কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২৩, ০২:০০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মুখের ক্যান্সারের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

মুখের ক্যান্সার  ।  ছবি : সংগৃহীত
মুখের ক্যান্সার । ছবি : সংগৃহীত

সচরাচর দাঁতের মাড়িতে ঘা বা ব্যথা হলে খুব একটা পাত্তা দেওয়া হয় না। সাধারণত এগুলো সামান্য যত্নেই সেরে ওঠে। তবে, এটাকে হেলাফেলা করার কোনো সুযোগ নেই। দাঁতের মাড়িতে ব্যথা বা মুখের মধ্যে ঘা অনেক সময় ক্যান্সারেরও পূর্বাভাস।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাথা থেকে ঘাড়; এই অংশের মধ্যে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা দেহের অন্যান্য অংশের চেয়ে কম। তবে, বিরল হলেও দাঁতের মাড়ি, মুখ, গলা, কণ্ঠনালি, লালাগ্রন্থি, নাকের গর্ত এবং সাইনাস ক্যান্সার হওয়ার পরিসংখ্যান কম নয়।

আমেরিকান সোসাইটি ফর ক্লিনিকাল অনকোলজির তথ্যানুসারে, বিশ্বে প্রায় ৩ লাখ ৫৫ হাজার জন এ রোগে আক্রান্ত হয় এবং এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করে প্রায় ১ লাখ ৭৭ হাজার রোগী। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগ শনাক্ত করতে পারলে নিরাময় করাও সম্ভব হয়।

আমেরিকার ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের এক রিপোর্টে দেখা যায়, প্রায় ৬০ শতাংশ মুখের ক্যান্সার রোগী পাঁচ বছর বা এরও বেশি সময় বেঁচে থাকেন। যত দ্রুত ক্যান্সার শনাক্ত করা যায়, চিকিৎসার পর রোগীর দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ততো বেশি। এমনকি স্টেজ-১ এবং স্টেজ-২ এর রোগীদের ক্ষেত্রে এই হার (৭০–৯০) শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

মুখের ক্যান্সারের মধ্যে যেসব ক্যান্সারগুলো বেশি দেখা যায়-

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরে অন্তত দুবার দাঁত ও এর আশপাশের অঞ্চল পরীক্ষা করানো জরুরি। এতে করে যে কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা ডেন্টিস্টের কাছে ধরা পড়ে। ফলে ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে তা অনেক সময় সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব হয়।

বিশেষজ্ঞরা মুখের ক্যান্সারের মধ্যে সাধারণ মাড়িতে, ঠোঁটে, জিহ্বা, মুখের তালু ও গালের ভেতরের অংশে দেখা যায় বলে জানান।

মুখের ক্যান্সার হবার কারণ

বিশেষজ্ঞরা মুখে ক্যান্সার হওয়ার অন্যতম বড় কারণ হিসেবে দেখছেন তামাক গ্রহণ করা। সেটা হতে পারে সিগারেট, চুরুট, গুল বা জর্দার মাধ্যমে। এ ছাড়াও যারা নিয়মিত মদ্যপান করে থাকে তারাও এই রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের চেয়ে পুরুষদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা প্রায় দ্বিগুণ।

মুখের ক্যান্সারে যেসব লক্ষণ দেখা দেয়-

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুখ ও মুখগহ্বরের ক্যান্সারের লক্ষণগুলোর ক্ষেত্রে প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে মুখের যে কোনো অংশ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যাচ্ছে কি না। আবার মুখের কোনো অংশে ঘা বা একটি ছোট পিণ্ডর মতো কিছু অনুভূত হওয়া, সাদাটে বা লাল হয়ে যাওয়া কিংবা রং পরিবর্তন হওয়া মুখ ও মুখগহ্বরের ক্যান্সারের লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম। আবার অনেক সময় মুখের ভেতরের সেই নির্দিষ্ট স্থানে হাত দিয়ে পরীক্ষা করলে দেখা যায়, সে স্থানটি খসখসে অনুভূত হচ্ছে।

অনেক ক্ষেত্রে মাড়ির কোনো অংশ থেকে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ, মাড়ি নিচের দিকে দেবে যাওয়া কিংবা অস্বাভাবিকভাবে ফুলে উঠতে পারে। এ ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যথা থাকে না। ঘা বেড়ে গেলে মুখে অস্বাভাবিক রকম বেশি লালা তৈরি হওয়া, মুখের ‘হাঁ’ছোট হয়ে যাওয়া, জিহ্বা নাড়তে কষ্ট হওয়া এবং খেতে কষ্ট হতে পারে।

এ ছাড়াও ঠোঁট, মুখ, গলা বা গালে অবশতা অনুভূত হওয়া, দাঁত পড়ে যাওয়া, জিহ্বায় ব্যথা, চোয়ালে ব্যথা বা অবশতা, কানে ব্যথা অনুভূত হওয়া, ওজন অল্প সময়ের মধ্যে অনেকখানি কমে যাওয়াও ক্যান্সারেরে লক্ষণ।

