রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ০২:২৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

রাকসু নির্বাচন : ভিপি পদে হাড্ডাহাড্ডি, জিএসে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস

রাকসু নির্বাচনের শেষ দিনে প্রচারণায় ব্যস্ত ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী। ছবি : কালবেলা
রাকসু নির্বাচনের শেষ দিনে প্রচারণায় ব্যস্ত ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী। ছবি : কালবেলা

জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন বাস্তবতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। সর্বশেষ ১৯৯০ সালের নির্বাচনে প্যানেল হিসেবে ছাত্রদলের একক আধিপত্য দেখা গেলেও এবারের নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এককভাবে কাউকে এগিয়ে রাখার সুযোগ থাকছে কম। ভোটকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা গেছে উৎসবের আমেজ।

এবারের রাকসু ভোটে আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ মিলিয়ে অন্তত ১১টি প্যানেল অংশ নিচ্ছে। এর বাইরে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন প্রার্থীদের আরেকটি অংশ। নির্বাচনে এবার অনেকটা ভিন্ন পরিস্থিতি। কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছে না শীর্ষ তিন পদে কে জয়ী হবেন। তবে ধারণা করা হচ্ছে, রাকসুর শীর্ষ তিন পদসহ অধিকাংশ পদে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ।

তবে সবার নজর ভিপি ও জিএস পদের দিকে। সহসভাপতি (ভিপি) পদে ছাত্রশিবির মনোনীত মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ও ছাত্রদল সমর্থিত শেখ নূর উদ্দীন আবীরের মধ্যে মূল লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাম সমর্থিত প্যানেলের ফুয়াদ রাতুল, ছাত্র অধিকারের মেহেদী মারুফও আছেন আলোচনায়। আর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্রশিবির মনোনীত ফাহিম রেজার সঙ্গে মূল লড়াই হতে পারে সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দীন আম্মারের। তবে ছাত্রদলের নাফিউল ইসলাম জীবনও আলোচনায় রয়েছেন। সেক্ষেত্রে এ পদে লড়াই হতে পারে ত্রিমুখী। এজিএস পদে ছাত্রদলের জাহীন বিশ্বাস এষার সঙ্গে শিবিরের সালমান সাব্বির তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাসও পাওয়া যাচ্ছে।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সরেজমিন ক্যাম্পাস ঘুরে রাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

রাবি শিক্ষার্থী নাসিমুল মুহিত ইফাত বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাকসু নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে এরই মধ্যে পুরো ক্যাম্পাস সরগরম হয়ে উঠেছে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের তুলনায় রাজনৈতিক ব্যানারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থীরাই বর্তমানে এগিয়ে আছেন। শিবির সমর্থিত প্যানেল এবং ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল—উভয়েরই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রিজার্ভ ভোট রয়েছে। আমার মতে, তারাই নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছেন।

রাবি শিক্ষার্থী ফারিহা ইসলাম মিম মনে করেন, ভোট হচ্ছে আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। এত বছর পর সেই অধিকার ফিরে পাওয়া আনন্দের। যদিও মূল আলোচনা ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরকে ঘিরে, কিন্তু অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের গুরুত্ব দিচ্ছেন। যারা ছাত্রকল্যাণে সত্যিকার অর্থে কাজ করতে চান, তাদের জয়ী হওয়া উচিত। ব্যক্তিগতভাবে, আমি মনে করি জিএস পদে ত্রিমুখী লড়াই হলেও ছাত্রদলের জীবন একটা বড় চমক দিতে পারেন।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী পাপিয়া আক্তার বলেন বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে নতুনত্ব আছে। তারা রাজনীতির বাইরে থেকে এসে শিক্ষার্থীদের বাস্তব সমস্যা নিয়ে কথা বলছে। আমার মনে হয়, এবার অনেকে দলীয় রাজনীতির চেয়ে বিকল্প নেতৃত্বকে গুরুত্ব দেবে, তাই স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই চমক দেখাতে পারে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সিয়াম বলেন, ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল এবার বেশ গোছানোভাবে প্রচারণা চালিয়েছে। প্রচারে তাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। আমার মনে হয়, তারা এবারও ভালো ফল করতে পারে, বিশেষ করে ভিপি ও এজিএস পদে।

