শুক্রবার, ২৯ আগস্ট ২০২৫, ১৪ ভাদ্র ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘জাতিসংঘে ইয়েস মুশফিক শব্দটি আমাকে আন্দোলনে অনুপ্রাণিত করেছে’

ঢাকা কলেজ অডিটোরিয়ামে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত কবি ও লেখকদের গল্প’  শীর্ষক অনুষ্ঠানে অতিথিরা। ছবি : সংগৃহীত
ঢাকা কলেজ অডিটোরিয়ামে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত কবি ও লেখকদের গল্প’  শীর্ষক অনুষ্ঠানে অতিথিরা। ছবি : সংগৃহীত

জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিকের কণ্ঠে ‘ইয়েস মুশফিক’ শব্দে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনে আহত লেখক সালেহ আহমেদ খসরু।

তিনি বলেন, যখন প্রশ্নোত্তর পর্বে স্টেট ডিপার্টমেন্ট বা জাতিসংঘে স্টিফেন ডুজারিক বলতেন ইয়েস মুশফিক, এই যে মুশফিক শব্দ- সেটি আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করত। তখন ভাবতাম আমারই তো লড়তে হবে।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) ঢাকা কলেজ অডিটোরিয়ামে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত কবি ও লেখকদের গল্প’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে নিজের এই অনুভূতি প্রকাশ করেন সালেহ আহমেদ খসরু।

অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে আহত হওয়া কবি, লেখকদের আন্দোলনের দিনগুলোর কথা তুলে ধরা হয়। এই পর্বে বিভিন্ন বয়সের ১৭ জন লেখক ও কবি তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি ছোট বই প্রকাশ করেছে কালের ধ্বনি। অনুষ্ঠানে এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। পরে ছিল অভ্যুত্থানপরবর্তী পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে আলোচনা।

অভ্যুত্থানে আহত কবি ও লেখকদের মধ্যে অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন হাসান আফিফ, শাহ হুজাইফা ফেরদৌস, হাসান ইমাম, মাসুক নুর, শেরিফ ফারুকী, হাসনাত আবদুল্লাহ, কাদের মাজহার, ইব্রাহিম নিরব, তুহিন খান, আল নাহিয়ান, মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ, মোরশেদ আলম, চঞ্চল বাশার, আক্তার জামান, হানিফ মোল্লা ও সালেহ আহমদ খসরু। সংগীত পরিবেশন করেন রিয়াজুল ইসলাম ও পার্শা মাহজাবিন। সঞ্চালনা করেন কালের ধ্বনির সম্পাদক কবি ইমরান মাহফুজ ও লেখক জুবায়ের ইবনে কামাল।

সালেহ আহমেদ খসরু বলেন, আমার অনুভূতি ব্যক্ত করার কথা বলা হয়েছে যে- আমি কেন অনুপ্রাণিত হলাম এই জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে। এখানে বসে আছেন ডক্টর আলী রীয়াজ। আমি আপনাকে ভীষণ সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি। আপনার প্রতিটি কর্ম আমি দেখেছি। আর আমি অনুপ্রাণিত হতাম আপনারই একজন প্রিয় মানুষ ডক্টর রীয়াজ দ্য ওয়ান ম্যান আর্মি মুশফিকুল ফজল আনসারী। যখন প্রশ্নোত্তর পর্বে স্টেট ডিপার্টমেন্ট বা জাতিসংঘে স্টিফেন ডুজারিক বলতেন ইয়েস মুশফিক, এই যে মুশফিক শব্দটি- সেটি আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করত। তখন ভাবতাম, আমারই তো লড়তে হবে। ৬৪ বছর বয়সে কতটুকু লড়াই করা যায়, কিন্তু লড়াই করেছি, গুলি খেয়েছি- তার চেয়ে সৌভাগ্যের কী হতে পারে?

অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘ভয়ের সংস্কৃতি কেটে গেছে, প্রশ্ন করার মতো মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে । গণঅভ্যুত্থানের যে লক্ষ্য ছিল, তা এখন বাস্তবায়ন করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে যে বিস্ময়কর অর্জন সম্ভব হয়েছে, তা অবশ্যই ধরে রাখতে হবে। ছাত্র-জনতা জীবন উৎসর্গ করে আমাদের হাতে এই অর্জনকে জিম্মা হিসেবে দিয়ে গেছে। অভ্যুত্থানের যে লক্ষ্য ছিল, তা এখন বাস্তবায়ন করতে হবে। আসুন, সবাই মিলে এই বড় কাজ সুসম্পন্ন করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যেই অনেকের মনে হয়তো নানা প্রশ্নের উদয় হয়েছে, হতাশা এসেছে। তা আসতেই পারে, সে জন্য আমাদের প্রশ্ন করতে পারেন। ভয়ের সংস্কৃতি কেটে গেছে। প্রশ্ন করার মতো মুক্ত পরিবেশ এখন সৃষ্টি হয়েছে।’

আলী রীয়াজ বলেন, বিগত স্বৈরশাসক ৪টি খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে ছিল। প্রথমত, তারা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করে ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি করেছিল। দ্বিতীয়ত, তারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নিজেদের পছন্দমতো একটি ‘চেতনার বয়ান’ তৈরি করেছিল এবং স্তাবক লেখক, বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিসেবীদের দিয়ে সেই বয়ানের পক্ষে অনবরত সাফাই গাইয়ে একটি প্রভাব সৃষ্টি করেছিল। তৃতীয়ত, গণমাধ্যমগুলো গণমাধ্যমের চরিত্র অনুসারে কাজ করতে পারেনি। কারণ, গণমাধ্যমের মালিকও নানাভাবে স্বৈরাচারের সঙ্গে বহু ধরনের ব্যবসায়িক সম্পর্কে যুক্ত থেকে গণমাধ্যমগুলোকে সেই সব ব্যবসার স্বার্থ সুরক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছে। চতুর্থ শক্তিটি হলো, দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে বিদেশের প্রভাব ব্যবহার করে ব্যক্তিগতভাবে নিজেদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা। এ ক্ষেত্রে সরাসরি ভারত ও প্রচ্ছন্নভাবে চীনের প্রভাব কাজ করেছে।

তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর যেন এর আকাঙ্ক্ষা ব্যর্থ হয়ে না যায়, কোনোভাবেই স্বৈরতন্ত্র ফিরে আসতে না পারে- সে জন্য শক্তির এই চার উৎসের আমূল সংস্কার করতে হবে, পরিবর্তন করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে আলোচনায় আরও অংশ নেন মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, কাজল রশীদ, মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন, আমিরুল মোমেনীন। অতিথি বক্তা ছিলেন গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়েজী, নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক লতিফুল ইসলাম, চিকিৎসক সাকিরা পারভিন, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও ছাত্রলীগের নির্যাতনে নিহত বুয়েটশিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের ভাই আবরার ফাইয়াজ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আন্তর্জাতিক ফেলোশিপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন ছাত্রদলের ঊর্মি

স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপারের মায়ের মৃত্যুতে প্রেস ক্লাবের শোক

প্রকৌশলীদের মর্যাদা রক্ষায় আইইবি’র ৫ দফা দাবি

পুলিশের গাড়িতে হামলা চালিয়ে আসামি ছিনতাই

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের লিগপর্বের ড্র অনুষ্ঠিত, রিয়াল-বার্সার প্রতিপক্ষ কারা?

সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ভিডিওটি ভুয়া

আজীবন থাকা, কাজ ও ব্যবসার সুযোগ দেবে সৌদি, কত টাকা লাগবে

ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

এবার যুক্তরাজ্য থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের 

১০

ফিফা কোয়ালিফায়ারে শেষবারের মতো নামছেন মেসি, জানালেন নিজেই

১১

অপারেশন থিয়েটারে রোগীকে রেখে স্বাস্থ্যকর্মীর টিকটক, অতঃপর...

১২

গকসু নির্বাচন : রেকর্ডসংখ্যক মনোনয়ন বিতরণ 

১৩

চট্টগ্রামে হবে আইইসিসি মাল্টিডেস্টিনেশন এডুকেশন এক্সপো 

১৪

চব্বিশের বিজয়ীদের কার্যকলাপে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ : কাদের সিদ্দিকী

১৫

ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে হামলার আশঙ্কা নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৬

প্যানেলে তন্বির জন্য পদ শূন্য রাখলেও একই পদে লড়ছেন বাগছাসের এক নেতা

১৭

বিশ্বকাপ বাছাইয়ের শেষ দুই ম্যাচের জন্য আর্জেন্টিনা দল ঘোষণা

১৮

আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে নতুন রাজনৈতিক জোট

১৯

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় বিএনপি অঙ্গীকারবদ্ধ : এনামুল হক চৌধুরী

২০
X