ড. শামসুল আলম বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী। ২০০৯ সালের ১ জুলাই পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। সিনিয়র সচিব পদে দীর্ঘ এক যুগ চুক্তিভিত্তিক দায়িত্ব পালন করে ২০২১ সালে ১৮ জুলাই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। ড. শামসুল আলম ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর শেষে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালে ব্যাংককের থাম্মাসাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ ও ১৯৯১ সালে ইংল্যান্ডের নিউক্যাসল আপন টাইন ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশের অর্থনীতির সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা-
কালবেলা : উন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু অভিযোগ আছে, প্রচুর অপচয় হয়েছে। এটা কমিয়ে আনার জন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন কি?
ড. শামসুল আলম : পদক্ষেপ নিয়েছি বিধায় গত এক বছরের মধ্যে আর বালিশকাণ্ড ঘটেনি। ১০-১২ হাজার টাকার বঁটি-দা-কাণ্ডও শোনেননি। আমরা যথেষ্ট সতর্ক হয়েছি, শুরুতে এগুলো ছিল সত্য, পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে এখন যাচাই-বাছাই তীব্রতর করা হয়েছে। বেশি জবাবদিহির মধ্যে আনা হয়েছে। সদস্যদের বলা হয়েছে, যতই সময় কম পান, প্রতিটি খরচের হিসাব দেখাতে হবে। অতি দরদাম করা থেকে বেরিয়ে এসেছি। আর উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে অনেক ঘাটতি ছিল। সেটিকে বন্ধ করার চেষ্টা করছি। প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক সতর্ক হয়েছি। ভবন নির্মাণ আপাতত নিরুৎসাহিত করা হবে। নির্মিত ভবন সমন্বিতভাবে ব্যবহার করার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
কালবেলা : পরিকল্পনা কমিশন কি মধ্যম আয়ের দেশের চাপ সামলানোর মতো যথেষ্ট সক্ষম?
ড. শামসুল আলম : দেশের পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু সক্ষম। এখন প্রকল্পের সংখ্যা বেড়েছে। এ জন্য এখন নতুন বিভাগ করার দরকার নেই। এখানেই বর্তমান কাজগুলোকে চালিয়ে নিতে হবে। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমএডি) জন্য সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটকে (সিপিটিইউ) স্বতন্ত্র অথরিটি করা হচ্ছে। সেখানে প্রয়োজনীয় জনবল ও গাড়ি দেওয়া হয়েছে।
উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে চ্যালেঞ্জগুলো অর্থনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাটা হলো মৌলিকভাবে অর্থ ব্যবস্থা জোরদার করা। এ ক্ষেত্রে রাজস্ব বাড়ানোর ব্যবস্থা জোরদার এবং অর্থনীতিকে আরও বাজারমুখী করতে হবে। তবে সেটা শুধু দেশের বাজার নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। আয়ের জন্য গড়ে তুলতে হবে রপ্তানিমুখী অর্থনীতি। যেসব ক্ষেত্রে আমাদের দেশজ সুযোগ-সুবিধা আছে, সেগুলো আমরা অভ্যন্তরীণভাবে বিকশিত করব। যেগুলোতে আমাদের তুলনামূলক সুবিধা নেই, সেগুলো দরকার হলে আমাদের আমদানি করতে হবে এবং এ জন্য রপ্তানি বাড়াতে হবে। রপ্তানি বাড়াতে উচ্চমূল্যের নতুন নতুন পণ্য তৈরি করতে হবে। সে লক্ষ্যে টেস্টিং ল্যাব এবং রপ্তানির জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সংরক্ষণাগার গড়ে তোলা হচ্ছে। সার্বিকভাবে অর্থনীতির চাহিদা মেটানোর জন্য যে ধরনের পরিকাঠামো দরকার, সেগুলো আমরা গড়ে তুলছি। বিরতিহীন ২৪ ঘণ্টা যানবাহন চলাচলের জন্য আমরা রাস্তা তৈরি করেছি। আমরা জ্বালানি খাতে নিরাপত্তা অর্জন করেছি। তবে বিদ্যুৎ খাতে আমাদের এখনো সমস্যা আছে। এখন আমাদের জোর দিতে হবে নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর। খরচ কমিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।
কালবেলা : বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে কেন?