তানভীর রহমান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, রাজনৈতিক প্যানেলের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও এবার দারুণ সক্রিয়। অনেক শিক্ষার্থীই মনে করছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দলীয় প্রভাবের বাইরে থেকে শিক্ষার্থীদের বাস্তব সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করতে পারে। তাই তাদের প্রতিও একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

মেহজাবিন সুলতানা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, শিবির সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট বেশ সংগঠিতভাবে প্রচার চালিয়েছে। প্রচারণায় মেয়েদের হলগুলোতেও তাদের সরব উপস্থিতি দেখা গিয়েছে। প্রচারণায় তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা তাদের সমস্যার কথা শুনছেন, তাই অনেকেই তাদের ভোটে এগিয়ে রাখছেন।

রাবি শিক্ষার্থী শামীম আহমেদ বলেন, রাকসু নির্বাচন ক্যাম্পাসে নতুন উদ্দীপনা এনেছে। এটা সত্য যে, ছাত্রদল ও শিবিরের মধ্যে মূল লড়াই হবে। তবে এটা ভুলে গেলে চলবে না যে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে দুই দলের কোনো সক্রিয়তা ছিল না। আমার মতে, যারা দীর্ঘ বিরতির পর ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি কার্যকর প্রতিশ্রুতি দেবে, তারাই শেষ হাসি হাসবে।

প্রসঙ্গত, রাকসু নির্বাচনে ২৩টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৪৭ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ভিপি পদে ১৮, জিএস পদে ১৩ এবং এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৬ জন। ছাত্রদল ও শিবির সমর্থিতসহ মোট ১১টি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ৫টি পদে ৫৮ জন প্রার্থী এবং হল সংসদ নির্বাচনের ১৫টি পদের বিপরীতে ১৭টি হলে মোট ৫৯৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবার রাকসুতে নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ এবং পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান আজহারির

চাকসু নির্বাচন  / চারুকলার হোস্টেলের ফল ঘোষণা

বাসে ধর্ষণচেষ্টা, চালকসহ ৫ নামে মামলা

সাতক্ষীরায় জামায়াতের দুই কিলোমিটারব্যাপী মানববন্ধন

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কে আগে ঝগড়া শুরু করেন? যা বলছে গবেষণা

গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ স্বামীর বিরুদ্ধে

স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

অর্থপাচার মামলা / মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিমের জামিন নামঞ্জুর 

রাকসু নির্বাচন পর্যবেক্ষণে থাকবে ১০ সদস্যের কমিটি

উচ্চ আদালতকেও সংস্কার করতে হবে : আসিফ নজরুল

১০

যবিপ্রবির রিজেন্ট বোর্ড সভা বানচাল চেষ্টার অভিযোগ

১১

এক ও দুই টাকার কয়েন নিয়ে নতুন নির্দেশনা

১২

নির্বাচন কমিশনের ‘দায়িত্বহীনতার’ জবাব দেওয়া উচিত : ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী

১৩

রিপনের মা-বাবাকে নিয়ে যা বললেন অভিনেত্রী চমক

১৪

বিএনপিতে যোগ দিলেন জামায়াতের ৩০ নেতাকর্মী

১৫

মানুষের জীবনমান উন্নয়নের সব কিছুই ৩১ দফায় রয়েছে : কফিল উদ্দিন

১৬

খুব দ্রুতই পাস হচ্ছে জকসু আইন 

১৭

দেশে দক্ষমানব সম্পদ উন্নয়নে তাকামোল প্রকল্পের সফলতা

১৮

স্থায়ী কমিটিতে যেসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিল বিএনপি

১৯

ভেজাল কয়েকশ বস্তা টিএসপি সার ধ্বংস

২০
X