যবিপ্রবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৩, ০৩:২৩ এএম
অনলাইন সংস্করণ

যবিপ্রবি ছাত্রলীগের ১২ দফা দাবি, ক্লাস পরীক্ষা বন্ধের ডাক

আন্দোলনরত শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা। ছবি: কালবেলা
আন্দোলনরত শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা। ছবি: কালবেলা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিকৃতি মামলায় চূড়ান্ত অভিযুক্তদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতিসহ ১২ দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে বিক্ষোভ করেছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) শাখা ছাত্রলীগ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান দুই ফটক, আবাসিক হলের ফটক ও বাস বন্ধ করে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ক্যাম্পাসের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রাখেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে যবিপ্রবি ক্যাম্পাসে।

শনিবার (১৭ জুন) দুপুরে আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় উপাচার্যকে নিজ কার্যালয়ে ৫ ঘণ্টা আটকে রাখেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে উপাচার্যের কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সরবরাহও বন্ধ করে দেন বিক্ষোভকারীরা।

পরে যবিপ্রবি উপাচার্যের সঙ্গে তুমুল বাকবিতণ্ডা হয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সালসহ অনুসারীদের। উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা ও বাকবিতণ্ডায় দাবীর সুরাহা না হওয়ায় রবিবার (১৮ জুন) থেকে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা।

শাখা ছাত্রলীগের ১২ দফা দাবিগুলো- শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরীক্ষার সুবিধার্থে অনতিবিলম্বে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের লিফট লাগানো, বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়ালে ও ডেস্ক ক্যালেন্ডারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি বিকৃত মামলায় অভিযুক্তদের চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা, সুষ্ঠু তদন্ত ব্যতীত কোনো শিক্ষার্থীর ওপর শাস্তি আরোপ বা সরাসরি বহিষ্কার না করা ও বহিষ্কৃত সব শিক্ষার্থী ওপর আরোপিত বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার দাবি জানানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব উন্নয়নমূলক কাজে দুর্নীতি রিপোর্ট এসেছে সেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ সেই কমিটিতে থাকতে পারবেন না এবং দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ও দুর্নীতি দমন কমিশনে তদন্তধীন সব শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সাময়িক বহিষ্কার এবং তদন্ত শেষ না হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ নিষেধ করার দাবিও জানান তারা। ফায়ারের কাজ দ্রুত শেষ করা এবং সেই কাজে আর্থিক লেনদেনের দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখার দাবি জানান তারা।

এছাড়া সেমিস্টার ফি কমানো, প্রথমবার রিটেক (অকৃতকার্য) ফি মওকুফ এবং দ্বিতীয় রিটেক (অকৃতকার্য) ফি প্রতি ক্রেডিট বাবদ সর্বোচ্চ ২৫ টাকা নির্ধারণ, বিভাগ উন্নয়নের নামে অবৈধ টাকা নেওয়া বন্ধ, শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে কিউআরকোড সম্পর্কিত খাতা প্রদান ও ইমপ্রুভমেন্ট সিস্টেম চালু করার দাবি জানানো হয়।

উপাচার্যের এয়ারমার্ক বাংলো ভাঙার অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীদের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটূক্তিকারীদের বহিষ্কারের দাবিও জানান তারা।

যবিপ্রবি উপাচার্য ড. মো. আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, দুপুর ১২ টার সময় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সোহেল রানা রেজিস্ট্রার দপ্তরের সামনে তাদের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে অবস্থান নেন। তখন আমি কথা বলতে গেলে ছাত্রলীগের সভাপতির সঙ্গে আমার উচ্চবাচ্য হয়। এ ঘটনার ১০-১৫ মিনিট পর তাদের আরও বেশ কিছু কর্মীদের নিয়ে ১২ দফা দাবীতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয় ও আমাকে আমার কার্যালয়ে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে এবং এক পর্যায়ে আমার কার্যালয়ের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ছাত্রলীগের কারণে রেজিস্ট্রার দপ্তর, পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও পূর্ত দপ্তর, প্রকৌশল দপ্তর, হিসাব দপ্তর সহ বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরের কাজ আটকে রয়েছে। তাদের কারণে দাপ্তরিক কাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায় না। এর কারণ কি হতে পারে তা আমার থেকে আপনারাই ভালো বুঝবেন।

