

শীতকাল মানেই রোদ পোহাতে পোহাতে কমলালেবু খাওয়ার আনন্দ। রঙিন, রসালো ও ভিটামিন সি-তে ভরপুর এই ফল আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বককে উজ্জ্বল রাখে এবং শরীরকে ফ্রি র্যাডিকেল থেকে রক্ষা করে। কিন্তু সবাই কি এই সুস্বাদু ফলটি নিরাপদভাবে খেতে পারে? গবেষণা বলে, কিছু মানুষের জন্য কমলালেবু খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।
চলুন জেনে নিই, কারা কমলালেবু খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হবেন—
১. অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা জিআরইডি (GERD) রোগীরা
চিকিৎসকরা বলছেন, যারা অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা গ্যাস্ট্রোইসোফ্যাজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজে ভুগছেন, তাদের কমলালেবু খাওয়ায় সাবধানতা জরুরি। কমলালেবুর প্রাকৃতিক সাইট্রিক অ্যাসিড পাকস্থলীর অ্যাসিড বাড়িয়ে দিতে পারে এবং রিফ্লাক্সের সমস্যা তীব্র করতে পারে। এতে বুক জ্বালা, অস্বস্তি বা উল্টো হওয়া ঘটতে পারে।
পরামর্শ : খালি পেটে বা অতিরিক্ত কমলালেবু খাওয়া এড়িয়ে চলুন। কম অ্যাসিডযুক্ত ফল যেমন কলা, পাপায়া বা তরমুজ বেছে নিন।
২. কিডনির সমস্যা থাকলে
কমলালেবুতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে, যা স্বাভাবিক ক্ষেত্রে হৃদয় ও পেশির জন্য উপকারী। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি কিডনির সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত পটাশিয়াম শরীরে জমে হাইপারক্যালেমিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে পেশি দুর্বলতা, ক্লান্তি, অনিয়মিত হার্ট রিদম এবং খিঁচুনি হতে পারে।
পরামর্শ : কিডনির সমস্যা থাকলে কমলালেবুর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন এবং নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করুন। ডায়ালিসিস বা কিডনি রোগীদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৩. যারা সাইট্রাস অ্যালার্জিতে ভুগছেন
কিছু মানুষ কমলালেবু বা অন্যান্য সাইট্রাসে অ্যালার্জি পেতে পারেন। এতে মুখ বা ত্বকে চুলকানি, ফুসকুড়ি, ফোলা বা হাইভার হতে পারে। কখনো কখনো শ্বাসকষ্ট বা হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পরামর্শ : অ্যালার্জির উপসর্গ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ কমলালেবু খাওয়া বন্ধ করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৪. যারা বারবার হৃৎপিণ্ডে জ্বালা বা গরম ভাব অনুভব করেন
কমলালেবুর অ্যাসিডিক স্বভাব এই সমস্যা আরও বাড়াতে পারে। অ্যাসিডওয়ালা খাবার খাবার পর oesophageal sphincter শিথিল হয় এবং পাকস্থলীর অ্যাসিড উপরের দিকে উঠে আসে।
পরামর্শ : কমলালেবু, লেবু বা অন্যান্য তীব্র অ্যাসিডযুক্ত ফল কম খাওয়া ভালো। পরিবর্তে পেয়ারা, আপেল বা তরমুজের মতো অ্যালকালাইন ফল বেছে নিন।
৫. দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা
কমলালেবুতে প্রচুর ফাইবার থাকে, যা অন্ত্রের জন্য ভালো। কিন্তু পর্যাপ্ত পানি না পেলে এটি কোষ্ঠকাঠিন্য আরও বাড়াতে পারে।
পরামর্শ : দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। পাপায়া, কিউই, শসা ইত্যাদি জলযুক্ত ফল সঙ্গে খান।
শেষ কথা
কমলালেবু স্বাস্থ্যসম্মত, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। তবে অ্যাসিড রিফ্লাক্স, কিডনির সমস্যা, সাইট্রাস অ্যালার্জি, বারবার হৃৎপিণ্ডে জ্বালা বা দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে সাবধান হওয়া প্রয়োজন।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া
মন্তব্য করুন