কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৪, ১১:৩৪ পিএম
আপডেট : ০৬ জুন ২০২৪, ১২:২২ এএম
অনলাইন সংস্করণ

সংকট নিরসনের দাবি করায় ৫ শিক্ষার্থীকে শোকজ

কবি নজরুল সরকারি কলেজ ফটক। ইনসেটে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমেনা বেগম। ছবি : সংগৃহীত
কবি নজরুল সরকারি কলেজ ফটক। ইনসেটে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমেনা বেগম। ছবি : সংগৃহীত

নানা সংকট ও অবকাঠামো সংকট দূরীকরণে বারবার অধ্যক্ষের কাছে গিয়ে সমাধান পাননি কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরই প্রেক্ষিতে রোববার (২ জুন) ওই কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী কলেজের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করেন। ওই সময় একাধিক শিক্ষক অধ্যক্ষের আদেশে মানববন্ধনরত পাঁচ শিক্ষার্থীর আইডি কার্ডের ছবি তুলে নিয়ে যায়।

এদিকে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করায় ৫ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমেনা বেগম।

বুধবার (৫ জুন) সকালে ওই পাঁচ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে আসলে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় গত ৪ জুন অধ্যক্ষ আমেনা বেগমের স্বাক্ষর করা নোটিশ।

নোটিশে বলা হয়েছে, ধারাবাহিকভাবে কলেজে অনুপস্থিতি এবং প্রতিষ্ঠানের আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজের জন্য তাকে কেন বহিষ্কার করা হবে না তা আগামী পাঁচ কর্ম দিবসের মধ্যে নিম্ন স্বাক্ষরকারীর নিকট অভিভাবকের মতামতসহ লিখিতভাবে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো। উল্লেখ্য, ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে তাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে বহিষ্কার করা হবে।

কারণ দর্শানো নোটিশটি পেয়েছেন রোববার কলেজের সামনে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া একাদশ শ্রেণির পাঁচ শিক্ষার্থী।

তারা হলেন- ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের মো. রাব্বি, সিয়াম শুভ, মো. মোনায়েম ফরাজী মুন্না ও মানবিক বিভাগের মো. পাপলু মিয়া, মুজাহিদ ইসলাম রাফি।

এই বিষয়ে ভুক্তভোগী মোনায়েম ফরাজী মুন্না বলেন, শ্রেণিকক্ষ সংকট, শ্রেণিকক্ষ সাউন্ড সিস্টেম মেরামত, কলেজের ওয়াশরুম সংস্কার, শিক্ষক সংকট, পরিবহন সংকটসহ কলেজের সার্বিক উন্নয়নের দাবিতে একাধিকবার আমরা কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছি। কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি। তিনি শুধু আমাদের সঙ্গে নয়, কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গেই কথা বলেন না এবং তার রুমে ঢুকতে দেন না। আমরা কয়েক দফা তার রুমের পাশে অভিযোগ বক্সে এ বিষয়গুলো জানিয়েছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তারা অভিযোগ বাক্স দেখেন না। আমরা এরপরই সব রকম চেষ্টা করে আন্দোলনে যাই। গত রোববার আমরা প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী কলেজ ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান করি। কিন্তু এ সময় অধ্যক্ষ বিষয়টি জানতে পেরে কয়েকজন শিক্ষককে পাঠান। তারা এসে আমাদের আইডি কার্ডের ছবি তুলে নেন। এরপর অধ্যক্ষের রুমে আমাদের নিয়ে যান এবং আমাদের মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। এ সময় অধ্যক্ষের সামনে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক পুতুল স্যার আমাদের বলেন, যেহেতু এই কলেজে এত সমস্যা তোমাদের টিসি দিয়ে দেই, চলে যাও। এরপরই আমাদের এই নোটিশ দেওয়া হলো।

কলেজ পরিচালনায় তার উদাসীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতা এতটাই যে, সাধারণ শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাংবাদিকদের সাথে দেখা বা কথা বলার সময় পান না তিনি। একাধিকবার কলেজটির শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষার্থীদের নানা দাবিতে আন্দোলন করে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের দাবি ছিল, ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের জন্য নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, শহিদ শামসুল আলম হল সংস্কার করা ও শিক্ষার্থীদের বাস উপযোগী করে গড়ে তোলা, প্রতিটি একাডেমিক ভবনে ছাত্রীদের কমন রুম, পরিত্যক্ত ডাফরিন হল চালু, আধুনিক ক্লাস রুম ও ওয়াশরুমের ব্যবস্থা করা, লাইব্রেরিতে নতুন বই সংযোজনসহ ডিজিটালাইজেশন করা, কলেজটির প্রতিটি বিভাগে শিক্ষক সংকট দূরীকরণ এবং মানসম্মত ক্যান্টিন পুনরায় চালু করাসহ কলেজের সার্বিক অবকাঠামোর উন্নয়ন। সম্প্রতি একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের নানা সমস্যা ও অনিয়ম সমাধানের জন্য ক্যাম্পাসের সামনে মানববন্ধন করেন। কিন্তু এর মধ্যে কোনো দাবিই পূরণ হয়নি।

তবে ১৭ হাজার শিক্ষার্থীর তোপের মুখে পড়ে বহু বছর ধরে পরিবহন খাতে দেওয়া শিক্ষার্থীদের জমে থাকা টাকা দিয়ে ডেমরা ও রামপুরা রুটে বিআরটিসির দুটি বাস ভাড়া চালানোর উদ্যোগ নিলেও তাতে করে আয় ব্যয়ের হিসাব নিয়ে আছে শিক্ষার্থীদের মনে নানা প্রশ্ন।

