সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ, ২০২৫ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম। মঙ্গলবার (২৭ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় এ দাবি জানান তারা।
সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম জানায়, গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি (অধ্যাদেশ), ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে মর্মে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি, ১৯৭৯ সালের বিতর্কিত ধারাগুলো পুনরায় চালু করেছে।
উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত খসড়ায় যা উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো- এমন কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন, যার কারণে অন্য যে কোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য (insubordination) সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে; অন্য কর্মচারীদের সাথে সমবেতভাবে বা এককভাবে, ছুটি ব্যতীত বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ব্যতীত, নিজ কর্ম হতে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন; অন্য যে কোনো কর্মচারীকে তার কর্ম হতে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তার কর্তব্য পালন না করার নিমিত্ত উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন; যে কোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহলে তিনি অসদাচরণের দায়ে দণ্ডিত হবেন।
বার্তায় বলা হয়, উল্লিখিত ধারায় দোষী কর্মচারীকে নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ/চাকরি হতে অপসারণ/চাকরি হতে বরখাস্ত দণ্ড প্রদান করা যাবে। এ আইন জারি হলে- বিভাগীয় মামলার পরিবর্তে শুধু একটি লেটার দিয়ে চাকরিচ্যুতি বা দণ্ড প্রদান করা হবে; কতিপয় স্বার্থবাদী কর্মকর্তাদের নিকট কর্মচারীরা ব্যক্তিগত দাসত্বে পরিণত হবে। ক্ষমতার অপব্যবহার বেশি হবে। বিভিন্ন কারণে অপছন্দের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মক্ষেত্রে নাজেহাল হবে। চাকরি হারানোর সুযোগ তৈরি হবে। যাকে দেখতে নারি বা অপছন্দ কিংবা বিরুদ্ধবাদী উচ্চারিত হলে কর্মকর্তার রোষানলে পতিত হবেন; একজন অভিযোগকারী কর্মকর্তা নিজেই তদন্তকারী ও বিচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন; ভয়-ভীতির কারণে সরকারি কাজের পরিবেশ বিঘ্নিত হবে।
এ ছাড়া নারী সহকর্মীরা ভীত-সন্ত্রস্তের মাঝে কাজ করতে হবে; কেউ কেউ রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণেও চাকরিতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। এমনকি কেউ কেউ ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের কারণেও কর্মকর্তার রোষানলে পড়তে পারেন; দেশ ও জাতির সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কর্মচারীদের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা সংকুচিত হবে। কর্মচারীদের ন্যায্যতা-প্রাপ্যতার দাবিগুলোর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দারুণভাবে বাধার সৃষ্টি করবে; জারিকৃত অধ্যাদেশটি ব্যাপকভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার নিঃসন্দেহে বেশি হবে; এ অধ্যাদেশের আওতায় কেউ শাস্তি পেলে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন না।
সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম আরও জানায়, সরকারি কর্মচারীরা রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি। এদের অহেতুক বিপথগামী করবেন না। শতকরা ৯০ ভাগ কর্মচারীর কোনো রাজনৈতিক চ্যাপ্টার নেই। মুষ্টিমেয় কতিপয় কর্মচারীর কৃতকর্মের দায়ভার সবার ওপর চাপিয়ে দিবেন না। উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদিত খসড়া আইনটি সংবিধানের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক ও পরস্পর বিপরীতমুখী। কেননা, সংবিধানের অনুচ্ছেদ-১৯ এর সুযোগের সমতা বিনষ্ট হবে; অনুচ্ছেদের ২১-এর নাগরিক ও সরকারি কর্মচারীদের কর্তব্য পালনে বিঘ্ন সৃষ্টি হবে; অনুচ্ছেদের ২৭-এর আইনের দৃষ্টিতে সমতার ভারসাম্যতা বিনষ্ট হবে; অনুচ্ছেদের ৩১-এর আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার ক্ষুন্ন হবে; অনুচ্ছেদের ৩৭-এর সমাবেশের স্বাধীনতা থাকবে না, অনুচ্ছেদে ৩৯-এর প্রজাতন্ত্রে নিয়োজিত কর্মচারীদের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হবে।
তারা আরও জানায়, ১৯৭৯ সালের বিতর্কিত কালো আইন ও কালা-কানুন অবিলম্বে বাতিল না হলে- বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ণ হবে। দেশের সব সরকারি অফিস ও দপ্তরে অহেতুক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়বে; সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত কর্মচারীদের মাঝে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হবে; সচিবালয়ের শান্ত পরিবেশকে অহেতুক অস্থিরতা তৈরি করবে; বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারীদের মুখোমুখি দাঁড় করানো হবে।
মন্তব্য করুন