পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে গ্রামে আপনজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ছুটে গেছেন রাজধানীবাসী। এতে অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায় ঢাকা। আর সেই সুযোগে রাজধানীতে বেড়েছে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি। এ সময়ে ছিনতাইকারীর হাতে নিহত হয়েছেন পুলিশ সদস্যও।
জানা গেছে, ঈদের ছুটির চার দিনে রাজধানীর ৫০টি থানায় শতাধিক চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে বাড্ডায় একটি বাসায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, রামপুরায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছেন গণমাধ্যমকর্মী।
গত ২৭ জুন ঈদের ছুটির প্রথম দিনে রাজধানীর মধ্য বাড্ডার (গুদারাঘাট) ৪ নম্বর রোডের ২ নম্বর বাড়ির তিন তলার ফ্ল্যাটে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, ছয়-সাতজন ডাকাত বাসায় ঢুকে সবার হাত-পা বেঁধে ৩০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ১১ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে।
ডাকাতির ঘটনার বিষয়ে ওইদিনই বাসার মালিক ইশতিয়াক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বিকেলে ৪টার দিকে আমার বাসায় ডাকাতি হয়। ছয়-সাতজন ডাকাত বাসায় ঢুকে আমার মা, বাবা, বোন ও বোনের তিন বছরের ছেলের হাত পা বেঁধে বাসা থেকে ৩০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ১১ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা।
এ ঘটনার পর বাড্ডা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ডাকাতির ঘটনার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে অপরাধী শনাক্ত করার কাজ চলছে। তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
ঈদের দিন রামপুরায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন গণমাধ্যমকর্মী রানা। তিনি বলেন, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন তিনি। তিনজন ছিনতাইকারী মিলে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার সময় বাধা দিলে তাকে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়।
গত শনিবার (১ জুলাই) সকালে রাজধানীর ফার্মগেটের সেজান পয়েন্টের সামনে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত হন ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল মনিরুজ্জামান তালুকদার। তিনি তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি শেরপুরে।
ঈদের ছুটি শেষে কাজে যোগ দিতে তেজগাঁও রেলস্টেশন থেকে হেঁটে ট্রাফিক অফিসের দিকে যাচ্ছিলেন। ভোরে ফার্মগেট এলাকায় পৌঁছালে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। এ সময় ছিনতাইকারীরা তার শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিবি তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মো. গোলাম সবুর। তিনি বলেন, মনিরুজ্জামান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে প্রাথমিকভাবে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
পরে শনিবার রাজধানীর গুলশানে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘ছিনতাইকারীরা রাত এবং ভোর রাতকে ছিনতাইয়ের সময় হিসেবে বেছে নেয়। এসব বিষয় মাথায় রেখে প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশি কৌশল, তৎপরতা, পেট্রোলিং কীভাবে বাড়ানো যায়, সেসব বিষয়েও কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।’
চুরি-ডাকাতির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়ে রোববার (২ জুলাই) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রাজধানী ফাঁকা থাকায় পুলিশ সদস্য হত্যাকাণ্ড এবং ডাকাতির ঘটনা—দুটিই অনাকাঙ্ক্ষিত। নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো দুর্বলতা ছিল কিনা, সেসব বিষয় খতিয়ে দেখতে ডিএমপি কমিশনারকে বলা হয়েছে। তিনি সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।
মন্তব্য করুন