শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
আলকাম রমিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৫, ০১:৪৪ পিএম
আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২৫, ০২:০৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘চোখের নিচের তিলই পার্থক্য ছিল মুগ্ধ-স্নিগ্ধের’

মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। পুরোনো ছবি
মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। পুরোনো ছবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত বছরের এ দিনে প্রাণ হারান মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। এক বছর হয়ে গেল মুগ্ধ নেই, কিন্তু তার রেখে যাওয়া মুগ্ধতা ছড়িয়ে আছে আন্দোলনের স্লোগানে, একটি পরিবারের মাঝে।

মুগ্ধর জীবনের শেষ দিনটি ছিল অভ্যাসের মতোই সাধারণ। পরিবারের সবাইকে পৌঁছে দিয়েছিলেন বাসস্টেশনে। পরিবার যাচ্ছিল কক্সবাজার, উখিয়ায়। বিদায়ের সময় মায়ের উদ্দেশে বলে গিয়েছিলেন মাত্র দুটি শব্দ ‘আম্মু, যাই।’ সেটাই ছিল তাদের শেষ দেখা। কেউ ভাবেনি, ছেলের মুখ আর দেখা হবে না। পরিবারের সদস্যরা তখনো জানতেন না, যে ছেলে হাসিমুখে বিদায় জানিয়েছিল, সে ওই বিকেলেই ইতিহাস হয়ে যাবে।

বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে মুগ্ধ ছিলেন আজমপুরে, আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে পানি পান করাচ্ছিলেন। সহযোদ্ধাদের সেবায় ব্যস্ত সেই ছেলেটি, ঠিক ২৮ মিনিট পর ৫টা ৫০ মিনিটে গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন রাজপথে। মৃত্যুর ৯ মিনিট আগে নিজের মোবাইলে তিনি ধারণ করেছিলেন একটি ভিডিও—সেখানে উপস্থিত সবাইকে গুলির ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন মুগ্ধ। সেটাই ছিল তার শেষ বার্তা।

যমজ ভাই স্নিগ্ধের সঙ্গে ছোটবেলার ছবি দেখিয়ে মুগ্ধের বাবা এখন বলেন, ‘চোখের নিচের তিলটাই বলে দিত, কোনটা মুগ্ধ, কোনটা স্নিগ্ধ। এখন সে চিহ্নই একমাত্র সম্বল।’

মৃত্যুর তিন দিন আগে আন্দোলনে যাবার জন্য বাবা-মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিলেন মুগ্ধ। বড় ভাই দীপ্তের সঙ্গে ছিল বন্ধুর মতো সম্পর্ক। কিন্তু মুগ্ধর মৃত্যুসংবাদটা শুনতে হয়েছিল উখিয়ায় অবস্থানরত বড় ভাইকেই; মুঠোফোনে জানিয়েছিল স্নিগ্ধ।

পরিবার চেয়েছিল মুগ্ধকে দাফন করতে উত্তরায় তার দাদা-দাদির কবরের পাশে। কিন্তু নানা জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত তাকে শায়িত করা হয় কামারপাড়া কবরস্থানে, যেখানে কেবল এলাকার ভোটারদের দাফন করার রীতি। কিন্তু মুগ্ধর জন্য সেই নিয়ম ভাঙা হয়।

মুগ্ধ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতক শেষ করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) থেকে এমবিএ করছিলেন। একটি অপূর্ণ স্বপ্ন ছিল তার—বিমানবাহিনীতে যোগ দেওয়া। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি।

উত্তরার তার বাসার গলিটির নাম এখন ‘মীর মুগ্ধ সড়ক’। সেই গলিতে আর ফিরে আসে না মুগ্ধর পায়ের শব্দ, কিন্তু প্রতিবাদের প্রতিধ্বনির মতো বাজে তার নাম। যে তরুণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল বুক চিতিয়ে, সেই নামটি আজ ইতিহাস হয়ে গেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তাসনিম অনন্যার অনুসন্ধানে মহাবিশ্বের চাঞ্চল্যকর রহস্য উন্মোচন

২০২৬ বিশ্বকাপে কবে মুখোমুখি হতে পারে আর্জেন্টিনা–ব্রাজিল?

বিশ্বকাপের গ্রুপ অব ডেথে ফ্রান্স

নুরুদ্দিন অপুর হাত ধরে আ.লীগ নেতার বিএনপিতে যোগদান

২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠিত: দেখে নিন কোন গ্রুপে কোন দল

২০২৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ যারা

রাতে আবার হাসপাতালে গেলেন জুবাইদা রহমান

যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পরিধি বাড়ছে, তালিকায় ৩০টির বেশি দেশ

খালেদা জিয়ার এন্ডোসকপি সম্পন্ন, বন্ধ হয়েছে রক্তক্ষরণ

‘বাঁধের মাটি বড় বড় খণ্ড হয়ে ঝুপঝাপ শব্দে ভেঙে পড়ে’

১০

রাজমিস্ত্রির বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

১১

দেড় হাজার দৌড়বিদের অংশগ্রহণে হাফ ম্যারাথন

১২

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় ফ্রি যাত্রীসেবা

১৩

বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা, প্রতিবাদে বিক্ষোভ 

১৪

যুবদল নেতা সুমনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

১৫

দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, একজন গুলিবিদ্ধসহ আহত ১০

১৬

গণতন্ত্র মঞ্চের নতুন সমন্বয়ক সাইফুল হক

১৭

পুরোনো রাজনীতি পরিহার করে নতুন রাজনীতি করতে চাই : মঞ্জু

১৮

খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা দেখার জন্য শেখ হাসিনা বেঁচে আছেন : স্বপন

১৯

ভুয়া ফটোকার্ড ও অপপ্রচারের অভিযোগে জিডি করলেন ছাত্রদলের আবিদ-মায়েদ

২০
X