

অফিসে শুধু ভালো কাজ করলেই হয় না—আচরণ, সময়জ্ঞান আর সহকর্মীদের প্রতি সম্মানও আপনার পেশাদারিত্বের বড় অংশ। ছোট ছোট কিছু অভ্যাস আপনাকে কর্মস্থলে আরও আত্মবিশ্বাসী, দক্ষ ও স্মার্ট করে তুলতে পারে। এই নিয়মগুলো মেনে চললে আপনি শুধু নিজের নয়, পুরো টিমের কাজের পরিবেশকেও ইতিবাচকভাবে বদলে দিতে পারবেন।
প্রথমেই জেনে নেওয়া দরকার অফিস শিষ্টাচার কী। অফিস এটিকেট বা শিষ্টাচার মানে হলো কর্মস্থলে এমন আচরণ করা যা পেশাদারিত্ব, সময়ানুবর্তিতা ও ভদ্রতার পরিচায়ক। এতে অন্তর্ভুক্ত হয় সম্মানজনক যোগাযোগ, সঠিক পোশাক, অফিসের নিয়ম মেনে চলা ও যৌথ ব্যবহার করার জায়গা পরিষ্কার রাখা।
এগুলো হয়তো লিখিতভাবে উল্লেখ থাকে না, কিন্তু কর্মস্থলের সবাই কীভাবে পোশাক পরে, কথা বলে এবং নিজেদের স্থান ভাগ করে নেয়—এসবের মাধ্যমেই বোঝা যায় কী গ্রহণযোগ্য আর কী নয়।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান মনে করে অফিস এটিকেট পেশাদারিত্বের প্রতীক, তাই অনেক জায়গায় কর্মীদের জন্য বিশেষ এটিকেট ট্রেনিংও দেওয়া হয়।
কেন অফিস শিষ্টাচার গুরুত্বপূর্ণ?
যদিও সংস্কৃতি ভেদে নিয়মগুলো কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, তবুও কিছু সাধারণ শিষ্টাচার মানা মানে হলো সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা এবং দলগতভাবে ভালোভাবে কাজ করা।
এগুলো কর্মস্থলকে আরও ইতিবাচক ও সহযোগিতামূলক করে তোলে, যেখানে সবাই শোনা ও সম্মানিত বোধ করে। পেশাদারিত্ব বাড়াতে, দলগত কাজ উন্নত করতে ও একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল পরিবেশ গড়ে তুলতে এই ১২টি গুরুত্বপূর্ণ অফিস শিষ্টাচার জানুন। এগুলো যে কোনো কর্মস্থলের জন্যই প্রযোজ্য।
সময়মতো আসা ভালো, কিন্তু একটু আগে আসা আপনার দায়িত্ববোধের পরিচায়ক। এতে আপনি শান্তভাবে কাজের প্রস্তুতি নিতে পারেন, মিটিং বা প্রেজেন্টেশনের আগে মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে পারেন।
গবেষণায় দেখা যায়, দুপুরের পর অনেকের উৎপাদনশীলতা কমে যায়—তাই সকালেই কাজ শুরু করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
অফিস একটি যৌথ স্থান। তাই মনে রাখবেন রান্নাঘর, কফি কর্নার বা মিটিং রুম ব্যবহার করার পর পরিষ্কার রাখা জরুরি। নিজের আবর্জনা ফেলে দিন, মাইক্রোওভেন পরিষ্কার রাখুন, ফ্রিজে পুরোনো খাবার জমতে দেবেন না।
সহকর্মীদের নিয়ম মানাতে গিয়ে কেউ যেন বিরক্ত না হয়, তাই অফিসে সাধারণ নিয়ম বা সাইনবোর্ড ব্যবহার করুন। কেউ ভুল করলে মাফ করে দিন, সম্পর্ক নষ্ট করবেন না।
প্রতিটি সহকর্মীর ব্যাকগ্রাউন্ড আলাদা, তাই কাজের বিষয়ে স্পষ্টভাবে জানান কী চান, কখন চান। একই সঙ্গে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানানোর চেষ্টা করুন, যাতে ভুল বোঝাবুঝি না হয়।