ছাত্রলীগের ১২ দফা দাবী সম্পর্কে ড. আনোয়ার বলেন, সব অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি আমাকে দ্বিতীয় মেয়াদে যবিপ্রবিতে উপাচার্য হিসাবে নিযুক্ত করেছেন এবং গবেষণা ও কাজের সম্মাননা স্বরূপ একুশে পদকেও ভূষিত করেন। এরপরও যদি তারা আমাকে অসম্মান করে তবে তা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সরকারকেই অবমাননা করার শামিল। অতি দ্রুত লিফটগুলো কার্যকর করার পদক্ষেপ নিচ্ছি। দুদকের তদন্ত কমিটি গঠন করা সাপেক্ষে আমরা কাউকে বহিষ্কার করতে পারি না তবে অপরাধ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নিতে পারবো। ফায়ার সিকিউরিটির কাজ জুনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবার কথা কিন্তু শাখা ছাত্রলীগ আমাকে এ কাজের বিষয়ে একাধিকবার বাধাগ্রস্ত করেছে। আগামী দু মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ হয়ে যাবে।

সেমিস্টার ফিস ও রিটেকের ফি নিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে যেহেতু এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের বিষয়। এক্ষেত্রে আমাদেরকে ইউজিসির আয়-ব্যয় দেখাতে হবে। কিউআর কোড সম্বলিত খাতা ও ইমপ্রুভমেন্ট সিস্টেমের বিষয় একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৬ মাস জলাবদ্ধ, যাতায়াতের ভরসা বাঁশের সাঁকো

শীতে রক্তচাপ নিয়ে সতর্ক থাকা কেন জরুরি জানালেন চিকিৎসক

সরকার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায়নি : বাণিজ্য উপদেষ্টা

ফরিদপুর বিভাগে শরীয়তপুরকে অন্তর্ভুক্ত না করার দাবিতে পদ্মা সেতু অবরোধ

হজযাত্রীদের জন্য যে চার টিকা বাধ্যতামূলক করল সৌদি

নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও পদ্মার চরে জমজমাট ইলিশের বাজার

রাজশাহী ও বগুড়ায় বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ওয়ানডে সিরিজ

যেসব সাধারণ কারণে পুরুষদের পেলভিক ব্যথা হয়

হাসিনাকে ফেরাতে রেড নোটিশ জারির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে : দুদক চেয়ারম্যান

জামায়াত কর্মী মহিবুর হত্যা মামলায় ১৫ জনের যাবজ্জীবন

১০

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের সেনা আইনে বিচার দাবি

১১

চুরির অভিযোগে আটকদের আনতে গিয়ে পুলিশের গাড়ির চাবি চুরি

১২

১৮ অক্টোবরের মধ্যে এনসিপি প্রতীক বাছাই না করলে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি

১৩

আইনের বেড়াজাল পেরিয়ে কারাগারে বিয়ে

১৪

স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়ার সময় দুর্বৃত্তের হামলা, যুবদল নেতা নিহত

১৫

মোবাইলে ব্রাজিল-জাপান ম্যাচ দেখবেন যেভাবে

১৬

চাকসুর ভোট গণনা হবে যেভাবে

১৭

সড়কে বেপরোয়া অটোরিকশা, অসহায় প্রশাসন

১৮

পুলিশের ধাওয়ায় নদীতে ঝাঁপ, ৩ দিন পর লাশ উদ্ধার

১৯

আগামী নির্বাচনে দুর্নীতিবাজদের মনোনয়ন না দেওয়ার অনুরোধ দুদক চেয়ারম্যানের

২০
X