বাকৃবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৪, ০৯:০৯ পিএম
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৪, ০৯:৩৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বাকৃবিতে হলের সীমানা নিয়ে ছাত্রলীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষ

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষের সময় ক্যাম্পাসের চিত্র। ছবি : কালবেলা
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষের সময় ক্যাম্পাসের চিত্র। ছবি : কালবেলা

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ছাত্রী হলের সীমানা দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনের সর্বাত্মক চেষ্টা সত্ত্বেও দীর্ঘ সময় ধরে চলে ওই সংঘর্ষ। একপর্যায়ে বিভিন্ন হল থেকে স্টাম্প, ব্যাট, সাইকেলের চেন, লাঠি এবং দেশি অস্ত্র হাতে ঘটনাস্থলে জড়ো হতে দেখা যায় তাদের।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া হলের ভেতরে মারামারির সূত্রপাত। পরে তা হলের সামনে বড় আকার ধারণ করে। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসাশনিক ভবনের সামনে এবং পরে আব্দুল জব্বার মোড়ে সংঘর্ষ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে।

এ ঘটনায় ৮ জন আহত হয়েছেন। বাকৃবি হেলথ কেয়ারের ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. মো. সাদিকুল ইসলাম খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আহত একজনের মাথায় সেলাই দেওয়া হয়েছে। আরেকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শহরে পাঠানো হয়েছে। আর বাকি সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া হলের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী। শেখ রোজী জামাল হল ছাত্রলীগের সভাপতির অনুসারী। বেশ কিছুদিন ধরেই দুই হলের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে ভেতরে ভেতরে ঝামেলা চলছিল।

মঙ্গলবার সীমানা নিয়ে সমস্যার সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে হলের প্রভোস্টরা ওই হলের ছাত্রী নেতারা এবং ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ একটি আলোচনা সভা হয়। এর মধ্যেই হলের সীমানায় ইফতারের দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে ওই দুই হলের নেতাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। পরে সেখানে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত হয়।

তাদের মধ্যেও বাগবিতণ্ডা চলতে থাকে। একপর্যায়ে ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের এক নেতা সভাপতি গ্রুপের একজনকে ছাত্রী হলের ভেতরেই মারধর করে। পরে তাদের হলের বাইরে বের করে আনা হয়। এ সময় উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে।

পরে হল থেকে ছাত্ররা এসে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের আরেকজনকে ধরে মারধর করে। তখন দুই গ্রুপেরই বিভিন্ন হল থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রোকেয়া হলের সামনে ভিড় জমায়।

পরে দুই গ্রুপের সদস্যরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি সর্বাত্মক চেষ্টা করতে থাকে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত করে রোকেয়া হলের সামনে থেকে দুই গ্রুপের সদস্যদের সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে আবার প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে।

পরে সভাপতির গ্রুপের সদস্যরা আব্দুল জব্বার মোড়ে অবস্থান নেয় এবং একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতির তৈরি হয়। এই পর্যায়ে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা চলে গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে মোড় নেয়। ইফতারের আগ পর্যন্ত দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় চলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ। তবে ইফতারের পরে আর কোনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোতোয়ালি থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন জানান, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের মতো পরিবেশ তখনো ছিল না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো আজহারুল ইসলাম বলেন, ছাত্রীদের দুই হলের সীমানা সমাধানের চেষ্টা করছিলাম। এর মধ্যে ছাত্রলীগের কয়েকজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আমরা হলের ভেতর থেকে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছিলাম। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সব হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। আমরা কোতোয়ালি থানা পুলিশের সহায়তায় সমস্যা সমাধানে কাজ করছি।

জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি তো একা আইন তৈরি করি না। এ মুহূর্তে তদন্ত কমিটি হবে কি না বলতে পারছি না।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদ বলেন, একটি হল যখন তৈরি করা হয় তখন তার নির্দিষ্ট নকশা থাকে। না থাকলেও সেটি নির্ধারণ করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রশাসন ব্যর্থ হওয়ায় সেটি আমরা সমাধানের চেষ্টা করি। কিন্তু নিজেদের ভুল বোঝাবুঝির কারণে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। পরে অনেক চেষ্টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান বলেন, নেতাকর্মীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

এ বিষয়ে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনাটি শুনেছি। বিষয়টি প্রক্টর এবং ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে নিয়মানুযায়ী পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নড়াইলে সাংবাদিকদের মিলনমেলা

‘তিন মাসের মধ্যে ৬ লেনের কাজ দৃশ্যমান হবে’

শাবিপ্রবির ২৫ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ বাতিলের সিদ্ধান্ত

ওমরজাইয়ের বোলিং তোপে বিপদে বাংলাদেশ

প্রবীণদের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে : টুকু

শুধু বক্তব্যে নয়, বাস্তব কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে বিএনপি মানুষের পাশে রয়েছে : আনোয়ারুজ্জামান

গুম-খুনে জড়িতদের সঙ্গে আপস নেই : আখতার হোসেন

বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান দুলুর

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার

গুম-দুর্নীতি বন্ধে ধানের শীষে ভোট দিন : আশিক

১০

গ্যাস লাইনে বিস্ফোরণ, ভাইয়ের পর চলে গেল বোনও

১১

ইতিহাস গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাল নামিবিয়া

১২

জিয়া পরিবারের ত্যাগ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য : কফিল উদ্দিন

১৩

বিএনপিকে ঘায়েল করতে চতুর্দিক থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে : মির্জা ফখরুল

১৪

‘গুম-খুনের সঙ্গে জড়িতদের বিচার প্রকাশ্য ট্রাইব্যুনালে হতে হবে’

১৫

মার্কস অলরাউন্ডার প্রতিযোগিতায় ব্যাপক সাড়া

১৬

নেইমারকে দলে টানতে মরিয়া ইন্টার মায়ামি

১৭

ডিজিএফআই বিলুপ্তের পরিকল্পনা নেই সরকারের : প্রেস সচিব

১৮

বিএনপির মনোনয়ন বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি : সালাউদ্দিন আহমদ

১৯

ময়মনসিংহ-ঢাকা রুটে বাস চলাচল বন্ধ

২০
X