শিক্ষার্থীরা বলছে, ১৭ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য বাস দুটি অপ্রতুল। আর বাস দুটি ভাড়ায় চালাতে যে টাকা ব্যয় হয়, তা দিয়ে কয়েকটি নিজস্ব বাস কেনা যায়। এ বিষয়ে কয়েক মাস আগে দৈনিক কালবেলা পত্রিকার কবি নজরুল সরকারি কলেজ প্রতিনিধি তার কাছে কয়েক বার জানতে চাইলেও তিনি ওই সাংবাদিককে মিটিংয়ের কথা বলে ব্যস্ততা দেখিয়েছেন।

কবি নজরুল কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ খান বলেন, প্রতিষ্ঠার ১৪৯ বছর পরেও সংকট ও সমস্যায় জর্জরিত কবি নজরুল কলেজ। এই কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই শুনে আসছি, সমস্যাগুলোর সমাধান শিগগিরই হবে। কিন্তু সমস্যা সমাধানে আদৌ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। খুবই দুঃখ লাগে যখন আমরা নিজেরাই শ্রেণিকক্ষের অভাবে ক্লাস করতে পারি না। রুম সংকটের কারণে আমাদের ক্লাস বাতিল হয়ে যায়। ইনকোর্স পরীক্ষার সময় রুমের অভাবে পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়। অনাথের মতো এক রুম থেকে আরেক রুমে দৌড়াদৌড়ি করা লাগে।

তিনি বলেন, এত শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র দুটি বাস চালু আছে। সেখানে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের কারণে বাসে ওঠা যায় না। বিষয়গুলো আমরা কলেজ প্রশাসনকে জানানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশের অনুমতি পাই না। অধ্যক্ষ সারা দিন মিটিং সিটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, ফলে শিক্ষার্থীদের কথা ভাবার সময় নেই।

এ বিষয়ে কলেজটির স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার বলেন, নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোনো আবাসন সুবিধা। ছাত্রদের জন্য একটা হল থাকলেও কলেজ প্রশাসনের অবহেলায় সেটার খুবই বাজে অবস্থা। কলেজ ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোনো নামাজ পড়ার স্থান। ছোট একটা কমন রুমেই তাদের সবকিছু করতে হয়। এই কলেজে নেই কোনো ডে কেয়ার সেন্টার। স্নাতকের অনেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও তাদের ছোট বাচ্চা নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন। ডে কেয়ার সেন্টার না থাকায় তাদের বিপাকে পড়তে হয়। এ ছাড়া ওয়াশরুমে স্যানিটাইজেশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। অধ্যক্ষ আমেনা বেগম প্রশাসনিক দায়িত্ব পাওয়ার এত বছর পরেও এই কলেজে শুধু নেই আর নেই অবস্থা।

এ বিষয় একাধিকবার অধ্যক্ষ আমেনা বেগমকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। অভিযোগের বিষয়ে অধ্যক্ষকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

ক্যাম্পাসে অবকাঠামো ও শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য আন্দোলন করায় শিক্ষার্থীদের নানা অজুহাতে কারণ দর্শানোর নোটিশের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। সংকট থাকবেই, শিক্ষার্থীরা তা নিয়ে কথা বলতে পারেন। তাই বলে তাদের বহিষ্কারের জন্য কারণ দর্শানো নোটিশ উচিত বলে মনে করি না। তা ছাড়া একটি কলেজের অধ্যক্ষ তিনি তার এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলবেন না শিক্ষার্থীদের সঙ্গে, শিক্ষা ও গবেষণার মানুষ হিসেবে তা আমি মনে করি না। কারণ সাংবাদিক বা শিক্ষার্থীরা তাদের কলেজের বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষের কাছে গেছেন, কোনো একক ব্যক্তির কাছে নয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বুজতেছি না এ সরকার কি আমাদের, নাকি কাদের: ইব্রাহীম

কবি নজরুল ছিলেন মুসলিম জাগরণের অগ্রদূত : ডা. ইরান

শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু মঞ্চ ও পোশাক কর্মশালা

এবার চতুর্থ সারির ক্লাবের কাছে হেরে ম্যানইউর বিদায়

ড. মাসুদের প্রচেষ্টায় দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেলো ৩ ইউনিয়নের মানুষ

বিশ্বকাপ দলে সুযোগ না পেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছেন বাংলাদেশ স্পিনার

রুমিন ফারহানার দুঃখ প্রকাশ

বৃহস্পতিবার প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা

ভারতে নিষিদ্ধ অনলাইন জুয়া, বড় ধাক্কায় আইপিএল ও ভারতীয় ক্রিকেট

পদক্ষেপ নিলে মনে হয় দেশেই থাকা হবে না : ডিসি মাসুদ

১০

রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সভা

১১

ডিআরইউতে মঞ্চ ৭১–এর কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবি

১২

জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব অপরিহার্য: উপদেষ্টা

১৩

কনভেনশন হলে গেরিলা বৈঠকে গ্রেপ্তার শিমুল ৪ দিনের রিমান্ডে

১৪

শাহবাগে এসে ডিএমপি কমিশনারের ‘দুঃখ প্রকাশ’

১৫

ইনকিলাব সম্পাদককে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাল ছাত্রশিবির

১৬

বিএনপি নেতাকে কোপাল যুবলীগ নেতা

১৭

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী হাটহাজারী বিমানবন্দর

১৮

ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে রুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

১৯

ডাকসু নির্বাচন / ১৩২ শিক্ষার্থীকে খাওয়ালেন প্রার্থী, রিটার্নিং কর্মকর্তা বললেন আচরণবিধি লঙ্ঘন

২০
X