আলকাম রমিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৫, ০১:৪৪ পিএম
আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২৫, ০২:০৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘চোখের নিচের তিলই পার্থক্য ছিল মুগ্ধ-স্নিগ্ধের’

মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। পুরোনো ছবি
মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। পুরোনো ছবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত বছরের এ দিনে প্রাণ হারান মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। এক বছর হয়ে গেল মুগ্ধ নেই, কিন্তু তার রেখে যাওয়া মুগ্ধতা ছড়িয়ে আছে আন্দোলনের স্লোগানে, একটি পরিবারের মাঝে।

মুগ্ধর জীবনের শেষ দিনটি ছিল অভ্যাসের মতোই সাধারণ। পরিবারের সবাইকে পৌঁছে দিয়েছিলেন বাসস্টেশনে। পরিবার যাচ্ছিল কক্সবাজার, উখিয়ায়। বিদায়ের সময় মায়ের উদ্দেশে বলে গিয়েছিলেন মাত্র দুটি শব্দ ‘আম্মু, যাই।’ সেটাই ছিল তাদের শেষ দেখা। কেউ ভাবেনি, ছেলের মুখ আর দেখা হবে না। পরিবারের সদস্যরা তখনো জানতেন না, যে ছেলে হাসিমুখে বিদায় জানিয়েছিল, সে ওই বিকেলেই ইতিহাস হয়ে যাবে।

বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে মুগ্ধ ছিলেন আজমপুরে, আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে পানি পান করাচ্ছিলেন। সহযোদ্ধাদের সেবায় ব্যস্ত সেই ছেলেটি, ঠিক ২৮ মিনিট পর ৫টা ৫০ মিনিটে গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন রাজপথে। মৃত্যুর ৯ মিনিট আগে নিজের মোবাইলে তিনি ধারণ করেছিলেন একটি ভিডিও—সেখানে উপস্থিত সবাইকে গুলির ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন মুগ্ধ। সেটাই ছিল তার শেষ বার্তা।

যমজ ভাই স্নিগ্ধের সঙ্গে ছোটবেলার ছবি দেখিয়ে মুগ্ধের বাবা এখন বলেন, ‘চোখের নিচের তিলটাই বলে দিত, কোনটা মুগ্ধ, কোনটা স্নিগ্ধ। এখন সে চিহ্নই একমাত্র সম্বল।’

মৃত্যুর তিন দিন আগে আন্দোলনে যাবার জন্য বাবা-মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিলেন মুগ্ধ। বড় ভাই দীপ্তের সঙ্গে ছিল বন্ধুর মতো সম্পর্ক। কিন্তু মুগ্ধর মৃত্যুসংবাদটা শুনতে হয়েছিল উখিয়ায় অবস্থানরত বড় ভাইকেই; মুঠোফোনে জানিয়েছিল স্নিগ্ধ।

পরিবার চেয়েছিল মুগ্ধকে দাফন করতে উত্তরায় তার দাদা-দাদির কবরের পাশে। কিন্তু নানা জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত তাকে শায়িত করা হয় কামারপাড়া কবরস্থানে, যেখানে কেবল এলাকার ভোটারদের দাফন করার রীতি। কিন্তু মুগ্ধর জন্য সেই নিয়ম ভাঙা হয়।

মুগ্ধ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতক শেষ করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) থেকে এমবিএ করছিলেন। একটি অপূর্ণ স্বপ্ন ছিল তার—বিমানবাহিনীতে যোগ দেওয়া। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি।

উত্তরার তার বাসার গলিটির নাম এখন ‘মীর মুগ্ধ সড়ক’। সেই গলিতে আর ফিরে আসে না মুগ্ধর পায়ের শব্দ, কিন্তু প্রতিবাদের প্রতিধ্বনির মতো বাজে তার নাম। যে তরুণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল বুক চিতিয়ে, সেই নামটি আজ ইতিহাস হয়ে গেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাসায় বসেই নিজের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবেন যেভাবে

মুন্সীগঞ্জে বাজারে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ

ষড়যন্ত্রকারীরা ঘাপটি মেরে আছে: ডা. জাহিদ

বিদেশি নির্বাচন নিয়ে কূটনীতিকদের মন্তব্য নিষিদ্ধ করল ট্রাম্প প্রশাসন

হাতিরঝিলে রাত ১১টা পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ

হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি দেখে মরতে চাই : সারজিস

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১১৪

লড়াই শেষ না করে আমরা থামব না : নাহিদ

নয়াপল্টনে জড়ো হচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা

বাংলাদেশে স্টারলিংক কার্যক্রমের প্রশংসা করলেন লরেন ড্রেয়ার

১০

গোপালগঞ্জের ঘটনার জেরে নয়, সেই সেনা সদস্য চাকরি ছাড়েন আগে

১১

এনআরবিসি ব্যাংকে নিয়োগ, আবেদন করুন অনলাইনে

১২

হাসপাতালে রাকেশ রোশান

১৩

ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার মিশনের কার্যক্রম শুরু

১৪

গাজীপুরে অটোরিকশা-কাভার্ডভ্যান সংঘর্ষে নিহত ৪

১৫

ট্রাম্প সফরের খবর প্রত্যাহার করে নিল পাকিস্তানি টিভি চ্যানেল

১৬

চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির দাবি জানিয়েছে বিএনপি

১৭

ডোবায় ভাসছিল অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ

১৮

নেপালের বিপক্ষে হামজা-সামিতকে পাচ্ছে না বাংলাদেশ

১৯

আমিরাতের কাছে এনভিডিয়ার চিপ বিক্রিতে ভয় আমেরিকার

২০
X