রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈম হোসেন। জন্ম থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও থেমে যান তিনি। ক্লাসরুম থেকে শুরু করে সংগঠন— সবখানেই দায়িত্বশীলভাবে ছিলেন উপস্থিত। এবার সেই নাঈম দাঁড়ালেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সহসম্পাদক পদে।
এ পদে মোট ১৮ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আলোচনায় সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে এক নাম- নাঈম হোসেন। কারণ তিনি শুধু একজন প্রার্থী নন, তিনি সাহস, আত্মবিশ্বাস আর ইতিবাচক বার্তার প্রতীক।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই নাঈম যুক্ত আছেন বিভিন্ন সামাজিক ও সাংগঠনিক কাজে। ক্যাম্পাসে বৃক্ষরোপণ, পরিবেশ-সংরক্ষণমূলক কার্যক্রম কিংবা অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো— সবকিছুর সঙ্গেই তার গভীর সম্পৃক্ততা। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাকে থামাতে পারেনি; বরং এগিয়ে চলার শক্তি দিয়েছে।
নিজের প্রার্থিতা প্রসঙ্গে নাঈম হোসেন বলেন, আমি সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে থাকতে চাই। ক্যাম্পাসের পরিবেশ সংরক্ষণকে নিজের মূল দায়িত্ব হিসেবে দেখব। সবুজায়ন, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানির অপচয় রোধ ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে চাই। একই সঙ্গে সমাজকল্যাণমূলক কাজেও আন্তরিক থাকব। বিশেষ করে প্রতিবন্ধী ও অসচ্ছল শিক্ষার্থী এবং যেসব শিক্ষার্থী হঠাৎ সমস্যায় পড়ে— তাদের পাশে দাঁড়ানোই হবে আমার অঙ্গীকার।
তিনি আরও বলেন, আমি চাই রাকসু নির্বাচন হোক সম্পূর্ণ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে। নির্বাচনের সময় যেন কোনো বিশৃঙ্খলা বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেদিকে প্রশাসনের কঠোর নজর থাকা জরুরি।
শিক্ষার্থীরা জানান, নাঈম হোসেনের প্রার্থিতা রাকসু নির্বাচনে এক ভিন্ন বার্তা নিয়ে এসেছে। তাদের ভাষায়, নাঈম দেখিয়ে দিয়েছেন, শারীরিক সীমাবদ্ধতা কারও স্বপ্নের পথে দেয়াল নয়। নেতৃত্বের যোগ্যতা আসে মন থেকে, ইচ্ছাশক্তি থেকেই জন্ম নেয় দায়িত্ববোধ।
ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তানজিলা হক বলেন, নাঈম সবসময় শিক্ষার্থীদের জন্য সবসময় আন্তরিক। এছাড়া আমাদের সঙ্গেও তার ব্যবহার খুবই ভালো। আমরা চাই সে নির্বাচিত হয়ে আরও বড় পরিসরে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ পাক।
ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. শেরেজ্জামান বলেন, আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈম হোসেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে ইতিবাচক কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছে। রাকসুতে তার প্রার্থিতা আমাদের বিভাগের জন্য গর্বের বিষয়। আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমে তার অবদান নির্বাচিত হলে আরও বেশি দৃশ্যমান হবে। নির্বাচনে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ আমি মনে করি নির্বাচনকে প্রাণবন্ত করার পাশাপাশি এক ভিন্ন বার্তা নিয়ে আসবে।
উল্লেখ্য, আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাকসু নির্বাচন। পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সহ-সম্পাদকসহ মোট ২৩টি পদে শিক্ষার্থীরা বেছে নেবেন তাদের প্রতিনিধি। সেই তালিকায় নাঈমের নাম যেন হয়ে উঠেছে আলাদা— প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং প্রেরণা।
মন্তব্য করুন