বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) সার্বিক উন্নয়ন ও শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়নের লক্ষ্যে ৮০টি দাবি উত্থাপন করেছেন শিক্ষার্থীরা। স্বল্পমেয়াদি, দীর্ঘমেয়াদি এবং কাঙ্ক্ষিত সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের ভিত্তিতে এই দাবিগুলো সাজানো হয়েছে। সাবেক উপাচার্যের অপসারণ এবং নতুন অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগের ১২ দিনের মাথায় নতুন করে ৮০ দফা দাবি নিয়ে এলো শিক্ষার্থীরা।
গত ১৯ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি সম্মিলিত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতেই এই ৮০ দফা দাবি চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানা যায়। এর মধ্যে ৪১টি স্বল্পমেয়াদি, ২০টি দীর্ঘমেয়াদি ও ডিজিটালাইজেশনের লক্ষ্যে ১৯টি দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।
দাবিগুলোর মধ্যে- ক্যাম্পাসের আয়তন বৃদ্ধি, একাডেমিক ভবন নির্মাণ ও শতভাগ আবাসন নিশ্চিতকরণ, অনাবাসিক অভাবগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের আবাসন ভাতা, শিক্ষক সংকট নিরসন, সেশন জট নিরসনে কার্যকরী পদক্ষেপ, মানসম্মত রাস্তা, রাস্তার পাশে ফুটপাত ও ড্রেন নির্মাণ, কেন্দ্রীয় গবেষণাগার, অডিটরিয়াম-জিমনেসিয়াম নির্মাণ, পুকুর-ডোবা সংস্কার, লাইব্রেরিতে সিট বৃদ্ধিকরণ, মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস গড়াসহ বিভিন্ন সংকটগুলো নিরসনের দাবি স্থান পেয়েছে।
দাবিগুলোর অধিকাংশই যৌক্তিক ও সময়োপযোগী বলে মত দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, আবাসন, চিকিৎসা, পরিবহন ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতাসংক্রান্ত দাবিগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তারা।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী তাওহীদা রাকা বলেন, দাবিগুলো যৌক্তিক ও সময়োপযোগী। তবে এত সংখ্যক দাবি একসঙ্গে বাস্তবায়ন কঠিন হতে পারে। তাই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি স্থায়ী যৌথ কমিটি গঠন করে এসব দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা তৈরি করা উচিত।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের দাবিগুলো যৌক্তিক। ক্লাসরুম সংকট, শিক্ষক সংকট, আবাসন সংকটগুলো অত্যন্ত জরুরি। দাবিগুলো বাস্তবায়িত হলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অনেকদূর এগিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে ববি উপাচার্য অধ্যাপক ড. তৌফিক আলম কালবেলাকে বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো অত্যন্ত যৌক্তিক। এগুলো শুধু শিক্ষার্থীদের দাবিই নয়, আমারও দাবি। অনেকগুলো কাজই আমরা ইতোমধ্যে সমাধান করেছি, কিছু কাজ শুরু হয়েছে। বাকি কাজগুলো খুব দ্রুত শুরু করতে পারব বলে আশা করছি।
উপাচার্য আরও বলেন, দীর্ঘমেয়াদি কাজগুলো একটু সময়সাপেক্ষ, যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা সেগুলো এগিয়ে নিয়ে যাব। দাবিগুলো যেন রাজনীতি বা ব্যক্তিস্বার্থে প্রভাবিত না হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যায় সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয়টির উন্নয়নসহ বিভিন্ন কারণে ২২ দফা পেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এ দাবি আদায়ে আন্দোলন করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মামলার শিকার হন তারা। পরে সে দাবি ৪ দফায় এবং তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়। শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ১৩ মে অপসারণ করা হয় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. শূচিতা শরমিনকে।
মন্তব্য করুন