আস্থার রঙে হাজারো ভক্তের অংশগ্রহণে সারা দেশের বিভিন্ন জেলার রাজপথ ভরে উঠেছিল রথযাত্রা ২০২৫-এ। পরম ভক্তি ও উৎসাহে টানা হয়েছিল জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার সুসজ্জিত রথ। বর্ণিল শোভাযাত্রা, ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐক্য ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য। এটি ছিল এক অনন্য দিন- ভক্তি, সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির মিলনমেলা।
সারা দেশের মধ্যে চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, জামালপুর, পাবনা, দিনাজপুর, নীলফামারী, সুনামগঞ্জ, বাগেরহাট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধির পাঠানো সংবাদের আলোকে রথযাত্রার তথ্যচিত্র উপস্থাপন করা হলো।
চট্টগ্রাম ব্যুরো চট্টগ্রামে হাজারো সনাতন ধর্মাবলম্বীর অংশগ্রহণে শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২৭ জুন) বিকাল ৩টা থেকে রথযাত্রার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। কেন্দ্রীয় রথযাত্রা কমিটির উদ্যোগে নগরীর নন্দনকাননে তুলসীধাম ও শ্রী শ্রী রাধামাধব মন্দির (ইসকন মন্দির) এবং প্রবর্তক মোড়ে ইসকনের আরেক মন্দির থেকে রথযাত্রা বের হয়।
এর আগে দুপুরে তুলসীধাম থেকে বেলুন উড়িয়ে এবং রথের রশি টেনে শুভসূচনা করা হয় রথযাত্রার। রথে অধিষ্ঠিত হন ভগবান শ্রী-জগন্নাথ, দেবী সুভদ্রা ও বলভদ্রদেব। অনুষ্ঠান উদ্বোধনে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার রাজীব রঞ্জন ও অধ্যাপক জিনবোধি ভিক্ষু। তুলসীধামের মোহন্ত ও ঋষিধাম অধিপতি শ্রীমৎ দেবদীপ পুরী মহারাজের পৌরহিত্যে ধর্মীয় আচার সম্পন্ন হয়।
নন্দনকানন ইসকন শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দির ও গৌর-নিতাই আশ্রম আয়োজিত জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসবের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথি মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম ধর্মীয় সম্প্রীতির শহর। এই শহরে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান একসঙ্গে বসবাস করেন। এখানে কোনো বিভেদ নেই। এই ঐক্য ধরে রেখে চট্টগ্রামকে একটি গ্রিন ও ক্লিন সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে সবার সহযোগিতা চাই।
সিলেট ব্যুরো সিলেটে উৎসবমুখর পরিবেশে ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা মহোৎসব শুরু হয়েছে। শুক্রবার (২৭ জুন) নগরের রিকাবীবাজার রথযাত্রা প্রাঙ্গণে সিলেটের ২৫টি মন্দির ও আখড়ার অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হয় শ্রীশ্রী জগন্নাথদেব, বলদেব ও সুভদ্রা মহারাণীর রথযাত্রা। মহোৎসবকে কেন্দ্র করে সিলেটে ৯ দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি পালন করা হবে। উল্টো রথযাত্রা আগামী ৫ জুলাই শনিবার অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার বিকেলে সিলেট নগরীর ইসকন যুগলটিলা মন্দিরে শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসবে উদ্বোধনী আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এদেশে সব সম্প্রদায়ের মানুষ সমানভাবে ধর্মীয় উৎসব পালন করে যার যার অবস্থান থেকে। এ কারণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। বিএনপি যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই সব ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করেছে।
খুলনা ব্যুরো খুলনায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে আনন্দমুখর পরিবেশে খুলনায় শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা মহোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেল ৩টায় খুলনার দৌলতপুর পাবলা বণিকপাড়া গাছতলা সার্বজনীন পূজা মন্দিরে এ রথ যাত্রার উদ্বোধন করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বকুল বলেন, ধর্মীয় ভেদাভেদে আমরা বিশ্বাস করি না, আমরা বিশ্বাস করি আমরা সবাই বাংলাদেশি। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি। একে অপরের প্রতি ভালোবাসাতে বিশ্বাস করি। একে অপরের সুখ-দুঃখে পাশে থাকাতে বিশ্বাস করি। এ দেশের সন্তান হিসেবে সবাই সবার অধিকার ভোগ করবে। যার যার ধর্ম সে সে অন্তরের অন্তস্থ থেকে পালন করবে।
