চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষক সমিতিকে মৌখিক ও চিঠি দিয়ে আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষক সমিতির একাংশের নেতারা এতে সাড়া দেননি। ফলে আইন অনুষদের শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত করার দাবি আদায়ে সমিতির আগ্রহ প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করছে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৫ জানুয়ারি রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ স্বাক্ষরিত এক আমন্ত্রণপত্র শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের কাছে পাঠানো হয়।
এর আগে চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকীকে মোবাইল ফোনে কয়েকদফা কল করে আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানিয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছাত্র উপদেষ্টা আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. আবুল মনসুর কয়েক দফা শিক্ষক সমিতির সঙ্গে দেখা করে আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানান। এ ছাড়া গত ২৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর নুরুল আজিম সিকদারের মাধ্যমে কর্মসূচি চলাকালীন সমিতির নেতাদের আলোচনায় বসার জন্য অনুরোধ করা হয়।
উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার কালবেলাকে বলেন, আমি শিক্ষক সমিতির সভাপতিকে কয়েকদফা কল করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এর আগে ওনাদের কাছে দুজন সিনিয়র প্রফেসর গেছেন। তারপরও ওনারা আসছেন না। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ আমি স্থগিত রেখেছি। দীর্ঘদিন ধরে আইন অনুষদের বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সঙ্গে আলোচনা করে আমি সমাধান করতে চাচ্ছি। সব মিলিয়ে আলোচনায় বসা উচিত।
উপাচার্য বলেন, আন্দোলন করার কিছুই নেই। ২৬ দফা দাবির ২০ দফা আমি অনেক পরিশ্রম করে বাস্তবায়ন করেছি। মাঝেমধ্যে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা দেয়। ট্রেন আটকে দেয়। ভাঙচুর করে বসে। এগুলো তো দীর্ঘদিনের সমস্যা। চাইলেই একদিনে সমাধান সম্ভব নয়। শিক্ষক সমিতির ভাষ্য এসব আমাদের সমাধান করতে হবে। আমার কথা হলো, এসব দাবি সম্মিলিত প্রয়াসে সমাধান করতে হবে। ব্যাপারগুলো রাজনৈতিক।
উপাচার্য আরও বলেন, শিক্ষক সমিতির দাবি ছিল নতুন বাস দিতে হবে। আমি কয়েকদিন আগেই কয়েকটি বাস ও মাইক্রোবাস যুক্ত করেছি। শিক্ষকদের পারিতোষিক ৮০ শতাংশ বৃদ্ধির ব্যবস্থা নিয়েছি। ঢাকার গেস্ট হাউসে নতুন ফ্ল্যাট কিনেছি। মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা করে সিনিয়র শিক্ষকদের টেলিফোন বিল প্রদান করেছি। চট্টগ্রামে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য ক্লাব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি। এ জন্য ফ্ল্যাট অথবা ভবন ক্রয়ে কমিটি করে দিয়েছি। শিক্ষক সমিতি বাংলা ও আইন বিভাগের নিয়োগ স্থগিত চেয়ে আন্দোলন শুরু করে। আমি যখন এগুলোও সমাধান করতে গেলাম, তারা পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন শুরু করল। তাদের উদ্দেশ্য যদি দাবি আদায় হয়, তাহলে আলোচনায় বসে সমাধান করতে হবে। আমার দরজা খোলা। আমি যে কোনো সময় আলোচনায় বসে সব দাবি পূরণের মানসিকতা রাখি। এটা অতীতেও আমি করেছি।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে চলমান এ কর্মসূচিতে ১০-১৫ জন শিক্ষক অংশ নিচ্ছে। এরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন উপাচার্য প্রার্থীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অতীতে বিভিন্ন উপাচার্যের দায়িত্বপালনকালীন সময়ে আন্দোলনরত এ শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর, হলের প্রভোস্ট, আবাসিক শিক্ষক পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
এসব বিষয়ে কথা বলতে চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকীকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন