শনিবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
কুবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৪, ০৬:০৮ পিএম
আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৪, ০৭:৫৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কুবি উপাচার্যের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : কালবেলা
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : কালবেলা

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড এএফএম আবদুল মঈন বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন বলে অভিযোগ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসানের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সোমবার (২৫ মার্চ) উপাচার্য ঢাকার সেগুনবাগিচা রেস্টুরেন্টে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বিভিন্ন মিথ্যাচার করেছেন। তিনি বলেছেন, এক সময় স্থবির হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষক সমিতি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কখনোই স্থবির ছিল না।

বর্তমান উপাচার্য যোগদানের পর থেকে নানা ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি, শিক্ষকদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য, প্রশাসনিক কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি, নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্য, পদোন্নতি ও স্থায়ীকরণে বৈষম্য তৈরি, তথ্য গোপন করে ইনক্রিমেন্ট গ্রহণসহ আর্থিক কেলেঙ্কারির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল ও স্থবির করে রেখেছেন।

অতীতের অন্য উপাচার্যরাই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প এনেছেন। তাদের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত ও অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে অত্যন্ত গতিশীল ছিল। বিশেষ করে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরীর সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প এসেছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ ১৬ বছরের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্য সাবেক উপাচার্য ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রথম সমাবর্তন সফলভাবে সম্পন্ন করেন। একদিনের জন্যও বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অস্থিরতা ছিল না।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বর্তমান উপাচার্য ভর্তি পরীক্ষার টাকা থেকে শিক্ষকদের অ্যাওয়ার্ড ও শিক্ষার্থীদেরকে বৃত্তি প্রদানের নামে অর্থ আত্মসাৎ, গবেষণা খাতের বরাদ্দের তহবিল তছরুপ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কলঙ্কময় অধ্যায় রচনা করেছেন।

নিয়োগের শর্ত শিথিল করে, বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশ অগ্রাহ্য করে এবং নিয়োগ বোর্ড সদস্যদের নোট অব ডিসেন্ট উপেক্ষা করে একাধিক বিভাগে অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে বিভাগগুলো চলছে ধুঁকে ধুঁকে। উপাচার্য দুই বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র সাতজন শিক্ষকের পদ এনেছেন।

একটি কর্মকতা-কর্মচারীর পদও তিনি নতুন করে আনতে পারেননি। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি টাকার উন্নয়ন বরাদ্দও আনতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে সে সকল উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চলছে, সবই আগের উপাচার্যের আমলের।

উপাচার্য সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল, স্থায়ীকরণ কমিটির সিদ্ধান্ত প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করে কার্যবিবরণী মনগড়াভাবে তৈরি করেন। সবমিলিয়ে গত দুই বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দৃশ্যমান কোনো উন্নয়নই করতে পারেননি।

এমনকি তার সময়ে ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে এ দাবিও অমূলক। অতীতেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে। প্রতিনিয়ত তিনি আইন, নিয়ম-নীতি ও বিধি-বিধানের ব্যত্যয় ঘটিয়ে যাচ্ছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

উপাচার্য নিয়োগের প্রজ্ঞাপন নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি। উপাচার্য ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদ থেকে অবসর নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেশন বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র প্রভাষক পদে চাকরি নিয়ে চলে যান। সেখানকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন।

দীর্ঘ ১২ বছর একই পদে চাকরি করার পর পুনরায় চাকরি নবায়ন করতে না পেরে ২০২০ সালে দেশে ফিরে আসেন। ২০২০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে চুক্তিভিত্তিক অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তির আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চুক্তিভিত্তিক কিংবা অবসরপ্রাপ্ত কথাটি উল্লেখ করেননি। ফলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক উপাচার্যের জারিকৃত প্রজ্ঞাপনটি নিয়েও নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

২০১১ সালে অবসর গ্রহণকালীন সময়ে তার বেতন ছিল ৩৪,০০০/- টাকা। প্রজ্ঞাপন অনুসারে সর্বশেষ বেতন স্কেল ৩৪,০০০/- টাকা অথবা ৫৬,৫০০/- টাকা অনুযায়ী তার বেতন নির্ধারিত হওয়ার কথা। কিন্তু তিনি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ৬৮,৫৩০/- টাকা বেতন নির্ধারণ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেতন-ভাতাদি গ্রহণ করছেন এবং পরবর্তীতে দুটি ইনক্রিমেন্ট যুক্ত করে বর্তমানে ৭৪,৪০০/-টাকা বেতন স্কেলে বেতন-ভাতাদি গ্রহণ করছেন।

যা সম্পূর্ণরূপে বেআইনি, অনৈতিক এবং আর্থিক কেলেঙ্কারির শামিল হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তিনি অবৈধ বেতন-ভাতাদি গ্রহণ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ক্ষতি করে যাচ্ছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে নেতারা আরও বলেন, শিক্ষক সমিতি মনে করে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে মিথ্যাচার করেছেন। তার দেওয়া বক্তব্য সম্পূর্ণ বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন। উপাচার্যের এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান সম্মান ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতির খবরে জামায়াত আমিরের উদ্বেগ

খালেদা জিয়াকে নিয়ে হাদির আবেগঘন বার্তা

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খবর নিতে মধ্যরাতে হাসপাতালে আসিফ নজরুল

জামায়াতের সাবেক আমিরের কবর জিয়ারত করলেন আবদুল আউয়াল মিন্টু

খালেদা জিয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টার দোয়া কামনা, তারেক রহমানের কৃতজ্ঞতা

নির্বাচিত হলে সব চাঁদাবাজি ও অনিয়ম দূর করব : আবদুল আউয়াল মিন্টু

আমি জনগণের শাসক নয়, সেবক হতে চাই : খন্দকার আবু আশফাক

১৯ দেশের অভিবাসীদের গ্রিন কার্ড আবার যাচাই করবে যুক্তরাষ্ট্র

মাদক চোরাচালান চক্রের মূলহোতাসহ ২ সহযোগী গ্রেপ্তার

বিএনপিতে কোনো ভেদাভেদ নেই : মিনু

১০

গুগলকে কনটেন্ট সরাতে অনুরোধের সংখ্যা নিয়ে সরকারের ব্যাখ্যা

১১

অগ্রগতি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের রাজনীতি করে বিএনপি : শিমুল বিশ্বাস

১২

বগুড়ায় খালেদা জিয়ার নির্বাচন পরিচালনায় ১১ সদস্যের কমিটি

১৩

নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশে কোনো সংস্কারই বাস্তবায়ন সম্ভব নয় : ইশরাক 

১৪

আ.লীগ হিন্দু সম্প্রদায়ের আবেগ নিয়ে রাজনীতি করেছে : আমান

১৫

তারেক রহমানের নেতৃত্বে হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে : নজরুল ইসলাম

১৬

আন্দোলনরত ৮ দলের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত

১৭

নারীসহ দুজনকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও প্রচার, চাঁদা দাবি

১৮

পুলিশকে কামড়ে পালানো সেই ছাত্রদল নেতা বহিষ্কার

১৯

ভূমিকম্পে ঢাকায় কোন এলাকা নিরাপদ, ‘ব্লাইন্ড ফল্ট’ কোথায়

২০
X