জন্মের প্রথম দিন থেকে ২৮ দিন পর্যন্ত শিশুকে নবজাতক বলা হয়। নবজাতকের মৃত্যুর যেসব কারণ রয়েছে, তার বড় অংশজুড়ে রয়েছে নিউমোনিয়া।
বাংলাদেশ জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০২২-এর তথ্য অনুসারে, প্রতি এক হাজার জীবিত জন্ম নেওয়া নবজাতকের মধ্যে ২০ জন মারা যায় এবং তার মধ্যে ৮ ভাগ মৃত্যুর কারণ নিউমোনিয়া।
ফুসফুসের প্রদাহকে নিউমোনিয়া বলে। ফুসফুসের ছোট ছোট বাতাসভর্তি থলিতে (অ্যালভিওলাই) সংক্রমণের ফলে নিউমোনিয়া হয়। জীবাণুর সংক্রমণ, খাবার কিংবা রাসায়নিক পদার্থ শ্বাসনালিতে ঢুকে যাওয়া অথবা দীর্ঘ সময় ধোঁয়াযুক্ত পরিবেশে থাকার কারণে নিউমোনিয়া হয়। বয়সভেদে শিশুদের জীবাণুর ধরন ভিন্ন। তাই অ্যান্টিবায়োটিক বা চিকিৎসার ধরনেও ভিন্নতা দেখা যায়।
সাধারণত নিউমোনিয়ার উপসর্গ হচ্ছে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট। তবে নবজাতকের এসব উপসর্গ না-ও থাকতে পারে। তাই শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি তাদের অন্য বিপদচিহ্নগুলো মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করতে হবে এবং লক্ষ করার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
নবজাতকের শ্বাসকষ্ট শান্ত থাকা অবস্থায় যদি নিচের তিনটি লক্ষণের এক বা একাধিক দেখা যায়। » প্রতি মিনিটে শ্বাসের গতি ৬০ বা তার বেশি। » শ্বাস নেওয়ার সময় বুকের নিচের অংশ গভীরভাবে দেবে যাওয়া। » শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে শব্দ হওয়া।
নবজাতকের বিপদচিহ্ন » অচেতন বা অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে যাওয়া। » খিঁচুনি। » কিছু খেতে না পারা। বুকের দুধ টেনে খেতে না পারা কিংবা বারবার ছেড়ে দেওয়া। » বারবার বমি করা কিংবা যতটুকু খাচ্ছে পুরোটাই বমি হয়ে যাওয়া। » হঠাৎ করে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া। » নাক বা জিহ্বা কালো বা নীল বর্ণ ধারণ করা। » যেকোনো ধরনের রক্তপাত। » নবজাতকের ওজন ১ হাজার ৫০০ গ্রামের কম থাকা। » জ্বর অথবা শরীর একেবারে ঠান্ডা হয়ে যাওয়া। » নড়াচড়া একদম কমে যাওয়া।
নিউমোনিয়ার জটিলতা থেকে নবজাতককে রক্ষা করার জন্য যে বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে:- » জন্মের পর সুস্থ নবজাতককে যত দ্রুত সম্ভব মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। বুকের দুধ ছাড়া অন্য কিছু খাওয়ানো যাবে না। ৬ মাস পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। » নবজাতককে ধরার আগে হাত ধুয়ে নিতে হবে। » হাঁচি, কাশি, সর্দি থাকলে নবজাতকের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। প্রয়োজনে মাস্ক পরে নিতে হবে। » নিউমোনিয়ার লক্ষণ এবং নবজাতকের বিপদচিহ্ন সম্পর্কে মা-বাবার পাশাপাশি পরিবারের সবাইকে অবহিত করতে হবে।
মন্তব্য করুন