কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৪৯ পিএম
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২৪, ১০:৩০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বীর মুক্তিযোদ্ধা এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ। ছবি : সংগৃহীত
এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ। ছবি : সংগৃহীত

কিংবদন্তি কিলো ফ্লাইটের কমান্ডার, সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান, এয়ার ভাইস মার্শাল বীর সুলতান মাহমুদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে বুধবার বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটি ও ইউনিটের মসজিদসমূহে বাদ মাগরিব তার জীবনীর উপর আলোকপাত এবং বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সহকারী তথ্য অফিসার আয়শা ছিদ্দিকা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

আইএসপিআর জানিয়েছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ ১৯৪৪ সালের ১ আগস্ট তৎকালীন নোয়াখালী (বর্তমানে ফেনী) জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম নূরুল হুদা এবং মাতার নাম মরহুমা আনকুরেন্নেছা বেগম। তিনি ঢাকার আরমানিটোলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৬০ সালে পাকিস্তান সারগোদার পিএএফ পাবলিক স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন ও ১৯৬২ সালে পাকিস্তান রিসালপুরের পিএএফ একাডেমি থেকে এফএসসি এবং ১৯৭৭ সালে যুক্তরাষ্টের এয়ার স্টাফ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

তিনি ১৯ আগস্ট ১৯৬০ সালে তদানীন্তন পাকিস্তান বিমানবাহিনী একাডেমিতে যোগদান করেন এবং ১ জুলাই ১৯৬২ সালে জিডি (পি) শাখায় কমিশন লাভ করেন। এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ ছিলেন একজন চৌকস বৈমানিক। চাকরিকালীন কর্মকর্তা দেশ বিদেশে বিভিন্ন পেশাগত কোর্সে অংশগ্রহণ করেন এবং সফলতার সাথে তা সম্পন্ন করেন।

এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ, বীর উত্তম ১৯৭১ সালে দেশপ্রেমের অদম্য চেতনায় মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অর্জন করেন লাল-সবুজের পতাকা। বীর মুক্তিযোদ্ধা তৎকালীন স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদের বীরত্বগাঁথা এ মহান ইতিহাসের এক অনুকরণীয় অধ্যায়।

তৎকালীন স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের অদম্য ইচ্ছায় পাকিস্তান বিমানবাহিনী ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে ২ নং সেক্টরে (মতিনগর ও মেলাঘর) স্থলযুদ্ধে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি ১নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। একজন বৈমানিক হওয়া সত্তে¡ও স্থলযুদ্ধে তিনি অদম্য সাহসের সাথে রামগড় থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত অসংখ্য দুঃসাহসিক অপারেশন পরিচালনা করেন। গেরিলা কমান্ডার হিসেবে তার পরিচালিত বড় একটি অভিযান হলো চট্টগ্রামের মদুনাঘাটে বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন ধ্বংস ও চট্টগ্রাম এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা। এই স্থলযুদ্ধ চলাকালে তিনি ডান হাঁটুতে শত্রুর বুলেটবিদ্ধ হয়েছিলেন।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা তৎকালীন স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদ সুস্থ হয়ে ১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তারিখে ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে নবগঠিত 'কিলো ফ্লাইট' এর অধিনায়কত্ব গ্রহণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করেন। তিনি পাইলট ইন কমান্ড হিসেবে ১৯৭১ সালের ০৩ ডিসেম্বর মধ্যরাতে অ্যালুয়েট-ওওও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল তেল ডিপো ধ্বংস করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রথম বিমান আক্রমণ অভিযানের সূচনা করেন। তার চৌকষ অধিনায়কত্বে কিলো ফ্লাইট স্বল্পসময়ের মধ্যে মোট ৫০টি দুঃসাহসিক বিমান অভিযান সাফল্যের সাথে পরিচালনা করে। তন্মধ্যে তিনি ২৫টি অভিযানে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। আকাশ হতে পরিচালিত এ সকল অভিযানসমূহ শত্রুর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংসের পাশাপাশি তাদের মনোবল দুর্বল করে যা আমাদের বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বীর মুক্তিযোদ্ধা তৎকালীন স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদ যুগপৎভাবে স্থলযুদ্ধে দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা, নবগঠিত বিমান বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান এবং আকাশযুদ্ধে অকুতোভয় আক্রমণ পরিচালনা করার মাধ্যমে দেশপ্রেমের এক অনন্য নজির স্থাপন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশাত্মবোধ ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য তৎকালীন স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদকে 'বীর উত্তম' খেতাবে ভূষিত করা হয়।

পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেন এবং অত্যন্ত সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সমূহ পালন করেন। এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ ১৯৮১ সালের ২৩ জুলাই বিমানবাহিনী প্রধানের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং ১৯৮৭ সালের ২৩ জুলাই বিমান বাহিনীর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ, বীর উত্তম, এসিএসসি (অব.)-কে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় তার অনন্য সাধারণ ভূমিকা, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে একটি সুসংগঠিত ও কার্যকরী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা এবং পরবর্তীকালে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থেকে দেশ গঠনে তার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ 'স্বাধীনতা পুরস্কার-২০১৮'-এ ভূষিত করে।

তিনি ৩৬ বছর ২২ দিন অবসর ভোগের পর ১৪ আগস্ট ২০২৩ তারিখে আনুমানিক রাত ৮টা ১০ মিনিটে নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর ১৪ দিন। তিনি স্ত্রী, ০১ কন্যা, ০১ পুত্র এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চবির দুই হল সংসদের ফল পুনর্গণনার ঘোষণা

টিভিতে আজকের খেলা

ঢাকার যেসব এলাকায় আজ মার্কেট বন্ধ 

চট্টগ্রামে ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণে ভবনে আগুন

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল আজ, জানা যাবে যেভাবে

১৬ অক্টোবর : আজকের নামাজের সময়সূচি

ঢাবির শোক দিবসে জগন্নাথ হল স্মৃতিসৌধে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বালন

চাকসুতে জয় পেলেন সাদিক কায়েমের ভাই আবু আয়াজ

চাকসুতে ২৬ পদের ২৪টিতেই শিবিরের জয়

চাকসুতে ভিপি ও জিএস পদে শিবির, এজিএস পদে ছাত্রদল জয়ী

১০

স্লোগানে-স্লোগানে ফের উত্তাল চবি

১১

আরও তিন হলে ভিপি-জিএসে ছাত্রশিবির এগিয়ে

১২

চাকসুতে কেন্দ্রীয় সংসদে দুই পদে এগিয়ে ছাত্রশিবির, একপদে ছাত্রদল

১৩

চবিতে আরও দুই হলের ফল ঘোষণা

১৪

কারচুপি হলে বাংলাদেশ অচল করে দেবে ছাত্রদল: রাকিব

১৫

সোহরাওয়ার্দী হলে ভিপি-জিএসে এগিয়ে শিবির

১৬

সোহরাওয়ার্দী হলে পুনরায় ভোট গণনার দাবিতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ

১৭

আরেক হলের ফল ঘোষণা, তিন পদেই এগিয়ে ছাত্রদল

১৮

হাসপাতালে খালেদা জিয়া

১৯

ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন গ্রেটা থুনবার্গ

২০
X