কালবেলা প্রতিবেদক, গাজীপুর গাজীপুরে ভাওয়াল রাজাদের দ্বারা প্রচলিত ঐতিহ্যবাহী প্রায় দুশ বছরের প্রাচীন শ্রীশ্রী মাণিক্য মাধবের রথযাত্রা ও রথমেলা শুরু হয়েছে। শুক্রবার সকালে জেলা শহরের রথখোলায় রথ টানার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রথযাত্রা শুরু হয়। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সচিব আমিন আল পারভেজ। সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক আহম্মদ হোসেন ভুইয়া।
রথযাত্রা উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা শেষে প্রধান অতিথি, হাজারো পুণ্যার্থী নিয়ে ভক্তি সহযোগে রথ টান দিয়ে রথযাত্রা ও রথমেলার উদ্বোধন করেন। এর আগে পালকি সহযোগে দেবতা মাণিক্য মাধবকে রথে অধিষ্ঠান করা হয়। রথ টানার মধ্য দিয়ে মাণিক্য মাধব নিজ বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছেন। আগামী ৫ জুলাই উল্টো রথ যাত্রায় মাণিক্য মাধব নিজ বাড়ি ফেরার মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ রথযাত্রা।
রথযাত্রা উপলক্ষে মেলায় শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্য নাগরদোলাসহ নানা রকমের পসরা নিয়ে বসেছে দোকানিরা। প্রায় দুশ বছর আগে গাজীপুরের ভাওয়াল রাজারা এই মাণিক্য মাধবের রথযাত্রা ও রথমেলার প্রচলন করেন।
সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে দানিয়াপাড়া শ্রীশ্রী মদনমোহন রাধারানী জিউর মন্দিরে সিরাজদিখান পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে শ্রীশ্রী হরেকৃষ্ণ নামহট্ট সংঘের সহযোগিতায় আয়োজিত রথযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা আক্তার বলেন, শুভ রথযাত্রার মধ্য দিয়ে সব অশুভ শক্তির বিদায় ঘটবে। সম্প্রীতির মেলবন্ধন তৈরি হবে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের। ২৭ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত ৯ দিনব্যাপী শুভ রথযাত্রার উদ্বোধন করেন সিরাজদিখান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তৌহিদুল ইসলাম বারি।
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান উৎসব ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা শুক্রবার (২৭ জুন) ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেব মন্দির কমিটির আয়োজনে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাক-ঢোল, শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনির মাধ্যমে এই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু ও শেষ হয়।
এই উৎসব উপলক্ষে সকাল থেকেই সরিষাবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভক্তরা আসে এবং তাদের পদচারণায় মন্দির প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে ওঠে। শিশু, কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী ও বয়স্করা নানা রঙের পোশাকে সজ্জিত হয়ে ভগবান জগন্নাথদেব, বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহকে রথে স্থাপন করে রথ টানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। দুপুরের পরপরই ঢাক-ঢোল, শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনির মাধ্যমে মূল শোভাযাত্রা শুরু হয়।
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরদীতে শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেলে ঈশ্বরদী শহরের কর্মকারপাড়ায় মাতৃ মন্দিরে রথযাত্রার উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাস ও ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রণব কুমার।
রথযাত্রাটি কর্মকারপাড়া মাতৃ মন্দির থেকে শুরু হয়ে প্রদক্ষিণ শেষে মেইন রোডের প্রয়াত নরেশ চন্দ্র রায়ের বাড়িতে গিয়ে শেষ হয়। রথযাত্রা উপলক্ষে সকাল থেকেই দলে দলে নানা বয়সী মানুষ মাতৃ মন্দিরে সমবেত হতে থাকেন। পরে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা উলুধ্বনি দেন এবং ভক্তরা রশির টানে এগিয়ে নিয়ে যায় জগন্নাথ দেবের রথ।
রথযাত্রায় মাতৃমন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি কমল কর্মকার, সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল রায়, মিলন কর্মকার, মৌবাড়ি ও ঠাকুরবাড়ি মন্দির কমিটির সভাপতি স্বপন কুমার কুন্ডু, সাধারণ সম্পাদক রাজেশ সরাফ, কোষাধ্যক্ষ প্রবীর বিশ্বাস, সাংবাদিক সৌরভ দেবনাথ কৃষ্ণসহ সহস্রাধিক ভক্ত উপস্থিত ছিলেন।