ড. শামসুল আলম : আমাদের অগ্রগতির পেছনে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগই কিন্তু বড় ভূমিকা পালন করেছে। স্বাধীনতা অর্জনের পর সরকারি বিনিয়োগ ছিল ৮৫ শতাংশ আর ১৫ শতাংশ ছিল বেসরকারি। আর এখন বেসরকারি বিনিয়োগ প্রায় ৮৭-৮৮ শতাংশ আর বাকি ১৬-১৭ শতাংশ সরকারি বিনিয়োগ। বেসরকারি খাতের বিস্তৃতি ঘটানোর জন্যই এত রাস্তা, অবকাঠামো, বন্দর, বিদ্যুতের নিশ্চয়তা দেওয়া। বেসরকারি বিনিয়োগ যে হারে বাড়ার কথা সেভাবে বাড়েনি। কিন্তু বেসরকারি বিনিয়োগ কিন্তু আমাদের চালিকাশক্তি। বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য আমরা ইকোনমিক জোন, পদ্মা ব্রিজ, যমুনা রেল ব্রিজ তৈরি করছি। পদ্মা সেতু হওয়াতে বছরে প্রায় ১২০০ কোটি টাকার রাজস্ব আসা শুরু হয়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের জন্য যেটা করা দরকার সেটা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য তৈরি করা হচ্ছে প্রয়োজনীয় নীতি কাঠামো। রপ্তানি খাতে কর ছাড় দেওয়া হচ্ছে। কর-জিডিপির অনুপাত নিয়ে অনেকে প্রশ্ন করেন। আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য এ অনুপাত বাড়ানো উচিত। ঋণের যথাযথ ব্যবহারের জন্য। এফডিআই আনার জন্য। এ নিম্ন কর-জিডিপি নিয়ে আমরা ৮ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। এটি আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করেনি।
কালবেলা : বাংলাদেশে অর্থ পাচার একটি বড় সমস্যা। অনেকেই এটাকে উন্নয়নের জন্য বিষফোড়া হিসেবে বলছেন। সরকার কেন এটি বন্ধ করতে পারছে না?
ড. শামসুল আলম : অর্থ সব দেশ থেকেই কমবেশি পাচার হয়। সরকারের পদক্ষেপের কারণে প্রত্যেকটা লেনদেনে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। অর্থ পাচার অনেকটা কমে আসছে। তারপরও হুন্ডির সমস্যাটা থামানো কঠিন, কারণ হুন্ডি প্রতিষ্ঠানগতভাবে ধরা যায় না। এটা একটা গভীর এবং জটিল সমস্যা। তবে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে আন্ডার ইনভয়েসিং এবং ওভার ইনভয়েসিং সমস্যা দেখা হচ্ছে। এখন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ফলে ইনভয়েসিংয়ের সমস্যা কমে এসেছে।
কালবেলা : মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং এর প্রভাব থেকে দরিদ্র মানুষকে রক্ষায় সরকারের পদক্ষেপের ঘাটতি ও দুর্বলতা রয়েছে বলে অনেকে বলছেন। আর কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে?
