ভারতের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী জুবিন গর্গের রহস্যময় মৃত্যুকে ঘিরে এবার সামনে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যান্ডের ড্রামার শেখরজ্যোতি গোস্বামীর দাবি, জুবিনের মৃত্যু কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটি নিছক খুন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, জুবিন গর্গ দক্ষ সাঁতারু ছিলেন, তাই পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না, বরং তার ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা নাকি পরিকল্পিতভাবে তাকে বিষ খাইয়ে হত্যা করেছেন। তার এই চাঞ্চল্যকর বক্তব্যে উত্তাল পুরো আসাম, নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়েছে ভারতীয় সংগীত অঙ্গনে।
ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে রহস্যজনকভাবে মারা যান জুবিন গর্গ। স্কুবা ডাইভিংয়ের পর তার মারাত্মক অবস্থা হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু তার মৃত্যুতে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যায়, তাই তদন্তের জন্য একটি বিশেষ দল গঠন করে আসাম সরকার। এই তদন্তের অংশ হিসেবে জুবিনের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা, অনুষ্ঠানের আয়োজক শ্যামকানু মোহন্ত, গায়িকা অমৃতপ্রভ মাহান্ত এবং ব্যান্ডের ড্রামার শেখরজ্যোতি গোস্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে শেখরজ্যোতি জানিয়েছেন, সিঙ্গাপুরে প্যান প্যাসিফিক হোটেলে জুবিনের সঙ্গে ছিলেন তার ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা। তবে গায়কের মৃত্যুর ঠিক আগে সিদ্ধার্থ ভীষণ রহস্যজনক আচরণ করছিলেন। এখানেই শেষ নয়, জুবিনের টিমের ড্রামারের আরও বিস্ফোরক দাবি, মৃত্যুর দিন ম্যানেজার সিদ্ধার্থ একপ্রকার জোর করেই বোটের গতিবিধি নিজের কন্ট্রোলে রাখেন।
শেখরজ্যোতি আরও জানান, এমনকি বোটচালককেও সেখান থেকে সরিয়ে দিয়ে বাকি সমস্ত যাত্রীদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়। আর কেউ যাতে এই বিষয়ে নাক না গলায়, সেই নির্দেশও দিয়েছিল অন্য আরেকজনকে। জলের মধ্যে জুবিনের যখন শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল, তখন তার ম্যানেজার চিৎকার করে বলেছিল- ‘ওকে ছেড়ে দাও’।
তদন্তকারীদের কাছে শেখরজ্যোতি বলেন, ‘জুবিন নিজে ভালো সাঁতারু ছিল। ও আমাকে আর শর্মাকে সাঁতার কাটা শিখিয়েছে। ওর পক্ষে জলে ডুবে মরে যাওয়া সম্ভব নয় কোনোভাবেই। শ্যামকানু মোহন্তের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধার্থ শর্মাই জুবিনকে বিষ খাইয়েছে; আর ইচ্ছে করেই সিঙ্গাপুরকে বেছে নিয়েছিল। এমনকি সিদ্ধার্থ কাউকে ওই বোটের ভিডিও শেয়ার করতেও মানা করেছিল।’
এই ঘটনায় আসাম পুলিশ সিদ্ধার্থ শর্মা এবং শ্যামকানু মোহন্তের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। দিল্লির আদালত তাদের ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। অন্যদিকে, শ্যামকানু মোহন্ত তার বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’ দায়েরের অভিযোগ এনে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন। তদন্তকারীরা সিদ্ধার্থ শর্মার জবাবে সন্তুষ্ট নন বলে জানা গেছে।
মন্তব্য করুন