হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য নির্ধারিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ১৩টি বাসের মধ্যে ৮টি বাসই নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। ভালো থাকা অবশিষ্ট ৫টি বাস এবং ২টি বিআরটিসি দ্বিতল বাস দিয়েই বর্তমানে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে যাতায়াত করছেন। প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ৭টি বাস চলমান থাকায় বাসে নিয়মিত যাতায়াত করা শিক্ষার্থীরা পড়েছেন তীব্র ভোগান্তিতে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থীর বড় একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকটের কারণে দিনাজপুর কলেজ মোড়, সুইহারী, চৌরঙ্গী এলাকার বিভিন্ন মেসে বসবাস করেন। কেউ কেউ নিজেদের বাসা থেকেই ক্লাস করে। শহর থেকে ক্যাম্পাসে আসার জন্য বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই যাতায়াত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে। আবার অনেক শিক্ষার্থীই দিনাজপুর শহরে টিউশন করাতে যাওয়ার জন্য ক্যাম্পাসের বাসেই যাতায়াত করেন।
বর্তমানে বাসের সংখ্যা কম থাকায় বেশিরভাগ সময়ই অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর চাপ নিতে হচ্ছে সচল বাসগুলোকে। অনেক সময় সিট না পেয়ে শিক্ষার্থীদেরও দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। বিশেষ করে ক্লাস শেষ হওয়ার সময়গুলোতে বাসে করে যাতায়াত করতে এবং বাসের সিট পেতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এক্ষেত্রে নারী শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন বেশি। আগে ছাত্রীদের জন্য কয়েকটি ট্রিপে আলাদা বাস থাকলেও বর্তমানে সেটি নেই। এতে করে ছাত্রীদের ভোগান্তি যেন বেড়ে গেছে আরও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন শাখা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস ১৩টি। এর মধ্যে বর্তমানে ৮, ৯, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৮ ও ২১ নম্বর বাস নানারকম ত্রুটির কারণে অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। সচল থাকা ১১, ১২, ১৭, ১৯, ২০ নম্বর এবং ২টি বিআরটিসি দ্বিতল বাস দিয়েই যাতায়াত করছেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে নিয়মিত শহরে যাতায়াত করছে এমন কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, বাসে সিট পাওয়া বর্তমানে খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। সিট ধরতে হলে বাস ছাড়ার ১৫/২০ মিনিট আগে এসে বাসে উঠতে হয়। অনেক সময় বড়মাঠ থেকে যে বাস আসে সেটিই আবার ক্যাম্পাস থেকে ছাড়ে। সেই বাসে সিট পাওয়া তো দূরের কথা ভেতরে ঢুকতেই অনেক ভিড় অতিক্রম করে উঠতে হয়।
হাবিবা খাতুন নামের এক ছাত্রী বলেন, বাসে সিট পাওয়া বর্তমানে মেয়েদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে গেছে। মেয়েদের পক্ষে ধাক্কাধাক্কি করে বাসে ওঠা সম্ভব না। অনেকসময় বাধ্য হয়ে অটোতে করেই যাতায়াত করছি।
বাস সংকটের বিষয়ে পরিবহন শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বর্তমানে দুটি বিআরটিসিসহ মোট ৭টি বাস চলমান আছে। বাকি বাসগুলো ঠিক করার জন্য আমাদের কাজ চলমান আছে। বাস চালাতে চালাতে মাঝেমধ্যেই অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে যায়। আমরা যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করছি। খুব দ্রুতই আশা করছি ১০ বাস চলাচলের যোগ্য করতে পারব। প্রয়োজনে ছাত্রীদের জন্য আলাদা বাসের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনাও আছে।
এ সময় প্রশাসনের কাছে পরিবহন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের অধিকাংশ বাসের বয়স ২৫ বছরের বেশি। স্বাভাবিকভাবেই সেগুলো আগের মতো সার্ভিস দিতে পারছে না। পাশাপাশি মেইনটেইন্যান্স খরচও বেড়ে যাচ্ছে। এ বিষয়টি প্রশাসন দেখলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো। পাশাপাশি গাড়ি ঠিক করার জন্য বাজেট একটু বাড়ানো জরুরি এবং দক্ষতার সঙ্গে বাজেটের সঠিক ব্যবহারও জরুরি। প্রয়োজনে পুরোনো গাড়িগুলো বাদ দিয়ে নতুন গাড়ি কেনার বিষয়টি ভেবে দেখতে বলব।
এ ছাড়া ক্যাম্পাসে বাস রাখার যথাযথ নিয়ন্ত্রিত জায়গা নেই এমন কারণকেও বাস নষ্ট হওয়ার পেছনে দায়ী করে অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাসগুলো ক্যাম্পাসে খোলা জায়গায় থাকে; বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে গাড়িগুলোর জীবনকালও কমে যাচ্ছে। এজন্য গাড়িগুলোর জন্য শেড এবং নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করা খুবই দরকার। প্রশাসন নির্দিষ্ট একটা জায়গা করে দিলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো। আশা করছি প্রশাসন এ বিষয়গুলোতে দৃষ্টি দেবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
মন্তব্য করুন