কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ

নববর্ষে নির্দিষ্ট সময়ের পর উদীচীর অনুষ্ঠান অনভিপ্রেত বলছে পুলিশ

কালবেলা গ্রাফিক্স
কালবেলা গ্রাফিক্স

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান সমাপ্ত করা সংক্রান্ত সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করা অত্যন্ত অনভিপ্রেত ও বিব্রতকর বলে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

সোমবার মধ্যরাতে ডিএমপির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলা নববর্ষ উদযাপনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার যে নির্দেশনা জারি করেছে সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়টি ডিএমপির দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময়ে বাংলা সংস্কৃতির ধারক পহেলা বৈশাখ উদযাপনের উপর উগ্রবাদী আঘাত এসেছে। বার বার চেষ্ঠা করা হয়েছে সংস্কৃতি যাত্রাকে ব্যাহত করার। উগ্রবাদের এই ভয়াল থাবা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে বিভিন্ন সময়ে আক্রমণ করেছে, আঘাত করেছে সৃজনশীল ও সংস্কৃতমনা মানুষদের। উগ্রবাদীদের এই নৃশংসতায় প্রাণ দিয়েছেন অনেক কবি, সাহিত্যিক, অধ্যাপক, ব্লগারসহ মুক্তমনা এবং রুচিশীল ব্যক্তিত্ব। সর্বোপরি, জঙ্গি সংগঠনগুলোর টার্গেট হলো বাঙালি সংস্কৃতির অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করে দেশের মধ্যে একটি অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা, যা তাদের কার্যক্রমে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়।

দেশে প্রথম ১৯৯৯ সালে যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে প্রথম জঙ্গি হামলা হয়েছিল উল্লেখ করে বলা হয়, এরপর ২০০১ সালে রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা, যাত্রা প্যান্ডেলে বোমা হামলা, সিনেমা হলে বোমা হামলা , ১৭ আগস্টের সিরিজ বোমা হামলার পর বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলা হয় গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয়। এসকল হামলায় অনেক মানুষের মূল্যবান জীবন হানি হয়েছে এবং অনেকে পঙ্গু হয়েছেন। হামলা প্রতিরোধ করতে ও জনগণের জীবন বাঁচাতে গিয়ে পুলিশের অনেক সদস্য জীবন দিয়েছেন , আহত হয়েছেন বহুজন ৷

ডিএমপির বিবৃতিতে স্মরণ ককরিয়ে দেওয়া হয়, ১৯৯৩ সালে (১৪০০ বঙ্গাব্দ) বাংলা শতবর্ষ উদযাপনে সরকার কর্তৃক বাঙ্গালির এই আয়োজনে বাধাও প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু উগ্রবাদ দমনে বর্তমান সরকারের গৃহীত 'জিরো টলারেন্স' নীতির ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করায় সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ 'রোল মডেল' হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা রোধে পুলিশ সবসময়ই তৎপর।

উদীচীর মতো বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনগুলো সারা বছর যে অনুষ্ঠানগুলো আয়োজন করে থাকে তার নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ তথা সরকার নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ও পেশাদারিত্বের সাথে সেগুলো বিবেচনা করে থাকে বলে জানায় ডিএমপি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, খুব স্বাভাবিকভাবেই নববর্ষ উদযাপনে নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের কর্তব্য। পুলিশের এই নিরাপত্তা কার্যক্রমে সকল জনগণ সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবেন এটাই কাম্য, যেন আনন্দের এই অনুষ্ঠান বিষাদে পরিনত না হয়ে যায়।

নিরাপত্তা বিধানে প্রদত্ত প্রয়োজনীয় নির্দেশনা না মেনে তার বিরোধীতা করে অনুষ্ঠান করা খুবই দুঃখজনক এবং উদীচীর মত প্রগতিশীল একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের কাছ থেকে যা কখনো কাম্য নয় বলেও ডিএমপির পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়।

উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কর্তৃক সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে অনুষ্ঠান আয়োজন ও সেখানে প্রদত্ত বক্তব্য খুবই হতাশাজনক উল্লেখ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ বলছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে তাদের এহেন কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। অতীতেও ঊদীচীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে উগ্রবাদী হামলার ইতিহাস রয়েছে বিধায় উদীচী তাদের নিজেদের ও জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে ভবিষ্যতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে বলে প্রত্যাশা।

উল্লেখ্য, কয়েক বছর ধরেই বর্ষবরণ উৎসবের অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দিয়ে আসছে সরকার। বিগত বছরগুলোর মতো এবারও বাংলা নব বর্ষবরণের আয়োজন ওই সময়ের মধ্যে শেষ করতে বলা হয়। তবে রোববার পহেলা বৈশাখের সন্ধ্যায় উদীচী বর্ষবরণের জন্য সরকারের বেঁধে দেওয়া সময় মানেনি। বেঁধে দেওয়া সময়ের পরও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছে সংগঠনটি। পহেলা বৈশাখ বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সময় সংকোচনের প্রতিবাদে ওইদিন সন্ধ্যা ছয়টার পর রাজধানীর শাহবাগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংগঠনটি। তবে দ্রুত শেষ করার তাগাদা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের পর অনুষ্ঠান করায় প্রশাসনের বাধার মুখে পড়তে হয়নি তাদের। ওই অনুষ্ঠানে উদীচীর সংগঠকরা সময় বেঁধে দেয়ার বিষয়ে কঠোর সমালোচনাও করেন।

উদীচীর পক্ষ থেকে বলা হয়, কয়েক বছর ধরেই বর্ষবরণ উৎসবকে নির্দিষ্ট সময়ের ঘেরাটোপে বেঁধে দেওয়ার একতরফা পদক্ষেপ নিয়ে আসছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও সারা দেশে আয়োজিত পয়লা বৈশাখের সব উন্মুক্ত অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে শেষ করার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু উদীচী মনে করে, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ হঠকারী সিদ্ধান্ত, যা সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাছে নির্জলা আত্মসমর্পণ ছাড়া কিছুই নয়। এর মাধ্যমে পক্ষান্তরে আবহমান বাংলার সংস্কৃতিবিরোধী অন্ধকারের শক্তিকেই আশকারা দেওয়া হচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মেয়েদের উদ্বুদ্ধ করতে সিলেটের তিন স্কুলে নারী ক্রিকেটাররা

কুয়াকাটায় গরমে ক্লাসেই অসুস্থ দুই শিক্ষার্থী

ঝালকাঠিতে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু

মেয়ের শ্বশুর বাড়ি থেকে ফেরার পথে প্রাণ গেল বৃদ্ধার

স্কুল থেকে ফেরার পথে শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা

হাসপাতালে অজ্ঞাত নারীর লাশ, বিপাকে কর্তৃপক্ষ

ইসলামপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে কৃষকের মৃত্যু

তীব্র তাপদাহে বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশনা

ভয়াল ২৯ এপ্রিলের স্মরণে ঢাকাস্থ কক্সবাজার সমিতি

মালবাহী ট্রেনের ধাক্কায় ইঞ্জিনিয়ারের মৃত্যু

১০

মঙ্গলবার কেমন থাকবে আবহাওয়া?

১১

সন্তান প্রসব করাতে গিয়ে নারীর জরায়ু কাটার অভিযোগ

১২

রাজবাড়ীতে বিদ্যুৎস্পর্শে একজনের মৃত্যু

১৩

বঙ্গবন্ধু মে দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন

১৪

পাবিপ্রবিতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন

১৫

বাজারে গিগাবাইটের এআই পরিচালিত ইন্টেল ১৪ জেনারেশন ল্যাপটপ

১৬

চিকিৎসা শেষে পথেই প্রাণ গেল ৪ জনের

১৭

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রাকচাপায় কলেজছাত্র নিহত

১৮

উপজেলা নির্বাচনে আ.লীগ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ

১৯

এআইইউবিতে সিএস ফেস্ট

২০
*/ ?>
X