আমরা সবাই জানি, ভালোভাবে বাঁচতে হলে ভালো খেতে হয়। কিন্তু আপনি কি জানেন, আপনি কী খাচ্ছেন– সেটি আপনার মা-বাবা হওয়ার ক্ষমতার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে? হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। শুধু ওজন বা চেহারা নয়, সন্তান ধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারেও খাবারের একটা বড় ভূমিকা আছে।
আরও পড়ুন : হার্ট ব্লকের ঝুঁকিতে যারা
আরও পড়ুন : তরুণদের স্থূলতা কি বিপদের ইঙ্গিত
বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, স্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাস না থাকলে সন্তান নিতে সমস্যা হতে পারে। আবার কিছু কিছু পুষ্টিকর খাবার প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে। তাই খাবার নিয়ে সচেতন হওয়া খুব জরুরি– শুধু শরীরের জন্য নয়, ভবিষ্যতের ছোট্ট এক জীবনের জন্যও।
খাবারের সঙ্গে সন্তান ধারণের সম্পর্ক
খাবার আমাদের শরীরের ভিত তৈরি করে। বিশেষ করে, গর্ভধারণের আগে ও পরে কিছু খাবার বা ভিটামিন খাওয়া খুব জরুরি হয়ে পড়ে– যেমন- ফলিক অ্যাসিড।
ফলিক অ্যাসিড গর্ভে থাকা শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের গঠন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গর্ভধারণের পরিকল্পনা থাকুক বা না-ই থাকুক, প্রজনন সক্ষম সব নারীর প্রতিদিন অন্তত ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড খাওয়া উচিত।
অনেক দেশে যেমন যুক্তরাষ্ট্রে, ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল বা অন্য খাবারে ফলিক অ্যাসিড মিশিয়ে দেওয়া হয়, যাতে যে কোনো সময় গর্ভধারণ হলেও ঝুঁকি কমে। এমনকি এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিনের খাবারে ফলিক অ্যাসিড যোগ করার মাধ্যমে ২০১৯ সালে প্রায় ২২% মারাত্মক জন্মগত সমস্যা প্রতিরোধ করা গেছে।
শুধু নারীদের নয়, পুরুষদের জন্যও খাবার গুরুত্বপূর্ণ
অনেক সময় আমরা শুধু নারীদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে ভাবি। কিন্তু একজন পুরুষের প্রজনন ক্ষমতার উপরেও খাবারের প্রভাব পড়ে। শুক্রাণুর গুণগত মান, গতি, আকার– এসবই নির্ভর করে শরীরের সার্বিক স্বাস্থ্য এবং পুষ্টির উপর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক সময় পুরুষের শুক্রাণু দুর্বল থাকলে বা কম থাকলে সন্তান ধারণে সমস্যা হয়। দূষণ, স্ট্রেস এবং অপুষ্টি– এসবেরও বড় প্রভাব আছে।
সব সমস্যার সমাধান কি খাবার?
খাবার একাই সব সমস্যার সমাধান নয়, কিন্তু এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অনেক বন্ধ্যত্বের কারণ হয়তো কখনোই ধরা পড়ে না, কিন্তু সুস্থ, পরিমিত এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে শরীরকে প্রস্তুত রাখা যায়।
সন্তান ধারণের সময় বা চেষ্টা চলাকালীন স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস যেমন দরকার, তেমনি গর্ভাবস্থাতেও ঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া না করলে গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হতে পারে।
উল্লেখ্য, ১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে নেদারল্যান্ডসে ঘটে এক ভয়াবহ খাদ্য সংকট– ‘ডাচ হাঙ্গার উইন্টার’। তখন অনেক গর্ভবতী নারী দিনে মাত্র ৪০০ ক্যালরির মতো খাবার পেতেন।
পরে দেখা যায়, এই সময় গর্ভে থাকা শিশুদের মধ্যে অনেকেই খর্বাকৃতির, শীর্ণকায় এবং মাথার আকার ছোট ছিল। বড় হওয়ার পর তাদের মধ্যে মোটা হওয়ার প্রবণতা, ডায়াবেটিস ও মানসিক রোগও বেশি দেখা গেছে। এমনকি তাদের মৃত্যুর হারও ছিল বেশি।
এই ঘটনাটি আমাদের দেখিয়ে দেয়– ঠিকভাবে না খাওয়ার প্রভাব কতটা গভীর এবং দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।
তাহলে করণীয়!
যারা মা-বাবা হওয়ার কথা ভাবছেন, তাদের এখন থেকেই স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। প্রচুর শাকসবজি, ফল, লাল মাছ, ডিম, বাদাম, দুধ ও দুধজাত খাবার– এ ধরনের পুষ্টিকর খাবার প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
আরও পড়ুন : আলু খেয়ে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন কি
আরও পড়ুন : রান্নায় হলুদ বেশি পড়ে গেছে? যা করণীয়
আর শুধু নারীদের জন্য নয়, পুরুষরাও যেন সচেতন হন– সেটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সন্তান ধারণের পথটা সহজ নয়। অনেক কিছুই আমাদের হাতে থাকে না। কিন্তু কিছু জিনিস থাকে– যেমন- কী খাব, কেমন জীবনযাপন করব। তাই নিজের এবং ভবিষ্যৎ সন্তানের সুস্থতার কথা ভেবে খাবার নিয়ে সচেতন হওয়াটাই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত।
মন্তব্য করুন