খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নতুন কমিটির সভাপতি রুদ্রনীল সিংহের একটি কথোপকথনের রেকর্ড ছড়িয়ে পড়েছে। তবে তিনি ওই রেকর্ডকে ‘গায়েবি’ বলে দাবি করেছেন।
১৩ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ওই কথোপকথনে স্থানীয় রাজনীতি, কুয়েট প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, কুয়েটে ছাত্রলীগের প্রভাবসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে।
কথোপকথনে রুদ্রনীলের কণ্ঠসদৃশ ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘কমিটি হইলে এই মাসে হবে, না হলে সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহে হবে। কেন্দ্রই করে দেবে, সম্মেলন-টম্মেলন কিচ্ছু হবে না। সবাই যে যার মতো দৌড়াচ্ছে।’ এরপর তিনি বলেন, ‘চাচি ইন্ডিয়া ছিল, দেশে ফিরেছে। চাচি দুজনের নাম দিয়েছে। চাচিরে তো চেনেন, সে একবার নাম দিলে (কেন্দ্রীয় কমিটি) আর বদলায় না।’
অপর প্রান্ত থেকে তখন বলতে শোনা যায়, ‘নাম তো আপনার আর নিবিড় (বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এ কে এম নিবিড় রেজা) ভাইয়ের দিয়েছে।’ এরপর ছাত্রলীগ সভাপতির কণ্ঠসদৃশ ওই ব্যক্তি বলেন, ‘এখন আপাতত ৫০ হাজার টাকা দেন। আর যেদিন কমিটি সাইন হবে, তার এক–দুই দিন আগে বড় একটা অ্যামাউন্টের টাকা লাগবে। ধরেন আমার কাছে কিছু আছে। আরও কিছু যদি লাগে, সেডা আপনারে বললাম। চেক দিল, আপনি দিয়ে দিলেন।’
অপর প্রান্তের ব্যক্তি তখন বলেন, ‘আপনার দিক দিয়ে কি ক্লিয়ার আছে?’ উত্তরে রুদ্রনীলের কণ্ঠসদৃশ ব্যক্তি বলেন, ‘আমি অতি আত্মবিশ্বাসী হব না, তবে যতটুকু দরকার।’ কত টাকা লাগতে পারে এমন প্রশ্নে রুদ্রনীলের কণ্ঠসদৃশ ব্যক্তি বলেন, ‘ভাই, যদি এক কোটি টাকা লাগে, আমি এক কোটি টাকা দেব। কমিটি আমার লাগবে। যা লাগবে তা–ই দেব, তবে কমিটি লাগবে।’ টাকার পরিমাণ শুনে ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি অবাক হলে তিনি বলেন, ‘এটা কথার কথা।’
কুয়েট ছাত্রলীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করা শর্তে কালবেলাকে বলেন, এটা সদ্য সভাপতি হওয়া রুদ্রনীল সিংহ শুভ। আর অপর প্রান্তের ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারী যিনি সরকারি দল ঘনিষ্ট হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুপরিচিত। ১৩ মিনিটের বেশি সময় চলা এই অডিও কল রেকর্ডে সব কমিটি ও কুয়েটের বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে।
এ বিষয়ে নতুন সভাপতি রুদ্রনীল সিংহ শুভ বলেন, ‘এই রেকর্ডটি পুরো গায়েবি। টেম্পারিং করে তৈরি করা। আমিও শুনেছি, ভয়েস কেটে কেটে কয়েকটা ভয়েস অ্যাড করে তৈরি করা। ওইটা আমার না। যেসব অভিযোগ শোনা গেছে, সেগুলো সত্যি নয়।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ফজলুল হক হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মো. সেলিমকে লাঞ্ছিত করা হয় ক্যাম্পাসে। সেখান থেকে বাসায় গিয়ে হৃদরোগে মৃত্যু হয় প্রফেসর সেলিমের। এরপর কুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা ফুসে উঠলে সাময়িকভাবে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হয় কুয়েটে। ক্ষোভের মুখে গত বছরের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। হাইকোর্টের রায় নিয়ে আবারও ক্যাম্পাসে নিয়মিত হয়েছেন বহিস্কার হওয়া ছাত্রলীগের নেতারা। এরমধ্যে ২ বছর বহিস্কার এবং আবাসিক হল থেকে আজীবন বহিস্কার সাবেক সহসভাপতি রুদ্র নীল সিংহ শুভ এর বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে সভাপতি পদ বাগিয়ে আনার অভিযোগ উঠল।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রুদ্রনীল সিংহ যন্ত্রকৌশল বিভাগের ২০১৩-১৪ বর্ষের শিক্ষার্থী। একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন নিয়ে তিনি অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে পড়াশোনা করছেন।
মন্তব্য করুন