দেশের বেশিরভাগ এলাকায় ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। এতে তাপমাত্রা কমেছে ২-৩ ডিগ্রি। আগামী কয়েকদিনে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়তে পারে। বঙ্গোপসাগরে দুদিন পর একটি লঘুচাপ তৈরির সম্ভাবনার কথা জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে না। তবে লঘুচাপটি ক্রমে শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
সোমবার (২০ মে) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে বাগেরহাটের মোংলায় ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একদিন আগেও মোংলাতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ হিসেবে তাপমাত্রা কমেছে ২ ডিগ্রি।
এদিন ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পাওয়া গেছে ৩৩ দশমিক ৪, যা রোববার ছিল ৩৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সে হিসেবে প্রায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমেছে ঢাকায়। এ ছাড়া চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ দশমিক ৩, রাজশাহীতে ৩৪ দশমিক ৯, রংপুরে ৩১ দশমিক ৮, খুলনায় ৩৫ দশমিক ৮, সিলেটে ৩২ দশমিক ৭ এবং বরিশালে ৩৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বলেন, বুধবার বিকাল নাগাদ লঘুচাপ তৈরি হওয়ার পর বোঝা যাবে এর গতিপথ কোনদিকে যাবে। আগামী ২৪ মে থেকে দেশে বৃষ্টিপাত আরও বাড়বে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এ সময়ে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
সিনপটিক অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। পরে এটি ঘণীভূত হতে পারে। আগামী পাঁচ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।
কৃষকদের জন্য পরামর্শ : কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে বাংলাদেশের বেশিভাগ জেলার ওপরে বৃষ্টিপাতের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে; মে মাসের ২৪ তারিখ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে এ বৃষ্টিপাত ঘটবে। ফলে বাংলাদেশের কৃষকদের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তিনি।
তিনি বলেন, জমিতে পাকা ধান থাকলে তা কেটে মাড়াই করানোর এবং শাকসবজির জমিতে যেন ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জমা হওয়া বৃষ্টির পানি শস্যের ক্ষতি না করে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় আগামী ২৪ মে থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে ২৮ মে পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে মাঠে থাকা লবণ মে মাসের ২৩ তারিখের মধ্যে তুলে ফেলার প্রস্তুতি নিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এদিকে, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার চেলা নদীতে বালু আহরণের সময় বজ্রপাতে দুই বারকি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- ছাতক উপজেলার বৈশাখালী গ্রামের আব্দুল কুদ্দুছ (২৫) ও একই উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের দোলন মিয়া (২৫)।
দোয়ারাবাজার থানার ওসি বদরুল হাসান বলেন, সোমবার সকালে ওই দুই শ্রমিক বারকি নৌকায় করে চেলা নদীতে বালু আহরণ করতে যান। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতে দুজন গুরুতর আহত হন। পরে সঙ্গীরা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে তাদের মৃত্যু হয়। নিহত দুজনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বজ্রপাতে জাকির ফকির নামে এক ইমারত শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের খলিলপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত জাকির ওই ইউপির মস্তফাপুর গ্রামের মোতালেব ফকিরের ছেলে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জহির জানান, জাকির মহাসড়ক লাগোয়া খলিলপুর গ্রামে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে রেজাউলের বাড়িতে কাজ করছিলেন। কিন্তু আকস্মিক বজ্রপাত ঘটলে তিনি আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে কলাপাড়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ছাড়াও কুড়িগ্রামের উলিপুরে বজ্রপাতে মেহের জামাল (৫৩) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। রোববার রাতে উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চৌমুহনী বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে এই ঘটনা ঘটে। তিনি দর্জির কাজ করতেন। মেহের জামাল কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের নয়ার হাট এলাকার তমেজ উদ্দিনের ছেলে।
মন্তব্য করুন