মুজাহিদুল ইসলাম
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:০৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নেপালে শুরু হয়েছে আরেক ‘জুলাই আন্দোলন’?

নেপালে পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভকারীরা। ছবি : সংগৃহীত
নেপালে পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভকারীরা। ছবি : সংগৃহীত

নেপালের রাজপথে যেন আবারও ফিরে আসছে রাজনৈতিক অস্থিরতার দিনগুলো। রাজধানী কাঠমান্ডুতে জেন-জি প্রজন্মের নেতৃত্বে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এখন ভয়াবহ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছে এবং কাঠমুন্ডুতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। নেপালের উদ্ভুত পরিস্থিতি নতুন এক প্রশ্ন উত্থাপন করেছে—এ কি আরেক ‘জুলাই আন্দোলনের’ সূচনা?

দেশটির সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহকে অনেকেই বাংলাদেশের ‘জুলাই আন্দোলনের’ সঙ্গে তুলনা করছেন। শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্র, গুম, খুন, দুর্নীতিতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে মানুষ। শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে ভেঙে পড়ে সেই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা। নেপালের পরিস্থিতিও যেন সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে।

সোশ্যাল মিডিয়া থেকে রাস্তায়

বিক্ষোভের সূত্রপাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কেন্দ্র করে। নেপাল সরকার সম্প্রতি নিবন্ধনহীন ২৬টি প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করার ঘোষণা দেয়। তরুণ প্রজন্ম মনে করে, এই সিদ্ধান্ত তাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দীর্ঘদিনের অভিযোগ—সরকারি দুর্নীতি, অনিয়ম আর প্রভাবশালী পরিবারগুলোর আধিপত্য।

ফলে অনলাইনে শুরু হয় প্রবল প্রতিবাদ। ‘নেপো কিড’ ও ‘নেপো বেবিস’ নামের হ্যাশট্যাগগুলো মুহূর্তেই তরুণ সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জমে ওঠা এই ক্ষোভ অচিরেই রাজপথে নেমে আসে। সোমবার সকাল থেকেই হাজার হাজার তরুণ রাজধানীর মৈতিঘর এলাকায় সমবেত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।

পার্লামেন্টে ঢুকে পড়ল জনতা

বিক্ষোভ যতই দীর্ঘ হতে থাকে, পরিস্থিতি ততই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। নিরাপত্তা বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীরা সরাসরি ঢুকে পড়েন পার্লামেন্ট ভবনে। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি, টিয়ার গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে। সংঘর্ষে অন্তত ১৪ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হন।

অবস্থা সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত সেনা মোতায়েন করা হয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারি করে সরকার। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের আশপাশেও জমায়েত নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও বিক্ষোভকারীদের থামানো যায়নি।

সংগঠিত প্রতিবাদের চিত্র

এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে ‘হামি নেপাল’ নামের একটি সংগঠন। প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে তারা বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছিল। তবে পরে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সংগঠনের চেয়ারম্যান সুধান গুরুং বলেন, ‘আমরা দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। আজ দেশজুড়ে তরুণরা রাস্তায় নেমে এসেছে।’

আয়োজকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আগেভাগেই বিক্ষোভের রুট ও নিরাপত্তা নির্দেশনা জানিয়ে দিয়েছিলেন। এমনকি প্রতীকী বার্তা দিতে শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম পরে বই হাতে বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়।

আরেক ‘জুলাই আন্দোলন’?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জেন-জি প্রজন্মের নেতৃত্বে এই আন্দোলন নেপালের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। ২০০৬ সালের রাজতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনের মতোই এবারও জনতার মূল দাবি—মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন এবং স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। এছাড়াও বাংলাদেশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে এই আন্দোলনের চরিত্রগত মিল রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, সরকার যদি এখনো জনগণের দাবি উপেক্ষা করে কেবল দমননীতির পথে হাঁটে, তাহলে এই আন্দোলন দ্রুত আরও বড় আকার নিতে পারে। তখন তা আর কেবল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের প্রতিবাদে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ আন্দোলনে রূপ নেবে।

অচল রাজধানী, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

বর্তমানে কাঠমান্ডুর প্রধান সড়কগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি অফিসে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হলেও বিক্ষোভকারীরা সরে দাঁড়াতে নারাজ।

এখন প্রশ্ন উঠছে—নেপালে কি সত্যিই আরেকটি ‘জুলাই আন্দোলন’ শুরু হলো? নাকি এটি কেবল সাময়িক ক্ষোভ, যা দমনমূলক ব্যবস্থায় থেমে যাবে? উত্তর সময়ই দেবে। তবে স্পষ্ট হয়ে গেছে, নতুন প্রজন্ম তাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে শুরু করেছে। সেই কণ্ঠস্বর উপেক্ষা করা নেপালের রাজনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

এমনকি অনেকে বলছেন, বিক্ষোভ দমনে জোর প্রয়োগ ও ছাত্রদের লাশের মিছিল দীর্ঘ হলে কেপি শর্মা অলির পরিণতি হাসিনার মতো হওয়াও অসম্ভব নয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘ডাকসুর মাধ্যমে আগামী রাজনীতির যাত্রাপথ স্পষ্ট হবে’

কালবেলার বরিশাল ব্যুরো প্রধান আরিফিন মারা গেছেন

ডাকসুর ভোট গুনতে ১৪ মেশিন, ঘণ্টায় গোনা যাবে কত?

ভোটের রাতে আরেকজনকে সমর্থন জানিয়ে সরে দাঁড়ালেন এক প্রার্থী

পুলিশ ক্যাম্পে হামলায় জড়িত তিনজনসহ ৯ ডাকাত গ্রেপ্তার

এবারের ডাকসু নিয়ে কেন এত আলোচনা, কারণ জানালেন বিশ্লেষকরা

ডাকসু নির্বাচনে কারা জিতবেন, সমীকরণ দিলেন তাজনুভা

বাংলাদেশ-ইন্দোনেশিয়া পেরিয়ে লঙ্কার আগুন পৌঁছল নেপালে

এইচএসসির উত্তরপত্র নিয়ে কড়াকড়ি বিজ্ঞপ্তি

অরিজিতের কনসার্টে নিভে গেল আলো, ক্ষোভ ভক্তদের

১০

রেমিট্যান্সে সুবাতাস অব্যাহত, সাত দিনে এলো ৯৩৭৮ কোটি টাকা

১১

মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি

১২

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার নামে ১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ, মামলা

১৩

হাটহাজারী থানার নতুন ওসি মঞ্জুর কাদের ভুঁইয়া

১৪

ফরিদপুর নয়, ঢাকা বিভাগেই থাকতে চায় শরীয়তপুরবাসী

১৫

ডামুড্যায় ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ আইনে প্রথম মামলার রায় বাস্তবায়ন

১৬

ডাকসুর ব্যালট ৫ পৃষ্ঠার, শিক্ষার্থীরা ভোট দেবেন যেভাবে

১৭

১১ হাজার কিলোমিটার দূর থেকে ক্যানসার অপারেশন, চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত

১৮

যুবককে গলাকেটে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মা-ছেলে গ্রেপ্তার

১৯

তৃতীয় দেশে মার্কিন ভিসার আবেদন নিয়ে নতুন নির্দেশনা

২০
X