শ্রমিক সংগঠনের নেতারা, বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মীরা যৌথভাবে ৫ দফা দাবি তুলে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন ও সমাবেশে এই দাবি উত্থাপন করা হয়।
মানববন্ধনে অংশ নেয় বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস), এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ এলায়েন্স, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, গ্রিন বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন ও গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগ।
বক্তারা বলেন, বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে জীবন ও স্বাস্থ্যের চরম ঝুঁকি নিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেও গার্মেন্টস শ্রমিকসহ অন্যান্য সব শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ বর্তমানে না খেয়ে মরতে বসেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকৃত আয় অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। জীবনযাপন ব্যয় অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে কোনোভাবেই খেয়ে পরে বেঁচে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। দুঃখ দুর্দশার কথা বলতে গেলেই চাকরিচ্যুত করে ন্যায্য পাওনা না দিয়ে, কখনো আইনের অপব্যবহার করে আবার কখনো আইনের তোয়াক্কা না করে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। শ্রমিকরা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ কতৃক অনলাইন ডাটাবেইজ পদ্ধতিতে জালিয়াতির মাধ্যমে গার্মেন্টস সেক্টরের চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের কোথাও যাতে চাকরি না হয় এমন অমানবিক নিষ্ঠুর পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কাস ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসেন। সভাপতির বক্তব্যে এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ অ্যালায়েন্স এর গবেষণা তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকরা কঠোর এবং দীর্ঘ শারীরিক পরিশ্রমে নিয়োজিত এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত দারিদ্র্যস্তরের ক্যালরির মান থেকেও কম খাদ্য গ্রহণ করছে। এই অপর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণ শ্রমিক ও তাদের পরিবারের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি পোশাক শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মজুরিবোর্ড গঠনের ৬ মাস পার হয়ে গেছে কিন্তু এখনো শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগের সভাপতি ও এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ এলায়েন্স বাংলাদেশের চ্যাপ্টারের আহবায়ক কাজী রহিমা আক্তার সাথী বলেন, প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সরকারের ওয়েজ বোর্ড শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে কাজ করে। এ বছরও সরকার কাজ করছে, এখনই শ্রমিকদের আদায় করে নেওয়ার সময়। স্বার্থান্বেষী মহল শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে ষড়যন্ত্র করছে, আমাদের সচেতন থাকতে হবে। আমরা সকলে মিলে ২৩ হাজার টাকা মজুরি বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করে সরকারকে বাধ্য করব।
গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সারোয়ার হোসেন বলেন, বিশেষ একটা গোষ্ঠী মজুরি বোর্ডকে বিভ্রান্ত করার জন্য ১৭ হাজার পাঁচশত আটষট্টি টাকা প্রস্তাব করেছে, যা শ্রমিকের অধিকার ক্ষুণ্ণ করেছে। এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক গবেষণা পোশাকশিল্পের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করবে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস লেবার কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক শামীমা আক্তার বলেন, ২৩ হাজার টাকা মজুরি দিয়ে একজন শ্রমিকের কোনো রকম খেয়ে পরে বাঁচতে পারে। সেখানে ১৭ হাজার পাঁচশত আটষট্টি টাকা প্রস্তাব করা শ্রমিককে মেরে ফেলার প্রস্তাব। ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকবো।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি ইদ্রিছ আলি, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা, গ্রিন বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াস, মো. রফিকুল ইসলাম সুজন- সভাপতি; বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল বাসীর, প্রগতিশীল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুন্নাহার, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের রুপালি, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাচ্চু মিয়া, মাদারল্যান্ড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের প্রকল্প সমন্বয়কারী আরিফুর রহমান প্রমুখ।
মানববন্ধন শেষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে মর্যাদাপূর্ণ মজুরি ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে যৌথ নিয়োগকর্তার দায়বদ্ধতার সামাজিকীকরণের ধারণা শীর্ষক একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মন্তব্য করুন