জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রস্তুতের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে নিতে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০২৩’-এর খসড়ায় চূড়ান্তভাবে সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ফলে আইনটি সংসদে পাস হলে এনআইডি সেবা আর ইসির কাছে থাকবে না। এ ছাড়া আইনটি কার্যকর হলে নাগরিকদের পরিচয়ের জন্য একটিই নম্বর দেবে সুরক্ষা সেবা বিভাগ।
সোমবার (১২ জুন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ফিরে বিকেল সাড়ে ৩টায় প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আইনের অধীনে একটি নিবন্ধক অফিস থাকবে। তারা জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের কাজ করবে। নিবন্ধক অফিস যদি মনে করে তাহলে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় নিবন্ধকের কার্যালয় থাকবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঠিক কবে নাগাদ এটা আইনে পরিণত হবে, সেটা আমি জানি না। তবে আমরা চাই দেশের সব নাগরিকের একটাই নম্বর থাকুক। আমরা সেদিকেই যাচ্ছি।
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দিতে নিবন্ধন আইনের খসড়া এক বছর আগেই মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। প্রায় এক বছর পর খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদন দিল মন্ত্রিসভা।
সাধারণত কোনো আইন সংসদে পাস হলেই কার্যকর হয়। তবে এ আইনের বেলায় তা হবে না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, এ আইনটি সংসদে পাস হলেও এখনই কার্যকর হবে না। সরকার যখন মনে করবে, তখন এ আইন কার্যকর হবে। এ আইন কার্যকর হলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এনআইডিসংক্রান্ত দায়িত্ব হবে শুধু ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা। নাগরিকের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলে তারা তাকে ভোটার তালিকায় যুক্ত করবেন। আর নাগরিকরা জন্মের পরপরই নিবন্ধন করে ফেলতে পারবেন; যা করতে হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে।
প্রসঙ্গত, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম ইসির পরিবর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগকে দিতে ২০২১ সালের ১৭ মে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে চিঠি পাঠায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ২৪ মে ইসি সচিব ও সুরক্ষাসেবা বিভাগ সচিবের কাছে চিঠি পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
ওই চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন দেশের উদাহরণের সুরক্ষাসেবা বিভাগ ওই দায়িত্ব পালনে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ। এনআইডি নিবন্ধনসংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সুরক্ষা সেবা বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। চিঠিতে সুরক্ষাসেবা বিভাগের দায়িত্বের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনসংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ‘রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬’-এর রুল ১০ অনুসরণে এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ২০১৮ সালের ২ আগস্ট জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠিতে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০১০’-এ নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তে ‘সরকার’ শব্দ অন্তর্ভুক্তকরণসহ প্রয়োজনীয় সংশোধনের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এ ছাড়া সুরক্ষা সেবা বিভাগের এনআইডি নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল নির্বাচন কমিশন থেকে সুরক্ষাসেবা বিভাগে হস্তান্তরের ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়। ২০২১ সালের ৮ জুন জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম নিজেদের কাছে রাখার বিষয়ে অবস্থান তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেয় ইসি। ওই চিঠিতে ইসি জানায়, এনআইডির কাজ অন্য বিভাগে গেলে ভোটার তালিকা করা ও তা হালনাগাদ এবং নির্বাচনসহ বিভিন্ন সমস্যা হবে। সরকারের এ পদক্ষেপকে তখন ‘সংবিধানবিরোধী’ বলেও আখ্যা দেয় ইসি। এরপর গত বছরের ২০ জুন কমিশনকে আরেকটি চিঠি দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
চিঠিতে বলা হয়, ১৭ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাঠানো পত্রের আলোকে সরকার জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম আইনানুগভাবে নির্বাচন কমিশন থেকে সুরক্ষাসেবা বিভাগে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মন্তব্য করুন