শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদের বেতনভাতা বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে বেসরকারি সংস্থা গণস্বাক্ষরতা অভিযান। একইসঙ্গে শিক্ষকরা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন কি না তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণের জন্য মনিটরিং ব্যবস্থাকে জোরদার করার লক্ষ্যে বাজেটে বরাদ্দ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে ‘শিক্ষার ন্যায্যতাভিত্তিক বাজেট : আমাদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ সুপারিশ করা হয়। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ সভার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অর্থনীতিবিদ ও এডুয়েকশন ওয়াচের চেয়ারপারসন ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। অনুষ্ঠান পরিচলনা করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।
সভায় জানানো হয়, গণসাক্ষরতা অভিযানের পক্ষ থেকে গত চার মাসে ‘শিক্ষায় ন্যায্যতাভিত্তিক বাজেট ও জনমানুষের প্রত্যাশা’ বিষয়ে তৃণমূলের চাহিদা ও ভাবনা জনাতে জেলা পর্যায়ে ৪টি এবং উপজেলা পর্যায়ে ৬টি মতবিনিময় সভা করা হয়। সভা থেকে তৃণমূলের যেসব চাহিদা ও প্রত্যাশা ওঠে এসেছে এবং এ সংক্রান্ত গবেষণার ফল ও বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে সুপারিশমালা তৈরি করা হয়েছে।
সুপারিশমালায় বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা বাড়াতে হবে। প্রান্তিক অঞ্চল ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শতভাগ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দিতে হবে। কারিগরি শিক্ষার শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপবৃত্তি দিতে হবে। প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা নিশ্চিত এবং তাদের লেখাপড়া, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে। আদিবাসী শিক্ষার্থীদের আলাদা উপবৃত্তি দিতে হবে। আদিবাসীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধিতে বিশেষ সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাজেটের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য মনিটরিং ও সমন্বয় জোরদার করতে হবে। বাজেট বিভাজনের ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা পরিহার করতে হবে। বাজেট তৈরিতে তৃণমূল পর্যায়ের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। শিক্ষাখাতে স্কুল ও স্থানীয় চাহিদাভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। শিক্ষাবাজেট নিয়ে স্থানীয়, বিশেষ করে স্কুল পর্যায়ে আলোচনা করতে হবে। উপজেলা পর্যায়ে সরকারি বরাদ্দ বাজেট জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। জেলা পর্যায়ে বাজেটের অব্যয়িত অর্থ সংশ্লিষ্ট জেলার চর, হাওর, উপকূলীয় ও ভৌগোলিকভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় শিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যয় করার নির্দেশনা বাজেটে থাকতে হবে।
বাজেটবিষয়ক আলোচনাপত্র উপস্থাপন করেন গণসাক্ষরতা অভিযান এর উপ-পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বৃদ্ধি হলেও শতাংশে বরাদ্দ কমেছে। আবার যে অর্থ বরাদ্দ হয় তাও আবার শতভাগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। আমরা দেখছি, সংশোধিত বাজেটে শিক্ষাখাত থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা ফেরত নেওয়া হয়েছে। আমাদের দাবি অন্ততপক্ষে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, সরকার অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে, ভবন দিচ্ছে এখন শুধু সমন্বয় করে বাস্তবায়ন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বাস্তবায়নের দায়িত্বে যারা আছেন তাদের অদক্ষতার জন্য যদি টাকা ফেরত যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
মন্তব্য করুন