শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৫, ০৬:২০ পিএম
আপডেট : ০৫ জুন ২০২৫, ০৭:০৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কেন মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তন করল সরকার

স্বাধীনতার উল্লাসে মুক্তিযোদ্ধা দল। ছবি : সংগৃহীত
স্বাধীনতার উল্লাসে মুক্তিযোদ্ধা দল। ছবি : সংগৃহীত

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ আইনে বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ জুন) রাতে এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ৫৪ বছরে তৃতীয়বারের মতো ‘মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায়’ পরিবর্তন আনা হয়।

এ নিয়ে নানা রকম খবরে নতুন বিতর্কের মুখে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং তাজউদ্দীন আহমদসহ মুজিবনগর সরকারের নেতাদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি থাকছে। তবে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত এমএনএ বা জাতীয় পরিষদ সদস্যরা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে বিবেচিত হবেন।

বৃহস্পতিবার (০৫ জুন) এ সংক্রান্ত্র একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা।

নতুন সংজ্ঞায় মোটা দাগে জাতীয় পরিষদ সদস্য বা রাজনীতিকদের অনেকে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি থেকে বাদ পড়ছেন। কারা এই রাজনীতিক, অন্তর্বর্তী সরকার মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞায় কেন পরিবর্তন করল, এর উদ্দেশ্য কী-এসব প্রশ্ন উঠছে।

এমএনএ বা জাতীয় পরিষদ সদস্য এবং এমপিএ বা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল করে, তাদের যে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে রাখা হয়েছে, এই এমএনএ ও এমপিএদের বড় অংশই সে সময়ের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। সে কারণে রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের তৈরি করা সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হলো কি না, এমন প্রশ্ন তুলেছেন অনেক বিশ্লেষক।

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে গঠিত মুজিব বাহিনী পরে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স নাম নিয়েছিল, এ বাহিনীর সদস্যরাও নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি থেকে বাদ পড়ছেন।

সরকারি সূত্রগুলো বলছে, ওই বাহিনী ও এর সদস্যদের স্বীকৃতি থাকবে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে। অবশ্য বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতাকারী হিসেবে এদেশের যেসব গোষ্ঠীর নাম বহাল রাখা হয়েছিল নতুন এ সংজ্ঞায়, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নাম রয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞা নিয়ে অনেক প্রশ্ন বা বিভিন্ন আলোচনার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই আজম বলেন, মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় লক্ষাধিক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। তাদের বাছাই করা এবং মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বিতর্ক নিরসনের জন্য সংজ্ঞায় পরিবর্তন প্রয়োজন ছিল। আর সেই বিবেচনায় নতুন সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে।

তবে বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞা নিয়ে যে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে, তাতেও অস্পষ্টতা রয়েছে। সেজন্য বিভ্রান্তি ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও রাজনীতিক ও বিশ্লেষকদের অনেকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত স্পর্শকাতর বিষয়ে সংশোধনী আনার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

তারা বলেছেন, এমন স্পর্শকাতর বিষয়গুলোতো নির্বাচিত সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু অনির্বাচিত সরকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে বিতর্ক বাড়তে পারে। যদিও ৫৪ বছরেও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে বিতর্কের অবসান হয়নি। এর দায় রাজনৈতিক দলগুলোর বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।

নতুন সংজ্ঞায় মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতির ক্ষেত্রে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণের বিষয়কে মূল শর্ত হিসেবে আনা হয়েছে। এরসঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনায় থাকা মুজিবনগর সরকারের নেতাদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বহাল রাখা হয়েছে। ফলে শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীন আহমদসহ জাতীয় চার নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বহাল থাকছে। মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে বিবেচিত হবেন।

সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা দেশের ভেতরে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন, যারা ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

এর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), পুলিশ বাহিনী, মুক্তিবাহিনী, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) ও সেই সরকার স্বীকৃত অন্য বাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার সদস্যরাও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন। অবশ্য মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতিত নারী ও সরাসরি যুদ্ধে কাজ করা স্বাস্থ্যকর্মীদের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ স্বীকৃতি বহাল থাকছে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞা তৈরি করা হয়। সেই সংজ্ঞায় সশস্ত্র যুদ্ধে যারা অংশ গ্রহণ করেছেন, তাদের পাশাপাশি মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্ব এবং এমএনএ ও এমপিএ সদস্যদেরও মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি ছিল।

শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বাধীন মুজিব বাহিনী বা বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের সদস্যরাও মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পেয়েছিলেন ৭২ সালের সংজ্ঞায়। এরপর ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের শাসনের সময় দুই দফায় ২০১৮ সালে এবং ২০২২ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞা সংশোধন করা হয়েছিল।