মুখের ক্যান্সারে যেসব পরীক্ষা

মুখের ক্যান্সার ধরা পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত। মুখের ক্যান্সারের তাৎক্ষণিক অবস্থা জানতে চিকিৎসকরা সাধারণত নিন্মোক্ত পরীক্ষাগুলো করিয়ে থাকেন।

# এক্সরে : মুখমণ্ডল, বুকে বা ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়েছে নাকি সেটা দেখার জন্য। # সিটি স্ক্যান : মুখ, ঠোঁট, গলা বা ফুসফুসের কোথাও কোনো টিউমারের উপস্থিতি বোঝার জন্য। # এমআরআই স্ক্যান : ক্যান্সারের স্টেজ এবং মুখ ও গলার প্রকৃত অবস্থা বোঝার জন্য।

মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতি

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসানির্ভর করে এর ধরন, অবস্থান, স্টেজ সবগুলোর ওপর। প্রাথমিক স্টেজে ধরা পড়লে অনেক সময় খুব বেশি সময় লাগে না। যদিও সেক্ষেত্রে রোগীর বয়সও অনেক বড় একটি ফ্যাক্টর।

# সার্জারি : চিকিৎসার প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত সার্জারির মাধ্যমে টিউমার বা কারসিনোজেনিক লিম্ফ নোড অপসারণ করা হয়। পাশাপাশি মুখ ও গলার আশপাশের টিস্যুও নেয়া হয় অনেক সময়।

# রেডিয়েশন থেরাপি : রেডিয়েশন থেরাপি এই চিকিৎসার আরেকটি অপশন। সপ্তাহে দুদিন বা পাঁচ দিন করে দুই সপ্তাহ থেকে আট সপ্তাহ পর্যন্ত এই থেরাপি চলতে পারে। ক্যান্সার ‘এডভান্স স্টেটেজ’-এর হলে রেডিয়েশন থেরাপির সঙ্গে কেমোথেরাপিও প্রয়োজন হতে পারে।

মুখের ক্যান্সার থেকে পরিত্রাণ পেতে করণীয়

পান, সুপারি, জর্দা এবং ধূমপানই মুখ ও মুখগহ্বরের ক্যান্সারের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। আবার পুষ্টিহীনতা এবং মুখের অভ্যন্তরের অনুপযুক্ত পরিবেশও এ রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এ ছাড়াও অপরিচ্ছন্নতার কারণেও এ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই পান, সুপারি, তামাক বা এ জাতীয় দ্রব্য সেবনের বদভ্যাস ত্যাগ করে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ ও অন্যান্য সুঅভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

এ ছাড়া প্রতিদিন দুবেলা যত্নসহকারে দাঁত মেজে পরিষ্কারের মাধ্যমে এ রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়।

সূত্র : ওরাল ক্যান্সার ফাউন্ডেশন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কক্সবাজারে যুবলীগ নেতা বাহাদুর গ্রেপ্তার

বড় মিছিল নিয়ে শাহবাগে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

তারেক রহমানের ফিরতে বাধা নেই এটি সরকারের মুখে শুনতে চাই : গয়েশ্বর 

ভারতের ‘ব্রহ্মস’ ক্ষেপণাস্ত্রঘাঁটিতে পাকিস্তানের পাল্টা হামলার দাবি

শিক্ষার্থীকে কুপ্রস্তাবের অভিযোগে শিক্ষক গ্রেপ্তার

‘তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে মানবসম্পদ রূপে গড়ে তোলার বিকল্প নেই’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কত দিন ছুটি, জানাল সরকার

উত্তেজনার মধ্যে ভূমিকম্পে কাঁপল পাকিস্তান

সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে ঝড়

নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা তারুণ্যের সমাবেশস্থল

১০

তীব্র গরমেও জনসমুদ্র চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড

১১

কোহলি অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে, আশাবাদী বিসিসিআই

১২

ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের নতুন অভিযান ‘অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস’

১৩

লঞ্চ ঘাটে তরুণীদের মারধর, সেই যুবক আটক

১৪

মিছিল নিয়ে শাহবাগে ঢাবি শিক্ষার্থীরা

১৫

ফিলিস্তিনের গাজায় ধারাবাহিকভাবে সহায়তা করছে হাফেজ্জী চ্যারিটেবল

১৬

তীব্র গরমে নগরবাসীকে ডিএনসিসি প্রশাসকের সতর্কতামূলক বার্তা

১৭

চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড

১৮

অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে : গণপূর্ত উপদেষ্টা

১৯

প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত চট্টগ্রামবাসী

২০
X