রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একটি আবাসিক হলে মাঝরাতে উচ্চশব্দে গান বাজাতে নিষেধ করায় এক সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
রোববার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র উপদেষ্টা বরাবর পৃথক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী। এর আগে শনিবার (২৫ নভেম্বর) রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও হল থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল তিন সাংবাদিক সংগঠন। এদিকে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন।
মারধরের শিকার রায়হান ইসলাম দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও হবিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী অন্যজন দর্শন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন।
যাদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তারা হলেন, ওই হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আল আমিন আকাশ, ছাত্রলীগ কর্মী সম্রাট, ইমরান, নাফিজ ও আমির হামজা।
ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে শহীদ হবিবুর রহমান হলের ২১৬ নম্বর কক্ষে উচ্চশব্দে গান-বাজনা হচ্ছিল। তিনতলার ৩১৫ নম্বর কক্ষ থেকে শব্দ সহ্য করতে না পেরে আবাসিক শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মঞ্জুরুল ইসলামকে নিয়ে দ্বিতীয় তলায় আসেন। ২১৬ নম্বর কক্ষে হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি আকাশকে দেখে কোথায় গান বাজে তা জিজ্ঞেস করেন শাহাদত। এ কথা জিজ্ঞেস করলে উভয়ের ওপর চড়াও হন এবং তুই-তুকারি শুরু করেন আকাশ।
ক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। পরে ২১৬ নম্বর কক্ষ থেকে বের হন ছাত্রলীগ কর্মী ইমরান ও সম্রাট। বাগ্বিতণ্ডার এক পর্যায়ে শাহাদাতের কানে সজোরে থাপ্পড় দেন ইমরান। ওই সময়ে পাশের কক্ষের (২১৭ নম্বর) সাংবাদিক রায়হান ইসলাম ঘটনাস্থলে যান এবং উভয়পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করলে তাকেও ধাক্কা দেন ইমরান ও সম্রাট। পরে অন্য সহযোগিদের ডাকেন আকাশ। পরে ২০৮ নম্বর কক্ষের নাজিম ও আমির হামজাসহ কয়েকজন মিলে অতর্কিতভাবে রায়হানকে মারধর করেন। এতে তিনি মাথায় ও চোখে আঘাত পান। এ ঘটনায় নিজেদের নিরাপত্তা ও অভিযুক্তদের শাস্তি দাবি জানান তারা।
তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে অভিযুক্ত আল আমিন আকাশ বলেন, সাংবাদিক রায়হানের সঙ্গে কিছু হয়নি। শাহাদাত ভাই এসে গান বাজানোর জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করেন। বিষয়টি নিয়ে একটু কথা কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কি হয়। এ ছাড়া মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে এ ঘটনায় গণমাধ্যমকর্মী রায়হান ইসলামের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল তিন সাংবাদিক সংগঠন। তারা আজ রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও হল থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানান তারা।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই হলের আবাসিক শিক্ষক গৌতম দত্তকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন।
এ ব্যাপারে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন