কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে অবহেলা, অসদাচরণ, অদক্ষতা ও দুর্নীতির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমানকে চেয়ারে বসিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী এই প্রকৌশলী এতদিন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার আস্থাভাজন হিসেবে পরিচয় দিতেন। এ ছাড়া মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প, সিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়মসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আশিক ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ের পরিচালক ছিলেন।
প্রত্যেক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার বেলা ১১টার দিকে প্রকৌশলী আশিকুর রহমানকে নিয়ে নগর ভবনে আসেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির একজন প্রভাবশালী নেতার অনুসারীরা। ওই নেতা ভবিষ্যতে দক্ষিণ সিটির মেয়র হতে চান। এতে নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাবেক সদস্য মুকিতুল হাসান রঞ্জু, স্বেচ্ছাসেবক দলের মহানগর সাবেক নেতা মেহেদী হাসান লিটু, শ্রমিক দলের নেতা আরিফুজ্জামান প্রিন্স। নগরভবনে প্রবেশকালে সামনে ছিলেন আশিকুর রহমান এবং তার পেছনে ছিলেন বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মী। এরপর আশিককে নিয়ে প্রধান প্রকৌশলীর রুমে যান নেতাকর্মীরা। সেখানে আশিককে একে একে ফুলেল শুভেচ্ছাও জানান তারা। পরে যুবদলের সাবেক নেতা মুকিতুল হাসান রঞ্জুকে ধাওয়া দেন বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীরা। আশিকুর রহমান প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে বসার পরে বিএনপির নেতাকর্মীরা করপোরেশনের বিভিন্ন প্রকৌশলীর রুমে যান। সেখানে প্রত্যেককে গালিগালাজ এবং হুমকি-ধমকি দেন। আশিককে মেনে নিতে অনেকেকে শাসাতে থাকেন। এ সময় পুরো নগরভবনজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত নগর ভবনের বিভিন্ন প্রান্তে বিএনপির নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে শোডাউন দেন।
জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সহ প্রচার সম্পাদক মো. শরিফ হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘বরখাস্তকৃত প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমানকে অবৈধভাবে চেয়ারে বসানো হয়েছে। রোববার তার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে শুনানি হয়েছে। কিন্তু তিনি নাকি কোর্ট থেকে একটা অর্ডার নিয়ে এসেছেন। অথচ মন্ত্রণালয় থেকে কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি। তিনি বহিরাগতদের নিয়ে এসে জোরপূর্বকভাবে বসেছে। সাবেক মেয়র তাপসের সময় তিনি অনেকের চাকরি খেয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের এজেন্ট। মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেও আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে জোরপূর্বক চাকরিচ্যুত করে এই প্রকৌশলী। তাকে বসানোর জন্য এখন বিএনপির বড় বড় নেতারা সুপারিশ করছে।’
ডিএসসিসি প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আশিকুর রহমানের ঐচ্ছিক অবসরের আবেদন গ্রহণ না করে অযোগ্যতা ও দূর্নীতির অভিযোগে সাময়িক বহিষ্কার করে। আশিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার প্রকল্পে তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক থাকাকালে দুর্নীতির আশ্রয় নেন তিনি। ওই সময় নির্মাণ প্রকল্প ব্যয় ৮শ কোটি টাকা ছিল। প্রকল্প পরিচালক সেই ব্যয় প্রায় ২২শ কোটি টাকা করেন। এ ছাড়া মতিঝিল সিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পে অসম চুক্তি করেন। এই প্রকল্পে ৭৮ ভাগ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এবং মাত্র ২২ ভাগ পায় সিটি করপোরেশন। এমন অসম চুক্তি করলেও আশিকুরের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একই ধরনের আরেকটি প্রকল্প সানমুন টাওয়ার নির্মাণ। এই প্রকল্পে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান পায় ৭৫ ভাগ এবং করপোরেশন পায় ২৫ ভাগ। এই ঘটনায় মামলা হয় তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এবং প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শিহাবউল্লাহর বিরুদ্ধে। ওই মামলায় দীর্ঘদিন জেল খাটেন প্রকল্প পরিচালক। একই ধরনের দুর্নীতি করেও মেয়র তাপসের ছায়ার কারণে রেহাই পেয়ে যান সিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক আশিকুর রহমান। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক থাকাকালে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি, চাকুরিচ্যুতসহ দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
মন্তব্য করুন