যারা সিটি করপোরেশনের কীটনাশকের সমালোচনা করছেন তারা কেউ কীটতত্ত্ববিদ নন, তারা ব্যবসায়ী বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
বুধবার (২৩ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের আশেপাশে বিশেষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ঢালাওভাবে বলা যে, এটা কাজ করছে না, ওটা করছে না—আমার ফলাফলই তো আমাকে বলে দিচ্ছে কোনটা কাজ করছে! আমার কীটনাশক যদি কাজ না করতো তাহলে এই ভরা মৌসুমে ১০০ এর নিচে রোগী রাখা; কোনো দেশই তো পারছে না! যারা এই কথাটা বলছেন, ওনারা আসলে কীটতত্ত্ববিদ না। ওনারা আসলে বিভিন্ন কীটনাশক বিক্রি করে চক্র সৃষ্টি করেছিলেন ঢাকা সিটি করপোরেশনে। ওনারা সেই একটি চক্রের অংশ বিশেষ।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, এখন ডেঙ্গু রোগের ভরা মৌসুম। এ সময় তা ঊর্ধ্বগামী হওয়ার কথা। কিন্তু আপনারা লক্ষ্য করেছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও বলছে, ঢাকা শহরে ডেঙ্গু রোগ এখন স্থিতিশীল। আমাদের রোগীর সংখ্যা আমরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পেরেছি। গতকালও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা একশর নিচে ছিল। ভরা মৌসুমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত দুরূহ হলেও আমরা কাজটি করে চলেছি। এজন্য ঢাকাবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সহায়তা আমাদের একান্তই কাম্য।
সপ্তাহে ১০ জনের বেশি ডেঙ্গুরোগী পেলে ওয়ার্ড ‘লাল চিহ্নিত’
মেয়র তাপস জানান, এক সপ্তাহে কোনো ওয়ার্ডে ১০ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেলে, সেই ওয়ার্ডকে ‘লাল চিহ্নিত’ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে ৫, ২২, ৫৩ ও ৬০ নম্বর ওয়ার্ডে গত এক সপ্তাহে আমরা ১০ জনেরও বেশি রোগী পেয়েছি। তাই এই চারটি ওয়ার্ডে আগামী শনিবার অভিযান পরিচালনা করব। এরপরে যদি আমরা দেখি যে, অন্য কোনো ওয়ার্ডে বা একাধিক ওয়ার্ডে এক সপ্তাহে দশ জনের বেশি রোগী আসছে, তাহলে আমরা সে ওয়ার্ডগুলোতেও পরের শনিবারে বিশেষ এই অভিযান পরিচালনা করব।
শেখ তাপস বলেন, এভাবে এডিস মশাকে পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। সেজন্য এলাকাবাসীকে পূর্ণমাত্রায় সম্পৃক্ত হতে হবে। তাহলে আমাদের এই কার্যক্রম আরও ব্যাপক সফলতা লাভ করবে। আমরা এলাকাবাসীকে সম্পৃক্ত করব।
তিনি বলেন, এখন থেকে সপ্তাহের প্রতি শনিবার করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মশককর্মীসহ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সব স্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এবং জনগণের সহযোগিতায় এই অভিযান পরিচালনা করা হবে। যার মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার করতে পারব।
ডিএসসিসি মেয়র বলেন, যে ওয়ার্ড লাল চিহ্নিত ঘোষণা করা হবে সেখানকার বাসিন্দা ও সব হোল্ডিং-স্থাপনার মালিকদের আমরা আহ্বান করছি, তারা যেন নিজ নিজ বাসাবাড়ি, স্থাপনা, আঙিনা নিজেরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন। আমরা এলাকাবাসীর দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রার্থনা করছি। সেদিন কেউ কাজে যাবেন না। এটাই সবচেয়ে বড় কাজ হবে।
তিনি বলেন, আমরা যদি নিজেদের জীবন সুরক্ষিত রাখতে চাই, তাহলে এটাই হবে আমাদের গুরু দায়িত্ব। আমাদের এই কর্মসূচিতে আপনারা অংশগ্রহণ করবেন। আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মশককর্মী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা থাকবে। আমরা দিনব্যাপী চিরুনি অভিযান পরিচালনা করে এডিস মশার উৎসস্থলগুলোকে ধ্বংস করব। যার মাধ্যমে আমরা ডেঙ্গু রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব।
২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রহিম, করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান প্রমুখ।
মন্তব্য করুন