ড. শামসুল আলম : প্রথম থেকেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার তৎপর। যেহেতু মূল্যস্ফীতির কারণ দেশজ নয়, আমদানিকৃত পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশে দাম বাড়ছিল, সে জন্য চালসহ প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর আমদানি কর দ্রুত এবং ধাপে ধাপে কমিয়ে আনা হয়। পরিস্থিতির সুযোগে মজুতদারি করে যেন কেউ দাম না বাড়াতে পারে, সে জন্য ব্যক্তি মালিকানাধীন পণ্যগুদামে হানা দেওয়া হয়েছে। কিছু আড়তদারকে জরিমানা করা হয়েছে। পূজা-পার্বণের সময় গরিবের মাঝে বিনামূল্যে চাল বিতরণ করা হয়। টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রয়ের ব্যবস্থা বিস্তৃত করা হয়েছে। কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ সহায়তা সরকার দিয়ে যাচ্ছে। দরিদ্রদের জন্য এত বেশি সহায়তা অতীতে দেখা যায়নি। সারা দেশে বিস্তৃত কোটি ভোক্তা, বিতরণের সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা নেওয়া হয়। লাখো-কোটি জনতা জড়িত, বিতরণে কোথাও ত্রুটি থাকবে না, আমাদের আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় একেবারে দুর্বলতা থাকবে না, এটা কী করে ভাবা যায়। তবে পরিবীক্ষণ ও জবাবদিহিতা আরও বাড়াতে হবে, সেটা অস্বীকার করা যায় না।
কালবেলা : কিছু কিছু ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির কারণে হিসেবে ব্যবসায়ীদের কারসাজিকে দায়ী করা হচ্ছে। আপনার মত কী?
ড. শামসুল আলম : অর্থনীতির সংজ্ঞানুযায়ী উৎপাদনে ঘাটতি না থাকলে দাম বাড়ার কোনো কারণ থাকে না। তবে সারা দেশে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছে, এটা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। মাছের দাম গত কয়েক বছর স্থিতিশীল। প্রকৃতপক্ষে দেশে মাছের উৎপাদন বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের দোষ থাকতে পারে, সেটা আমদানিকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে হতে পারে। এখানে কতিপয় ব্যবসায়ী আঁতাত করতে পারে। কিন্তু গোটা ব্যবসায়ী সমাজ এটা করতে পারে না। তবে আমার সন্দেহ হয়, যে উৎপাদনের কথা আমরা বলছি, সেটা হচ্ছে কি না? চিনির ক্ষেত্রে কতিপয় ব্যবসায়ী আমদানি করে। আমি মনে করি, চিনি ও ভোজ্যতেল আমদানি উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত। যখনই প্রয়োজন হবে, তখন আমদানি করতে হবে।
কালবেলা : তথ্য, পরিসংখ্যান ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রকৃত অবস্থার সত্যতা নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। ৫০ বছর পেরিয়ে আসা একটি দেশের পরিসংখ্যানগত দুর্বলতা কি আমাদের ভোগাবে না?
ড. শামসুল আলম : বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস স্বাধীনতার পূর্বকাল থেকেই প্রতিষ্ঠিত এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। ২০১৩ সালের পরিসংখ্যান আইন অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশনার আইনগতভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত জাতীয় প্রতিষ্ঠান। পূর্বানুমতি সাপেক্ষে তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি অনুমোদন করিয়ে কোনো প্রশাসনিক সংস্থা/প্রতিষ্ঠান (যেমন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর) প্রশাসনিক সংস্থা তথ্য সংগ্রহ করতে পারে নিজেদের পরিবীক্ষণ ও কর্ম বিশ্লেষণের প্রয়োজনে। তবে তা প্রতিবেদন হিসেবে প্রকাশনার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বিবিএস। বিবিএস যাচাই-বাছাই ও প্রকাশনার আগেই কখনো কখনো দেখা যায় প্রশাসনিক এজেন্সি তথ্য (যেমন ফসল উৎপাদন তথ্য) আগাম প্রচার করে ফেলে বা ঘোষণা দেয়। সে ক্ষেত্রে চাহিদার পরিমাণ ও উৎপাদন তথ্যে ফারাক তৈরি হয়, যা মূল্যে সঠিকভাবে চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে বাজার দামে প্রতিফলিত হয় না। তখনই কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হয়। তখন দেখা যায়, ‘অনেক উৎপাদন’ সত্ত্বেও বাজারে এমনকি উৎপাদন মৌসুমের পরই দাম শুধুই বাড়তে থাকে। বিবিএস তথ্য সংগ্রহের আগে তথ্য সংগ্রহ ও নমুনা পদ্ধতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করে, তাছাড়া জাতিসংঘের স্ট্যাটিসটিক্যাল কমিশনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বীকৃত তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে। বিবিএস বহু রকমের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও প্রকাশ করে থাকে, যা ব্যবহার করে আমাদের সব নীতি পরিকল্পনা তৈরি হয়ে থাকে। মোটা দাগে বিবিএসের তথ্য-উপাত্ত নির্ভরযোগ্য ও সঠিক বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটায়, যা আন্তর্জাতিকভাবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। প্রশাসনিক এজেন্সিগুলোর উচিত বিবিএসের মাধ্যমে তাদের তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা, তাহলে অনেক বিভ্রান্তির সুযোগ কমে যাবে। বিবিএসের বর্তমান চ্যালেঞ্জ হলো যথাসময়ে তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ, ভিত্তি বছর যেখানে প্রয়োজন হালনাগাদ করা। এ চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
কালবেলা : বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে কি?
