সেশনজটের অন্যতম প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শূচিতা শরমিন কালবেলাকে বলেন, সম্প্রতি দেশের নানা প্রতিকূলতার কারণে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে উঠেনি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতির বিষয় আছে। শিক্ষক নিয়োগ দিলে তাদের বসার জায়গা ও ক্লাস রুম নিয়েও ভাবতে হবে। যেসব বিভাগে শিক্ষাছুটিতে গেছে শূন্যপদ অনুযায়ী দ্রুতই শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তামিমসহ বিসিবির নির্বাচন থেকে আরও সরে দাঁড়ালেন যারা

মো. বিল্লাল হোসেনের প্রথম গ্রন্থ ‘শৈশবের দুঃস্বপ্ন’ প্রকাশিত

ভিন্নরূপে ঐশ্বরিয়া

এই ৩ ফলের রসে স্বাভাবিকভাবে বাড়বে সন্তানের উচ্চতা

হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে থাকার অঙ্গীকার আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ারের

বরিশালের স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শাহিনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি প্রদান বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের

ডাকযোগে আবেদন করুন মেট্রোরেলে

ইলিশ চুরির অভিযোগে হাত-পা বেঁধে ২ শিশুকে নির্যাতন

অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে বদ্ধপরিকর বিএনপি : আমিনুল হক

১০

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ

১১

শক্তিশালী বৃষ্টিবলয়ের প্রভাব কয়দিন থাকবে, জানা গেল

১২

সরকারি চাকরিজীবীরা কবে থেকে পে-স্কেল পাবেন, জানালেন অর্থ উপদেষ্টা

১৩

দুর্গম পাহাড়ে বন্দি নারী-শিশুসহ ৮ জনকে উদ্ধার

১৪

জানালা খুলে ঘুমন্ত যুবককে গুলি করে হত্যা

১৫

১৫ বছর ধরে আলাদা থাকছেন গোবিন্দ-সুনীতা

১৬

বাজেট পাসে ব্যর্থ সিনেট / যুক্তরাষ্ট্রে অনির্দিষ্টকালের জন্য শাটডাউন

১৭

ঢাকাসহ ৮ জেলায় ভারী বৃষ্টির শঙ্কা

১৮

খাগড়াছড়ির সেই কিশোরীর ‘ধর্ষণের আলামত পাননি’ চিকিৎসক

১৯

সাগরে লঘুচাপ, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত

২০
X