

শহুরে জীবনের ব্যস্ততা, অনিদ্রা, মানসিক চাপ, দূষণ আর অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস—সব মিলিয়ে আমাদের শরীর আজ নানা জটিলতার মুখে দাঁড়িয়ে। এ অবস্থায় মানুষ আধুনিক চিকিৎসার পাশাপাশি ফিরছে প্রকৃতির দিকেও। বিশেষ করে ভেষজ বা হারবাল উপাদানের প্রতি ঝুঁকছে সবাই। এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলোর মধ্যে তুলসী এমন এক নাম, যার গুরুত্ব ভারতীয় উপমহাদেশের ঘরোয়া চিকিৎসায় শত শত বছরের পুরোনো। ধর্মীয় গাছ হিসেবে পরিচিত হলেও আয়ুর্বেদ তুলসীকে বলে ‘ওষুধের রানি’—কারণ এর পাতার ভেতরে লুকিয়ে আছে অবিশ্বাস্য সব নিরাময়-শক্তি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস তুলসী পাতা ভেজানো পানি খাওয়ার অভ্যাস এখন অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। কেউ মানসিক প্রশান্তির জন্য, কেউ শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা কমাতে, আবার কেউ শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এই পানি পান করেন। বিজ্ঞানও বলছে, তুলসীর পাতায় থাকা ইউজেনল, ক্যাম্পফিন এবং শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ শরীরের ভিতর-বাহির পরিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অনেকে ভাবেন, তুলসী পানি কি সত্যিই এত কাজে লাগে? উত্তরে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হ্যাঁ লাগে। আর সেই উপকারগুলো জানলে আপনি সত্যিই অবাক হবেন। চলুন তাহলে জেনে নিই উপকারগুলো—
১. স্ট্রেস এবং উদ্বেগ হ্রাস
এটি তুলসীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত সুবিধা।
স্ট্রেসবিরোধী : তুলসীকে একটি শক্তিশালী অ্যাডাপ্টোজেন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অ্যাডাপ্টোজেন হলো সেই সব ভেষজ, যা শরীরকে মানসিক, শারীরিক এবং পরিবেশগত স্ট্রেসের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে।
কর্টিসল নিয়ন্ত্রণ : প্রতিদিন তুলসী পানি পান করলে তা স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল-এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এর ফলে উদ্বেগ কমে এবং মানসিক শান্তি বজায় থাকে।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
তুলসীতে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য শরীরকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করে।
সংক্রমণ প্রতিরোধ : তুলসী পাতায় ইউজেনল এবং অন্যান্য যৌগ থাকার কারণে তা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাক সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। নিয়মিত পান করলে সর্দি, কাশি এবং ফ্লু-এর মতো সাধারণ অসুস্থতা থেকে সুরক্ষা মেলে।
৩. শ্বাসতন্ত্রের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
তুলসী শ্বাসতন্ত্রের জন্য খুব উপকারী।
কাশি ও ঠান্ডা : তুলসী পানি ফুসফুসের শ্লেষ্মা বা কফ পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এটি হাঁপানি এবং ব্রঙ্কাইটিসের মতো শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায় আরাম দিতে পারে।
৪. ডিটক্সিফিকেশন এবং কিডনির স্বাস্থ্য
তুলসী পাতা প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে।
কিডনি ও লিভার : তুলসী পানি লিভার এবং কিডনির কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে। এর মৃদু মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি কিডনি থেকে বর্জ্য এবং টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে। এটি কিডনি স্টোন বা বৃক্কে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমাতেও সহায়ক হতে পারে।
৫. রক্তে শর্করা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
ডায়াবেটিস : কিছু গবেষণা অনুসারে, তুলসী ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
রক্তচাপ : স্ট্রেস কমানোর মাধ্যমে এবং রক্তনালীর প্রদাহ হ্রাস করে তুলসী উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে পরোক্ষভাবে সাহায্য করতে পারে।
৬. তুলসী পানি তৈরির সঠিক পদ্ধতি
উপাদান : ৫-৭টি পরিষ্কার তুলসী পাতা নিন।
প্রস্তুত প্রণালি : রাত্রে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস জলে পাতাগুলি হালকাভাবে ছেঁচে বা চাপ দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন।
পান : পরদিন সকালে খালি পেটে এই পানি ছেঁকে পান করুন।
উল্লেখ্য, তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়া এড়িয়ে চলতে বলা হয়। কারণ তুলসী পাতায় সামান্য পারদ থাকে এবং এর অ্যাসিডিক উপাদান দাঁতের এনামেল বা আবরণের ক্ষতি করতে পারে। তাই পাতাগুলি না চিবিয়ে কেবল ভেজানো পানি পান করাই নিরাপদ।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস
মন্তব্য করুন