দিনাজপুর প্রতিনিধি দিনাজপুরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার দুপুর সোয়া ২টায় শহরের গণেশতলাস্থ রায়সাহেববাড়ী রথখোলা মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে, আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) শহরের গুঞ্জাবাড়ী শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির থেকে বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে এবং উত্তর বালুবাড়ী শ্রীশ্রী মশান কালি মন্দির থেকে ২টায় শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা শুরু হয়।
বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব রথযাত্রা। এই রথযাত্রায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের হাজার হাজার ভক্ত খালি পায়ে রথের রশিতে টেনে শহরের বিভিন্ন সড়কে এগিয়ে নিয়ে যায়। রাস্তার দুই ধারে হাজারো ভক্ত-পুণ্যার্থী দাঁড়িয়ে প্রণাম জানায়। এ সময় তারা বাতাসা, সন্দেশ, লাড্ডু, বিভিন্ন ফল ও পয়সা ছিটিয়ে দেয়। এটি মূলত ভগবান জগন্নাথ, তার ভাই বলরাম ও বোন সুভদ্রার রথে চড়ে মন্দির থেকে বাইরে আসার একটি প্রতীকী আচার, যা হাজারো ভক্তের অংশগ্রহণে উৎসবে পরিণত হয়।
সভাপতি বিক্রমী রাম দাস ও সাধারণ সম্পাদক সর্বাত্মা বলরাম দাস ব্রহ্মচারী জানান, এই যাত্রা হলো ঈশ্বরের সবার কাছে আসার প্রতীকধ্বনী, দরিদ্র, জাতপাত নির্বিশেষে সবার জন্য তার দরজা খোলা। একে বলা হয় ‘ভক্তি আন্দোলনের উৎসব’ যেখানে ঈশ্বর নিজেই ভক্তদের কাছে যান।
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করেই অত্যন্ত আনন্দ ও উচ্ছ্বাসসহ ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে শুক্রবার দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
খোল-কর্তাল ও শঙ্খসহ বিভিন্ন বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে দুপুর ২টার দিকে বিভিন্ন বয়সী পাঁচ হাজারেরও বেশি সংখ্যক সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতি, তরুণ-তরুণী ফুলবাড়ী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শ্রীশ্রী শিব মন্দির চত্বর থেকে খালি পায়ে হেঁটে শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রায় টানার কাজে অংশ নেন। পৌরশহর প্রদক্ষিণ শেষে ফুলবাড়ীর অপর ঐতিহ্যবাহী শ্রীশ্রী শ্যামা কালী মন্দিরে শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথ নিয়ে যাওয়া হয়।
শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা শুরু এবং শেষ পর্যায়ে উল্লেখিত দুই মন্দির চত্বরে আলোচনা সভা, ধর্মীয় সংগীত, শ্রীশ্রী ভগবত গীতা পাঠ ও মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। রথযাত্রায় অংশ নেওয়া ধর্মপ্রাণ ভক্তদের বর্ণিল পোশাক ছিল দৃষ্টিনন্দন।
ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের গৌড়ীয় আশ্রমে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সনাতন রীতি অনুযায়ী প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা শুরু হয়। আট দিনের এই আনন্দ আয়োজন নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে উল্টো রথের মাধ্যমে শেষ হবে।
আজ দুপুরে উপজেলার গৌড়ীয় আশ্রমে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর ১২টায় জগন্নাথের পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজার পরপরই রথযাত্রা শুরু হয়। রথযাত্রা উৎসবে আসা নর-নারীরা রথের রশি টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে চলছিল হরিনাম সংকীর্তন এবং নারীরা উলুধ্বনি দিচ্ছিলেন।
রথযাত্রা উৎসব কমিটির সভাপতি প্রবীর দাস অধিকারী জানান, আজকের রথযাত্রা শেষে সন্ধ্যায় তালতলা সাধুবাজার সার্বজনীন হরি মন্দিরে প্রতিমা রাখা হবে। সেখানে ৯ দিন অবস্থানের পর আগামী ৫ জুলাই উল্টো রথযাত্রা উৎসবের মধ্য দিয়ে পুনরায় গৌড়ীয় আশ্রমে ফিরিয়ে আনা হবে।
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উপলক্ষে সুনামগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেল ৪টায় শহরের জগন্নাথ জিউর মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে শহরের মধ্যবাজার, পশ্চিমবাজার, ট্র্যাফিক পয়েন্ট, দূর্গাবাড়ি হয়ে নতুনপাড়া এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। এতে হাজারো ভক্তের উপস্থিতি শহরজুড়ে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে দেয়।
