কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:০০ পিএম
আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:০৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

প্রতিদিন টাকা নেওয়া হচ্ছে ট্রাক ভরে

টাকা। ছবি : সংগৃহীত
টাকা। ছবি : সংগৃহীত

আমানতের চাপে কোনো কোনো ব্যাংকের ভল্টে টাকা রাখার জায়গা নেই। সীমার বেশি টাকা জমা পড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিচ্ছে এ সব ব্যাংকের অনেক শাখা। প্রতিদিন এ সব টাকা ট্রাক ভরে নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। গত দুই সপ্তাহে বিভিন্ন ব্যাংক ৮৫ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা দিয়েছে।

গত ১ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে আট হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা জমা হয়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তা ছিল ছয় হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ৮৫ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা জমা হয়েছে। তবে নতুন করে ৮৩ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা ধার নিয়েছে সংকটে থাকা কিছু ব্যাংক।

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) বাংলাদেশি গণমাধ্যম কালের কণ্ঠের একটি একটি প্রতিবেদনে এ সব তথ্য তুলে ধরা হয়।

হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ব্যাংক খাতের লুটপাটের চিত্র প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী সুবিধাভোগীদের লুটপাটের শিকার ব্যাংকগুলো তীব্র তারল্য সংকটে পড়েছে। ব্যাংক লুটপাটের তথ্য প্রকাশিত হতে শুরু করলে গ্রাহকের টাকা উত্তোলনের চাপ সামাল দিতে পারছে না ডজনখানেক ব্যাংক। তাদের বিভিন্ন উৎস থেকে ধার করে চলতে হচ্ছে। এ ব্যাংকগুলো সরকার পতনের পর কয়েক দিন নিয়মিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছিল। দৈনিক চাহিদা মেটাতে ধার করেছে অন্য ব্যাংক থেকেও।

তবে গেল দুই সপ্তাহে ব্যাংকগুলো যত টাকা নিয়েছে, তার চেয়ে বেশি জমা করেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিটি ব্যাংকের শাখায় ভল্টের একটি নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারিত। সীমার বেশি টাকা এলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সোনালী ব্যাংকের চেস্ট শাখায় জমা করতে হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বর্তমানে নোটস ইন সার্কুলেশন বা প্রচলনে থাকা টাকার পরিমাণ কমে গত ৩ অক্টোবর তিন লাখ ১০ হাজার কোটিতে নামে। গত ১৫ আগস্ট তা ছিল তিন লাখ ২২ হাজার ৬১ কোটি টাকা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে টাকা উত্তোলনের চাপ বেড়েছিল ব্যাংকে। তাই ওই সময় মানুষের হাতে টাকার পরিমাণ বেড়েছিল। সেটি আবারও ব্যাংকিং চ্যানেলে ফেরত আসতে শুরু করেছে। সাধারণত নোটস ইন সার্কুলেশন বা মানুষের হাতে প্রচলিত টাকার পরিমাণ থাকে দুই লাখ ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি। ব্যাংকের ওপর আস্থা ধীরে ধীরে বাড়লে টাকা আরও ফেরত আসবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, সার্কুলেশনে থাকা নোটের মধ্যে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে সারা দেশে ১১ হাজারের মতো ব্যাংক শাখার ভল্টে ১৬ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার মতো জমা থাকে। সার্কুলেশনে থাকা বাকি টাকা রয়েছে নাগরিকদের পকেট, ঘরের আলমারি, সিন্দুক কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।

জানা গেছে, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন উপায়ে অর্জিত অর্থ বিভিন্নভাবে ঘরে রেখেছিলেন অনেকে। তবে সরকার পরিবর্তনের পর তাদের বেশির ভাগ পলাতক। বর্তমানে তাদের কেউ কেউ ঘরে টাকা রেখে বিপদে আছেন। ফলে নিরাপদ বোধ না করায় বিভিন্নভাবে তারা ভালো ব্যাংকে টাকা জমা রাখছেন।

