অনেকেই চান দ্রুত ফল— এক সপ্তাহে ৫ কেজি ! ইন্টারনেটেও এমন প্রতিশ্রুতির অভাব নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো— এত তাড়াতাড়ি ওজন কমানো কি আদৌ নিরাপদ?
চটজলদি ফলের লোভে শরীরের বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে, যা অনেক সময় টের পাওয়া যায় দেরিতে। তাই বাস্তবতা বুঝে, সুস্থভাবে ওজন কমানোই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
এ বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের ওজন ও স্থূলতা বিশেষজ্ঞ ডা. পেমিন্ডা ক্যাবানদুগামা।
ডা. ক্যাবানদুগামা বলছেন :
- প্রতি সপ্তাহে ১ পাউন্ড (প্রায় ০.৪৫ কেজি) কমানো সবচেয়ে নিরাপদ ও টেকসই।
- এভাবে মাসে সর্বোচ্চ ৮ পাউন্ড (প্রায় ৩.৬ কেজি) পর্যন্ত কমানো যেতে পারে। এর বেশি নয়।
- আর ৩ মাসে মোট শরীরের ওজনের ৫ শতাংশ কমানো হলে সেটাকে স্বাস্থ্যকর লক্ষ্য ধরা যায়।
খুব দ্রুত ওজন কমানোর চেষ্টায় শরীর শুধু চর্বি নয়, পেশি আর হাড় থেকেও ওজন হারাতে থাকে। এতে শরীর দুর্বল হয় এবং দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা :
- পানিশূন্যতা, মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
- পেশির ক্ষয়, ব্যথা বা খিঁচুনি
- হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া, দাঁত নরম হওয়া
- নারীদের ক্ষেত্রে ঋতুচক্রে সমস্যা
- হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া
- অপুষ্টি, এমনকি মারাত্মক ক্ষেত্রে মৃত্যুও
ডা. ক্যাবানদুগামা নিরাপদ ও কার্যকর ওজন কমানোর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছেন :
১. ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ
সাধারণভাবে নারীদের জন্য দিনে ১৫০০ ক্যালোরি, পুরুষদের জন্য ১৮০০ ক্যালোরি উপযুক্ত। তবে বয়স, উচ্চতা ও দৈহিক পরিশ্রম অনুযায়ী এটা ভিন্ন হতে পারে।
২. নিয়মিত ব্যায়াম
সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট শারীরিক অনুশীলন করুন। এর মধ্যে অন্তত ২ দিন রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিং (যেমন : ওজন তোলা, স্কোয়াট) থাকা উচিত।
৩. সঠিক গাইডলাইন
শুধু ডায়েট বা জিম করলেই হয় না। ভালো ফলের জন্য পুষ্টিবিদ ও ফিটনেস বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিন।
৪. পুষ্টিকর খাবার বেছে নিন
প্রোটিন : মাছ, মুরগি, ডাল, টোফু- পেশি ঠিক রাখে
ভালো ফ্যাট : অ্যাভোকাডো, বাদাম, অলিভ অয়েল- পেট ভরায়, শরীর পুষ্টি শোষণ করে
কার্বোহাইড্রেট : মিষ্টিআলু, ব্রাউন রাইস, কোয়িনোয়া- শক্তি দেয়
সবজি/ফল : পালংশাক, বেরি, বেল পিপার- প্রদাহ কমায়, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
বয়স বাড়লে বিপাক হ্রাস পায়
হরমোন বা জিনগত সমস্যা
থাইরয়েড, PCOS ইত্যাদি শারীরিক সমস্যা
ঘুমের ঘাটতি বা অতিরিক্ত স্ট্রেস
ইমোশনাল ইটিং (চিন্তা বা মন খারাপে বেশি খাওয়া)
ডা. ক্যাবানদুগামা জানাচ্ছেন :
‘শুধু ডায়েট করলে দুই বছর পর তা ধরে রাখা খুব কঠিন। কিন্তু ডায়েটের সঙ্গে ব্যায়াম থাকলে, ওজন কমানো অনেক বেশি কার্যকর ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।’
তাই কেবল কম ক্যালোরি খাওয়ার দিকে নয়, নিজের জীবনযাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মতো স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো না করে ধীরে, সচেতনভাবে এগোন।
শরীরের প্রয়োজন বুঝে পুষ্টিকর খাবার খান।
একা একা না করে বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিন।
ওজন কমানো মানে শুধু দেখতে ভালো হওয়া নয়— বরং সুস্থ, ফিট ও আত্মবিশ্বাসী থাকা।
বুদ্ধিমানের কাজ হলো শরীরের কথা শুনে পরিকল্পনা করা— সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রেন্ড দেখে নয়। সুস্থ থাকুন, ধৈর্য ধরুন আর নিজেকে সময় দিন।
মন্তব্য করুন