ডিজিটাল কন্টেন্ট শেয়ার করলে অ্যাক্সেসিবিলিটি নিশ্চিত করুন — যেমন সাবটাইটেল, অডিও বিবরণ বা ট্রান্সক্রিপ্ট।
যদি আপনার দলে ভিন্ন ভাষার মানুষ থাকে, তাহলে আরও স্পষ্টভাবে কথা বলুন। ধীরে ও পরিষ্কারভাবে বোঝান। অন্যরা যেন বাদ না পড়ে, তাই সবার বোঝার মতো ভাষায় কথা বলুন।
যদি সম্ভব হয়, সবাইকে সাধারণ ভাষা (যেমন ইংরেজি) শেখার সুযোগ দিন। একইভাবে, এমন ভাষায় কথা বলা থেকে বিরত থাকুন যা সবাই বোঝে না—এতে কেউ নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে করতে পারে।
প্রত্যেক অফিসের আলাদা ড্রেস কোড থাকে। সাধারণভাবে নিয়ম দুটি: পরিষ্কার এবং পরিপূর্ণ পোশাক। অফিসে সাধারণত নোংরা বা খুব ক্যাজুয়াল পোশাক (যেমন ফ্লিপ-ফ্লপ বা স্লিভলেস) পরা ঠিক নয়, যদি না আপনার কর্মস্থল খুবই অনানুষ্ঠানিক হয়।
সব কর্মস্থলের আচরণগত নিয়ম একই নয়। কারও সংস্কৃতি, ধর্ম বা অভ্যাস অনুযায়ী তাদের শিষ্টাচার আলাদা হতে পারে। কেউ ভুল করলে ধরে নিন সেটা ইচ্ছাকৃত নয়; বরং বন্ধুভাবাপন্নভাবে জানিয়ে দিন কীভাবে আচরণটি উন্নত করা যায়।
যদি আপনি অফিসের ড্রেস কোড বা নীতি নির্ধারণ করেন, তাহলে পক্ষপাতহীনভাবে তা তৈরি করুন।
মিটিং শুরু হওয়ার আগে নিশ্চিত করুন সবাই আপনাকে দেখতে ও শুনতে পাচ্ছে কি না। প্রয়োজনে অংশগ্রহণকারীদের জন্য কয়েকটি সাধারণ টেক ট্রাবলশুট টিপস প্রস্তুত রাখুন।
ভিডিও মিটিংয়ে ক্যামেরা অন রাখুন (যদি আলাদা নির্দেশ না থাকে)। এতে বোঝা যায় আপনি মনোযোগ দিচ্ছেন। নিজে কথা বলা শেষ হলে মাইক্রোফোন মিউট রাখুন, যাতে পেছনের শব্দে অন্যরা বিরক্ত না হয়।
মিটিং, আলোচনা বা পার্টিতে অংশগ্রহণ করুন। যদি বস মতামত চান, তাহলে বিনয়ের সঙ্গে আপনার চিন্তা শেয়ার করুন। তবে Reply All দেওয়ার আগে ভাবুন—সবাই কি আসলেই সেই তথ্যের প্রয়োজন আছে?
অন্যের সময় ও জায়গার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন। ছুটি বা অসুস্থ অবস্থায় সহকর্মীদের বিরক্ত করবেন না, যদি একেবারে জরুরি না হয়। অন্যের ডেস্ক বা জিনিসপত্র অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করবেন না। প্রয়োজনে আগে জিজ্ঞেস করুন।
অফিস পার্টি বা আড্ডায়ও ভদ্রতা ভুলবেন না। রাজনীতি বা বিতর্কিত বিষয় এড়িয়ে চলুন, আর মদ্যপানের ক্ষেত্রে সীমা বজায় রাখুন।
এই নিয়মগুলো মানলে কর্মস্থলে আপনি শুধু পেশাদারই হবেন না, বরং সহকর্মীদের কাছেও সম্মান অর্জন করবেন। একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ ও আনন্দদায়ক কর্মপরিবেশ গড়ে তোলার শুরু এখান থেকেই।
সূত্র : প্রেপলি
মন্তব্য করুন