বলিউডের আলোচিত মডেল ও অভিনেত্রী শেফালি জারিওয়ালার আকস্মিক মৃত্যুতে স্তব্ধ ভারতের বিনোদন অঙ্গন। ‘কাঁটা লাগা’ গানে ঝলক দেখিয়ে রাতারাতি পরিচিতি পাওয়া এই অভিনেত্রী মাত্র ৪২ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। মঙ্গলবার (২৭ জুন) রাতে মুম্বাইয়ের নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায়নি। শনিবার (২৮ জুন) সকাল পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকেও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি। জানা গেছে, মৃত্যুর মাত্র পাঁচ ঘণ্টা আগেও প্রিয় পোষ্যকে নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন তিনি—যা অভিনেত্রীর শেষ মুহূর্তগুলোর স্বাভাবিকতার বিপরীতে এক রহস্যঘন আবহ তৈরি করেছে। ইতোমধ্যে মুম্বাই পুলিশ ও ফরেনসিক টিম তদন্ত শুরু করেছে। অভিনেত্রীর বাসা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বিভিন্ন নমুনা।
শেফালীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন তার অনুরাগীরা, সহকর্মীরা ও পরিবার। তার বাবা স্টেজ ফোর ক্যানসারে আক্রান্ত, আর মা এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না যে তাদের মেয়ে আর নেই।
শেফালি জারিওয়ালা শুধু পর্দার একজন পরিচিত মুখই নন, ছিলেন একজন সংবেদনশীল ও নির্লোভ মানুষ। বাচ্চাদের প্রতি তার বিশেষ ভালোবাসা ছিল, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পেত শিশুর সঙ্গে তোলা ছবিতে। বহু সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, মা হওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা ছিল তার। জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল একটি কন্যাসন্তান দত্তক নেওয়া।
২০১৪ সালে টেলিভিশন অভিনেতা পরাগ ত্যাগীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শেফালি। দীর্ঘ ১১ বছরের দাম্পত্যজীবনেও নিঃসন্তান ছিলেন তারা। শেফালীর বাবার কথায়, ‘ছোটবেলা থেকেই মেয়ের মনে সন্তান দত্তক নেওয়ার ভাবনা ছিল।’
এক সাক্ষাৎকারে শেফালি বলেছিলেন, আমার বাবা বলেছিলেন, প্রথম সন্তান যেন নিজের হয়, তারপর আরেকটি দত্তক নিতে পারি। আমি যখন পরাগকে বিষয়টি জানাই, সে সহজেই রাজি হয়ে যায়। বলেছিল, এই সিদ্ধান্তে সে সবসময় আমার পাশে থাকবে।
দম্পতি মিলে দত্তক নেওয়ার আইনি প্রক্রিয়াও শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন থমকে যায় মহামারি করোনার কারণে। শেফালি বলেছিলেন, ভারতে দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ নয়। সাধারণত এতে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগে। আমরা প্রক্রিয়া শুরু করেছিলাম, কিন্তু লকডাউনের কারণে তা আটকে যায়। এইভাবে শেফালীর জীবন থেকে অপূর্ণ থেকে যায় সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত অধ্যায়- ‘মা’ হওয়ার অনুভূতি।
শেফালীর ব্যক্তিগত জীবন ছিল টানাপড়েনে ভরা। মাত্র ২২ বছর বয়সে গায়ক হরমিত সিংহকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। তবে সেই সম্পর্ক সুখকর ছিল না। শারীরিক নির্যাতন না হলেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। বিচ্ছেদের পর নতুন জীবন শুরু করেন পরাগ ত্যাগীর সঙ্গে। তবে এক সময় তার নাম জড়ায় ‘বিগ বস’ খ্যাত অভিনেতা সিদ্ধার্থ শুক্লার সঙ্গেও। ২০২১ সালে সিদ্ধার্থ আকস্মিকভাবে মারা যান হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে, যা শেফালীর জীবনেও গভীর প্রভাব ফেলেছিল বলে মনে করেন অনেকে।
শেফালীর মৃত্যুর আগমুহূর্তে আচরণ এবং তার ব্যক্তিগত জীবনের নানা না-পাওয়া এখন পুলিশি তদন্তে নতুন মাত্রা যোগ করছে।
মন্তব্য করুন