আবার সরকার পতনের পর থেকে বড় অঙ্কের নগদ টাকা তুলতে পারছে না মানুষ। এর কারণ, সরকার পতনের প্রথম সপ্তাহে দিনে সর্বোচ্চ এক লাখ, দ্বিতীয় সপ্তাহে দুই লাখ এবং তৃতীয় সপ্তাহে তিন লাখ টাকা নগদ উত্তোলনের সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এখন অবশ্য সে সীমা তুলে দেওয়া হয়েছে। তার পরও সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক থেকে অনেকে বড় অঙ্কের আমানত তুলতে পারছেন না। বিশেষ করে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, বাংলাদেশ কমার্স ও ইউনিয়ন ব্যাংকের বিপুল অঙ্কের পে-অর্ডার নগদায়নের অপেক্ষায় রয়েছে।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগের মতো টাকা ছাপিয়ে তারল্য সহায়তা দেবে না। তবে ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক মুদ্রা সরবরাহের মাধ্যমে এ সহায়তা নিতে পারে।

জানা গেছে, নামে-বেনামে ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে পাচারের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা। নামে-বেনামে টাকা বের করে নেওয়ায় তীব্র তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে ব্যাংকগুলোয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে যেসব ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়েছে সেগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ব্যবস্থায় তারল্য সহায়তা দিতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে এ সব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে তারল্য সংকটের কারণে ক্ষুদ্র আমানতকারীরা আতঙ্কিত হয়ে টাকার জন্য ব্যাংকগুলোতে যাচ্ছেন। টাকা না পাওয়ায় অনেক অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার আত্মগোপনে চলে যান। এরপর গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। তিনি যোগ দিয়েই ব্যাংক খাতের সংস্কারে মনোযোগ দেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নেতা নয় নীতির পরিবর্তন চাই : মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম

সম্মেলন শেষে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করলেন তাবলীগ অনুসারীরা 

ঘরে বসে ১০ অক্টোবর পাসপোর্টের জন্য আঙুলের ছাপ দেন শিরীন

বিএনপিকে ঠেকাতে ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো তৎপর : শরীফ উদ্দীন জুয়েল

রাষ্ট্রকে নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ করেছিলেন শেখ হাসিনা : যুবদল সম্পাদক

সবাই বাড়ির কাছে রেলস্টেশন চায় : রেলপথ উপদেষ্টা

পুরোনো জিনস দিয়ে পলিথিনের বিকল্প ব্যাগ তৈরি খুবি শিক্ষার্থীদের

মতলব উত্তরে লাথি মেরে কৃষককে হত্যার অভিযোগ

তীব্র আন্দোলনের ডাক সিলেটের চা শ্রমিকদের

মানবপাচার তদন্তে ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারে মালয়েশিয়াকে বাংলাদেশের অনুরোধ 

১০

আগামী প্রজন্মের জন্য ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য করতে হবে : ইশরাক

১১

‘দেশপ্রেমিক চিকিৎসকরা নিজের ক্যারিয়ার ভুলে দেশের সেবা করছেন’

১২

জমি নিয়ে বিরোধ, সংঘর্ষে আহত ২৫

১৩

বগুড়ায় জমি নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহত কৃষক

১৪

দেশে ধর্ষণ ও গণপিটুনি বেড়েছে : মানবাধিকার কমিশন

১৫

৪৭ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাসহ ৪০৪৪ কেজি পলিথিন জব্দ

১৬

চাঁদপুরে ছাত্রদল নেতাকে কুপিয়ে জখম

১৭

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ৯ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

১৮

জাতিসংঘ থেকে ইসরায়েলের বহিষ্কার চায় মালয়েশিয়া

১৯

সিরাজগঞ্জে চাঁদা তোলার সময় সেনাবাহিনীর হাতে আটক ৭

২০
X