বাঙালির খাবারের টেবিলে দই মানেই এক আলাদা আবেগ। ভাত-মাছ-মাংসের ভারী খাবারের পর ঠান্ডা দই না হলে যেন আয়োজনে পূর্ণতা আসে না। বিশেষ করে বিয়েবাড়ির দাওয়াতে শেষ পাতে মিষ্টি দই থাকাটাই যেন নিয়ম হয়ে গেছে।
শুধু বিয়েবাড়ি নয়, ঈদের দিন কিংবা পারিবারিক মিলনমেলা—সবখানেই মিষ্টি দইয়ের চল বেশি। অনেকে আবার মনে করেন, দই খেলে খাবার দ্রুত হজম হয়, তাই ভরপেট খাওয়ার পর দই খাওয়া জরুরি। তবে আসল প্রশ্ন হলো, এই অভ্যাস কি আমাদের শরীরের জন্য ভালো, নাকি ক্ষতিকর?
পুষ্টিবিদরা বলছেন, দই সত্যিই সুপারফুড। কিন্তু মিষ্টি দই আর টক দই শরীরে ভিন্ন প্রভাব ফেলে। তাই ভারী খাবারের পর দই খাওয়ার অভ্যাস থাকলেও, কোন দই খাবেন—সে সিদ্ধান্তটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
খাবারের পর মিষ্টি নাকি টক দই ভালো?
এ বিষয়ে সম্প্রতি দেশের একটি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজধানী ঢাকার লাইফ কেয়ার মেডিকেল সেন্টার অ্যান্ড বিডিএন পল্লবী ডায়াবেটিস সেন্টারের ডায়েটিশিয়ান ইসরাত জাহান ডরিন।
তিনি বলেন, আমাদের মাঝে একটা ধারণা আছে যে, খাবারের পর দই খেলে খাবার হজম হয়ে যাবে। আর এ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষ মিষ্টি দই খেয়ে থাকেন। বিশেষ করে বিয়েবাড়ির মতো আয়োজনে এমনটাই হয়। তবে ভারী খাবারের পর মিষ্টি দই খাওয়া একেবারেই ঠিক না। আমাদের খেতে হবে টক দই।
বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে ইসরাত জাহান বলেন, দই তৈরির প্রধান ব্যাকটেরিয়া হলো ল্যাকটোব্যাসিলাস এবং স্ট্রেপটোকক্কাস থার্মোফিলাস। এর মধ্যে ল্যাকটোব্যাসিলাস আমাদের অন্ত্রে প্রাকৃতিকভাবেই থাকে। এটি প্রোবায়োটিক হিসেবে পরিচিত। আর মিষ্টি দইতে ল্যাকটোব্যাসিলাস নিষ্ক্রিয় বা মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। অন্যদিকে টক দইতে ল্যাকটোব্যাসিলাস সক্রিয় অবস্থায় থাকে। সে কারণেই টক দই খাওয়ার পর ল্যাকটোব্যাসিলাস খাবার হজমে ভূমিকা রাখে।
এ ছাড়া মিষ্টি দইয়ে যে ফ্যাট থাকে সেটা আমাদের শরীরের জন্য ভালো নয়। আর সে কারণেই মিষ্টি দই খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। সব মিলিয়ে তাই বলা যায়, খাবার সুস্থ থাকা কিংবা হজম দুই ক্ষেত্রেই টক দই মিষ্টি দইয়ের চেয়ে উপকারী। তাই খাবার খাওয়ার পর মিষ্টি দইয়ের পরিবর্তে টক দই খাওয়ার চেষ্টা করুন।
মন্তব্য করুন