রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের মনোনয়ন বিতরণের গত রোববার (৩১ আগস্ট) শেষ দিন থাকলেও তা মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ নিয়ে পঞ্চমবার মনোনয়নের তারিখ পরিবর্তন করেছে নির্বাচন কমিশন।
তবে মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেক শিক্ষার্থীই এটাকে দেখছেন নতুন সুযোগ হিসেবে। একই সঙ্গে নবীনদের ভোটাধিকার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছে ছাত্রদল।
গত রোববার মনোনয়ন বিতরণের ষষ্ঠ দিনে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে রাকসু নির্বাচনের মনোনয়ন বিতরণের সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রাকসুর ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
এর আগে, প্রথমে ১৭ আগস্ট মনোনয়ন বিতরণ শুরুর কথা থাকলেও এর সময় পরিবর্তন করে ২১ আগস্ট করা হয়। পরে ২০ আগস্ট রাতে মনোনয়ন বিতরণের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে প্রশাসন। পরবর্তী সময়ে মনোনয়ন বিতরণ শুরু হয় ২৪ আগস্ট। এ ছাড়া ২৬ আগস্ট জরুরি বৈঠকের পর মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করার জন্য ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়।
এরপর ২৭ আগস্ট একই দিনে দুইবার তফসিল পরিবর্তন করা হয়। প্রথমে ১৩ দিন পিছিয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর ভোট গ্রহণের ঘোষণা দেওয়া হয়, কিন্তু শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে আবার পরিবর্তন করে ২৫ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করা হয়।
ছয় দিনে মনোয়ন সংগ্রহ ৮৪৮ প্রার্থীর : রাকসুর কেন্দ্রীয় ২৩টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ৩১৮ জন, সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধির ৫টি পদে ৬৯ জন এবং হল সংসদের নির্বাচনে বিভিন্ন পদে ৪৬১ জন মিলে সর্বমোট ৮৪৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ১৩, সাধারণ সম্পাদক পদে ৬, সহকারী সাধারণ সম্পাদক পদে ৮ জনসহ নির্বাহী সদস্যের ৪ টি পদে সর্বোচ্চ ৪০ জন মনোনয়ন তুলেছেন। হল সংসদে ১৭টি হলের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৬ জন মতিহার হলে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।
এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ও শিক্ষার্থীদের প্যানেল থেকে মনোনয়ন নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ছাত্রদল ২৬ জন, ছাত্রশিবির ২১ জন, গণ-ছাত্রজোট ২৩ জন, আফরিন জাহান ২৩ জন, সচেতন শিক্ষার্থী পরিষদ ১৫ জন, আধিপত্যবাদবিরোধী ঐক্য ২১ জন, অপরাজেয় ৭১ জাগ্রত ১৩ জন, তৌহিদুল ইসলাম ৭ জন, নাজমুস সাকিব ৬ জন, পদ উল্লেখ ব্যতীত ৯ জনসহ মোট ১৬৩ প্রার্থী প্যানেল থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ছাত্রদলের বিক্ষোভ : সোমবার (০১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত নবীন শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করে রাবি শাখা ছাত্রদল। এ সময় প্রশাসন ভবনের প্রধান ফটক অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগান দেয় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। আড়াইটা পর্যন্ত চলে তাদের এই কর্মসূচি।
রাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘রাকসু কার্যালয়ে আমাদের অবস্থান কর্মসূচিতে হামলাটি ছিল পরিকল্পিত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিবির, বাকসাস ও সমন্বয়ক নামের একটি সংগঠনকে ১৫ লাখ টাকা দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে ১০ নেতাকর্মী হাসপাতালে ভর্তি এবং নারী শিক্ষার্থীরা হেনস্তার শিকার হয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের সব নবীন শিক্ষার্থীকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে— এটি তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। আমরা প্রশাসনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, তাহলে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো কেন শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গেল? আমাদের ন্যায্য দাবি আদায় করেই আমরা নির্বাচনে অংশ নেব।’
ডোপ টেস্টের নমুনা জমা দিয়েছে ৫৭০ জন : বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে তিন দিন শেষে এখন পর্যন্ত ৫৭০ প্রার্থীর স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়েছে। এই স্যাম্পল রাজশাহী মেডিকেল কলেজে (রামেক) পরীক্ষা করা হবে। মনোনয়নের সময় বৃদ্ধি করা হলেও ডোপ টেস্টের সময় বাড়ানো হবে কিনা জানায়নি নির্বাচন কমিশন।
নমুনা জমা দেওয়ার সময় বিজয়-২৪ হলের এজিএস পদপ্রার্থী আব্দুর রহিম বলেন, ‘ডোপ টেস্ট নিশ্চিত করলে মাদকাসক্ত কেউ প্রার্থী হতে পারবে না। আমি মনে করি নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
সার্বিক বিষয়ে রাকসুর ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, গতকালের কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে সোমবার (০১ সেপ্টেম্বর) ও মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত রাকসু নির্বাচনের ফরম বিতরণের সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে নির্ধারিত তপশিল অনুযায়ী অন্য সব কার্যক্রম চলমান থাকবে।
মন্তব্য করুন