২০২২ সালের সংশোধনীতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ২১ জন সদস্যকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। লেখক, সাংবাদিক, এমনকি বিশিষ্ট ব্যক্তি যারা মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন তাদেরও সবশেষ ওই সংশোধনীতে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল।

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে আনা সংশোধনীতে সেখানেই বড় ধরনের পরবর্তন আনা হলো। অবশ্য দেশের ভেতরে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর কারও নাম বাদ দেওয়া হয়নি।

পাকিস্তানি বাহিনীর এদেশীয় সহযোগী হিসেবে যারা কাজ করেছে, রাজাকার, আলবদর, আলশামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটি –এসব নাম বহাল রাখা হয়েছে নতুন সংজ্ঞায়।

কারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন, কাদের এই স্বীকৃতি থাকবে বা থাকবে না- এর সংজ্ঞায় এবারের সংশোধনীতে তিনটি শর্ত রাখা হয়েছে।

প্রথমত বলা হয়েছে, যারা ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ভূখণ্ডে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, তারাই মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি পাবেন। এ ধরনের শর্তের প্রক্ষোপটে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীন আহমদসহ মুজিবনগর সরকারের নেতাদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বহাল থাকে কি না? সংজ্ঞায় অবশ্য উল্লেখ করা হয়েছে, মুজিবনগর সরকারের নেতারা মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাবেন।

একইসঙ্গে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত এমএনএ বা জাতীয় পরিষদ ও এমপিএ বা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের মুক্তিযাদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল করে তাদের মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই তিন ধরনের বিষয় আসায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক। তারা বলছেন, এ ব্যাপারে প্রকাশিত সরকারি গেজেটের বক্তব্য স্পষ্ট করা হয়নি। কারণ ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য বা শর্ত দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞা ঠিক করা হয়েছে। ফলে এর নানা ধরনের ব্যাখ্যা করার সুযোগ আছে।

যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, সরকারি গেজেটে কোন অস্পষ্টতা নেই। কিন্তু বিষয়টা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।

তবে এরইমধ্যে কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয় যে শেখ মুজিব ও তাজউদ্দীন আহমদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে এবং বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে।

আর এমন প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দিতে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই আজম এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, মুজিব ও তাজউদ্দীন মুক্তিযোদ্ধা থাকছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকেও একই ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

যদিও সরকারের ব্যাখ্যার কারণে সুনির্দিষ্ট মুজিব ও তাজউদ্দীন বিষয়ে বিতর্ক থেমে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা ও সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে রাজনীতিক ও বিশ্লেষকদের অনেকের প্রশ্ন রয়ে গেছে।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, অন্তর্বর্তী সরকার গত বছরের নভেম্বরে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল পুনর্গঠন করেছে। সে সময়ই সরকারের পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। তখনও সংবাদমাধ্যমে সরকারের এমন চিন্তার বিষয়ে খবর প্রকাশ হয়েছিল এবং নানা বিতর্ক-আলোচনা উঠেছিল।

যেভাবে সংজ্ঞা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয় :

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল যে পুনর্গঠন করে। এই কাউন্সিলের প্রধান হলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই আজম।

এ কাউন্সিলে সদস্য রয়েছেন আরও ১০ জন। সদস্যদের একজন ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, তিনি বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি।

তিনি বলেন, তাদের কাউন্সিলে আলোচনা করে এর আইনে মুক্তিযাদ্ধা সংজ্ঞায় এই সংশাধনী আনার সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব হিসেবে আসার পর গত ১৫ মে সরকারের উচ্চপর্যায়ে তা অনুমোদন করে। তবে মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞার পরিবর্তনের সরকারি গেজেট প্রকাশ করা মঙ্গলবার।

কেন এমন পরিবর্তন করল সরকার, এই প্রশ্ন যে উঠছে, সে ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই আজম ভুয়া মুক্তিযাদ্ধা বাছাই করে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটাতে এর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) ভুয়া মুক্তিযাদ্ধা চিহ্নিত করার কাজও করছে। এই চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে।

‘নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার প্রমাণ দেওয়া অপমানজনক লাগছে’

মুক্তিযোদ্ধাদের কে সঠিক, আর কে ভুয়া-এটি বাছাই করার প্রক্রিয়াকে তাদের অনেকে ‘অপমানজনক’ হিসেবে দেখছেন। কারণ দলিল-প্রমাণ নিয়ে হাজির হতে হচ্ছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্যদের সামনে; তাদের প্রশ্নের জবাবের ওপর ভুয়া নাকি আসল চিহ্নিত হবে; ফলে রীতিমত মৌখিক পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। কয়েকদিন আগে এমন পরীক্ষায় হাজির হয়ে নিজেকে ‘আসল মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে প্রমাণ করতে পেরেছেন একজন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর জীবনের শেষ সময়ে এসে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণের পরীক্ষা দিতে হলো। এটি আমার কাছে লজ্জার ও অপমানজনক মনে হয়েছে। কোন ধরনের অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করেছি, কোন এলাকায়, কাদের সঙ্গে, কীভাবে যুদ্ধ করেছি-এসব অনেক প্রশ্ন তারা করেছে। কিন্তু প্রমাণ দিতে যদি না যেতাম, তাহলে হয়তো ভুয়া বানিয়ে দিতো, সেটা আরও পীড়াদায়ক হতো।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্য ইশতিয়াক আজিজ উলফাত বলেন, স্বাধীনতান এত বছর পর একজন মুক্তিযোদ্ধার কাছে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণ করার বিষয়টি অপমানজনক, তিনিও মনে করেন এটা।

মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় এত আগ্রহ কেন :

দেশ স্বাধীন করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার একটা বিষয় রয়েছে। তবে অনেক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন, তারা সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য কখনও আবেদন করেননি বা নেননি। স্বীকৃতি ছাড়াও সরকারি অনেকে সুবিধা পাওয়ার বিষয়ও রয়েছে। সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন অনগ্রসর গোষ্ঠীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল ১৯৭২ সালে।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে সেই কোটা সুবিধা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরপর ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনার সরকার সেই সুবিধা মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি পর্যন্ত বিস্তৃত করে। অবশ্য জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের আগে চাকরিতে সব কোটা পদ্ধতি বাতিল করতে হয়েছে। এছাড়া প্রায় দেড় লাখ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা পেয়ে থাকে। ১৯৯৬ সালেই প্রতি পরিবারকে মাসে তিনশো টাকা দিয়ে এই ভাতা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, সরকারি বিভিন্ন সুবিধা পাওয়ার জন্য ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়েছে। এজন্য তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সরকারগুলোর দলীয় চিন্তাও প্রাধান্য পেয়েছে। এমনকি সরকারি চাকরিতে প্রোমোশন পেতেও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট নিতে দেখা গেছে। আওয়ামী লীগের আমলেই পাঁচজন সচিব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়ে পদোন্নতি নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। তারা অবশ্য ধরা পড়েছিলেন এবং চাকরচ্যিুত হয়েছিলেন।

সরকারের এখতিয়ার নিয়ে বিভিন্ন দলের প্রশ্ন :

মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তন এবং ভুয়াদের চিহ্নিত করা বা তালিকা তৈরির যে প্রক্রিয়া অন্তর্বর্তী সরকার চালাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে সরকারের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমদ এ বিষয়ে বলেন, সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদেরই মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া উচিত। তবে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত স্পর্শকাতর বিষয়ে অনির্বাচিত সরকারের পদক্ষেপে বিতর্ক বাড়তে পারে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রতিক্রিয়ায় খেলাফত মজলিস / জনগণের প্রত্যাশা পূরণে বিশ্বাসযোগ্য উদ্যোগ নিশ্চিত করুন 

সারাদেশে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর

নাইটহুড পাচ্ছেন ডেভিড বেকহ্যাম

রেমিট্যান্সে ট্রাম্পের কর প্রস্তাব, প্রবাসী আয়ে বড় ধাক্কার শঙ্কায় বাংলাদেশ-ভারত

এই কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না : নাহিদ 

শাহ্‌ সিমেন্টের ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হলেন হামজা

১৩২ হলে শাকিব খানের ‘তাণ্ডব’

লোহার ফাঁকের ঈদ আনন্দ, কেরানীগঞ্জ কারাগারে মানবিক ছোঁয়া

সালাহউদ্দিন আহমদকে নিয়ে অপপ্রচার, প্রতিবাদে রামুতে বিক্ষোভ

নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করলেন তারেক রহমান

১০

প্রতিক্রিয়া / সরকারের ওপর আস্থা রাখতে চায় এবি পার্টি 

১১

এশিয়া থেকে বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত তিন দেশের

১২

ঈদের নামাজের রাকাত ছুটে গেলে কী করবেন

১৩

কোরবানি জন্য যত টাকা দিয়ে খাসি কিনলেন উপদেষ্টা আসিফ

১৪

ভারত ইংল্যান্ডে হোয়াইটওয়াশ হলে টেস্টে ফিরবেন কোহলি!

১৫

প্লাস্টিক দূষণ ঠেকাতে আর্থিক খাতের দায় 

১৬

নির্বাচনের সময় নিয়ে জামায়াতে আমির যা বললেন 

১৭

জুলাইয়ে শহীদ সাইমনের পরিবারকে বিএনপি নেতা মিল্টন ভূঁইয়ার ঈদ উপহার

১৮

নেত্রকোনায় কালবেলার সাংবাদিকের বাবা-ভাইকে কুপিয়ে জখম

১৯

এপ্রিলে নির্বাচনে রাজি, তবে সংস্কার শেষে : সারজিস

২০
X