নেকাব খুলতে না চাওয়ায় মৌখিক পরীক্ষা না নেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২২ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, নেকাব না খোলার কারণে এক ছাত্রীকে সেমিস্টার ভাইভা বোর্ডে বসতে দেওয়া হয়নি। বিষয়টি অত্যন্ত লজ্জার। এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং বাংলাদেশের সংবিধান ও সার্বজনীন মানবাধিকার বিরোধী। আমরা শিক্ষাগুরুদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, কোন অধিকারে তাকে মৌখিক পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়নি? ওই বিভাগের শিক্ষকরা সরাসরি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। একই সঙ্গে তারা ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হেনেছেন। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
এ সময় তারা পরবর্তীতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে স্মার্ট ডিভাইস বা নারী শিক্ষকের দ্বারা পরিচয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
সমাবেশে শিক্ষার্থীদের হাতে ‘নেকাব আমাকে সম্মানিত করেছে তুমি কেন এর বিরুদ্ধে’, ‘ক্যাম্পাসে ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা চাই’, ‘ক্যাম্পাসে ধর্ম পালনের অধিকার চাই’ ও ‘নেকাব আমার বোনের স্বাধীনতা’সহ বিভিন্ন লেখা সম্বলিত প্লাকার্ড দেখা যায়।
প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে চার দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো- ন্যক্কারজনক ও হীন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, ক্যাম্পাসের সর্বত্র শালীন, রুচিসম্মত পোশাক পরিধানের অবাধ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে নিজ নিজ ধর্মপালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং পরবর্তীতে যেন কেউ কারও ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার মতো দুঃসাহস না করে, এটা নিশ্চিত করা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যক্তির ধর্মীয় বিষয়ে আঘাত করার অধিকার কারও নেই। শিক্ষককে হতে হবে বাবার মতো। তার আচরণ, স্নেহ, ভাষা সবকিছু অভিভাবকের মতো হবে। কিন্তু আমাদের এখানে কিছু বিচ্যুতি ঘটেছে। তবে এ বিষয়গুলো দেখা হবে। আমি উপাচার্যের সঙ্গে এ প্রসঙ্গে কথা বলবো।
উল্লেখ্য, গত ১৩ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সেমিস্টার ফাইনালের মৌখিক পরীক্ষায় নেকাব না খুলতে না চাওয়ায় এক ছাত্রীর ভাইভা নেওয়া হয়নি। পরে নেকাব খোলার শর্তে ভাইভা নিতে চাইলেও ওই ছাত্রী তাতে অসম্মতি জানায়। ফলে এখনো তার পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। এদিকে সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশিত হলে রোববার এ ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ইবি শাখা। মানববন্ধনে বক্তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
মন্তব্য করুন