রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখার কোটায় বরাদ্দকৃত প্লট বাগিয়ে নিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের ১৫ জন গাড়িচালক। রাজধানীর কেরানীগঞ্জে রাজউকের ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ পান ওই ১৫ জন।
গতকাল বুধবার (২৩ জুলাই) রাজউকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয় থেকে পরিচালিত একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযানে এ তথ্য উঠে আসে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালক(প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
১৫ গাড়িচালকের নামে প্লট বরাদ্দ করতে রাজউককে নির্দেশ দিয়েছিল গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। ১৫ চালকের নামে বিশেষ বিবেচনায় রাজউকের ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পের তিন ও পাঁচ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ দিতে রাজউককে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়। অথচ রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে চার শ্রেণিতে ঝিলমিল প্রকল্পের প্লট বরাদ্দের কথা ছিল।
২০২৪ সালে ৭ ফেব্রুয়ারি রাজউক চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে কর্মরত ১৫ জন গাড়িচালক কর্তৃক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী রাজউকের আওতাধীন ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পে প্রতি দুজন আবেদনকারীর অনুকূলে ১টি করে ৩ কাঠার প্লট এবং ৩ জন আবেদনকারীর অনুকূলে ১টি ৫ কাঠার প্লট বরাদ্দ প্রদানের বিষয়ে অনুমতি প্রদান করেছেন।’
১৫ গাড়িচালক হলেন- ভিভিআইপি গাড়িচালক মো. সাইফুল ইসলাম, মো. সফিকুল ইসলাম, ভিডিআইপি অ্যাম্বুলেন্সচালক মো. নূরুল ইসলাম লিটন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের গাড়িচালক মো. রাজন মাদবর, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের গাড়িচালক মো. মাহবুব হোসেন, একান্ত সচিব-১-এর গাড়িচালক মো. শাহীন, একান্ত সচিব-২-এর গাড়িচালক মো. মতিউর রহমান, সহকারী একান্ত সচিব-১-এর গাড়িচালক মো. নূর হোসেন বেপারী, সহকারী একান্ত সচিব-২-এর গাড়িচালক মো. বোরহান উদ্দিন, বিশেষ সহকারীর (মশিউর রহমান হুমায়ুন) গাড়িচালক মো. বেলাল হোসেন, চিফ ফটোগ্রাফারের গাড়িচালক মো. মিজানুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-১-এর গাড়িচালক মো. বাচ্চু হাওলাদার, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১-এর শাখার নথিপত্র পরিবহনের দায়িত্বে নিয়োজিত গাড়িচালক মো. নুরুল আলম, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর (ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া) গাড়িচালক মো. নুরনবী (ইমন) এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-২-এর গাড়িচালক মো. শাহীন।
দুদকের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, ‘এনফোর্সমেন্ট টিম রাজউক কর্তৃক পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করে। ২০০৯ সালে পূর্বাঞ্চলে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত নীতিমালার আলোকে ৯৩৪ প্লট বরাদ্দ করা হয় মর্মে টিম জানতে পারে। প্রাথমিক পর্যালোচনায় ওই বরাদ্দ নীতিমালার ১৩/এ ধারা অনুযায়ী বর্ণিত প্লটসমূহ বরাদ্দ সংক্রান্ত নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ না করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পায় দুদক টিম। এ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণান্তে এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশন বরাবর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রেরণ করবে।’ দুদকের সূত্রে মতে, বরাদ্দ অনুযায়ী দুজন চালককে তিন কাঠা করে এবং তিন জনকে পাঁচ কাঠা করে জমি দেওয়া হয়। ঝিলমিল প্রকল্পে এই বিশেষ বরাদ্দের তালিকায় আরও রয়েছেন ৪৫ জন ব্যবসায়ী, দুজন বাংলাদেশি-ব্রিটিশ নাগরিক, সাংবাদিক, বিচারপতি ও অন্যান্য পেশার লোকও রয়েছেন।
তবে বরাদ্দের নথিতে উল্লেখ নেই, এসব ব্যক্তি কীভাবে রাষ্ট্রের জন্য অসামান্য অবদান রেখেছেন।
মন্তব্য করুন