শোভাযাত্রাটি আয়োজন করে শ্রীশ্রী জগন্নাথ জিউর মন্দির পরিচালনা কমিটি। এই আয়োজনের মাধ্যমে শুরু হলো ১০ দিনব্যাপী রথযাত্রা উৎসব, যার সমাপ্তি হবে আগামী ৫ জুলাই ‘উল্টো রথযাত্রা’র মধ্য দিয়ে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পাল। তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ হচ্ছে সম্প্রীতির রাজধানী। এ জেলায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতির যে দৃষ্টান্ত রয়েছে, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে অনন্য। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী জগন্নাথদেব হলেন জগতের অধীশ্বর, যার কৃপায় মানুষ মোক্ষ লাভ করে।
বাগেরহাট প্রতিনিধি বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুরের লাউপালায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব শুরু হয়েছে। এ সময় দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ এখানে ছুটে আসেন। রথযাত্রা উপলক্ষে ১৫ দিনব্যাপী গ্রামীণ মেলা শুরু হয়েছে।
শুক্রবার (২৭ জুন) দুপুরে লাউপালা শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথ মন্দিরে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অগণিত ভক্ত ও দর্শনার্থীদের নিয়ে রথ টানার মধ্যদিয়ে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালাম। এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক মোহন লাল হালদার, সদস্যসচিব বাবুল হালদার বিপ্লব, যাত্রাপুর রথযাত্রা মন্দির কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বাবুল সরদারসহ স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
রথযাত্রাকে ঘিরে লাউপাড়ায় শুরু হয়েছে ১৫ দিনব্যাপী গ্রামীণ মেলা। মেলায় হস্তশিল্প, খেলনা, শিশুদের বিনোদন সরঞ্জাম, মিষ্টান্নসহ নানা ধরনের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। আগামী ১২ জুলাই ‘উল্টো রথযাত্রা’র মধ্য দিয়ে রথযাত্রা উৎসবের সমাপ্তি হবে। আয়োজকরা জানান, উৎসবজুড়ে থাকবে ধর্মীয় আলোচনা, প্রসাদ বিতরণ এবং ভক্তদের জন্য সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি বিপুল উৎসাহ-উদ্দিপনা আর আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে ব্রাহ্মবাড়িয়ায় সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণাভাবনামৃত সংঘ (ইসকন)-এর আয়োজনে জেলা শহরের মধ্যপাড়া শ্রীশ্রী রাধামাধব জিউর মন্দির থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। র্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় মন্দির শ্রীশ্রী আনন্দময়ী কালিবাড়ীতে এসে শেষ হয়। র্যালিতে সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।
রথযাত্রা সম্পর্কে ভক্তরা জানান, এই রথযাত্রার মধ্য দিয়ে জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে অসাম্প্রদায়িক ও সম্প্রতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া। সবার মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করা। রথযাত্রায় জগতের অসহিষ্ণুতা বন্ধ করার পাশাপাশি সবার জন্যে শান্তি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। আগামী ১২ জুলাই উল্টো রথযাত্রার মধ্য দিয়ে রথযাত্রার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি লক্ষ্মীপুরে আনন্দ-উচ্ছ্বাস ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা মহোৎসব। শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেলে শহরের শ্যাম সুন্দর জিউর আখড়া ও শ্রীশ্রী পরম ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভুর মন্দির থেকে রথসহ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার আকতার হোসেন, লক্ষ্মীপুর পৌর প্রশাসক জসিম উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সম্রাট খীসা, পরম ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভুর মন্দিরের অধ্যক্ষ সখাবেশ বলরাম গোপাল দাস ব্রহ্মচারী, লক্ষ্মীপুর শহর জামায়াতের আমির আবুল ফারাহ নিশান, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি শংকর মজুমদার, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মানিক সাহা ও কেন্দ্রীয় যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি শিমুল সাহা।
মন্তব্য করুন