ড. শামসুল আলম : ব্যবসা-বাণিজ্য মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কেন সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে? মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সরকার ‘রেফারির’ ভূমিকায় থাকে। তবে খেলার নিয়ম যেন কেউ না ভাঙে সেটা দেখার দায়িত্ব সরকারের। রেফারি হিসেবে সরকার বাজার কুশীলবদের গভীর পর্যবেক্ষণে রাখবে যাতে কেউ ফাউল না খেলে, মানে পণ্য তৈরি ও বিক্রয়ে কোনো প্রতারণার সুযোগ না নিতে পারে, না ঠকাতে পারে, কারও সঙ্গে চুক্তি যদি থাকে তা না ভঙ্গ করতে পারে, অন্যের সম্পদে হস্তক্ষেপ না করতে পারে। এ তদারকি করাই আইনের শাসন, ব্যত্যয় হলেই ‘রেফারি’ ব্যবস্থা নেবে। সরকারের সিদ্ধান্ত না মানার সুযোগ নেই। বাজারের হাত সরকারের হাতের চেয়ে কখনো ব্যর্থ রাষ্ট্র ছাড়া শক্তিশালী হতে পারে না। সব পর্যায়ের বাজারকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কাজ করতে দিতে হবে।
বাজার শৃঙ্খলার ব্যত্যয় ঘটালে দক্ষ রেফারি হিসেবে বাজার কুশীলবদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই পারে। সরকার আস্থা রাখে যে ব্যবসায়ীরা নিয়মের কোনো রকম ব্যত্যয় ঘটাবে না, বাজারমূল্য এককভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবে না। বাজার কার্যক্রম প্রতিযোগিতার পরিমণ্ডলে পূর্ণ সক্রিয় থাকলে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবন নিশ্চিত হতে পারে। দেশে বিনিয়োগের হার বাড়ছে, যে কারণে প্রবৃদ্ধির হার ইতিবাচক।
কালবেলা : বর্তমান জ্বালানি সংকটের জন্য বিশেষজ্ঞরা অতিমাত্রায় আমদানিনির্ভর জ্বালানি নীতিকে দায়ী করছেন। স্থানীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে আরও জোর দেওয়া প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন কি?
ড. শামসুল আলম : অতিমাত্রায় আমদানিনির্ভরতার কারণ আমাদের গ্যাস সম্পদের অপ্রতুলতা। অফুরন্ত গ্যাস রিজার্ভ থাকলে এত আমদানিনির্ভর হতে হতো না। ব্যাপক কয়লা উত্তোলনে রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা ছিল। ফুলবাড়ীতে খনন পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনে যাওয়া যায়নি, কারণ সংশ্লিষ্ট ছয়টি উপজেলা দেবে যাওয়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায়নি। বর্তমান যুদ্ধকালীন বিশ্বসংকটে বাইরের এ ঝড় আমাদের নতুন শিক্ষা দিয়ে গেল। গ্যাস অনুসন্ধান চেষ্টাকে আমরা জোরদার করেছি। সিলেটে নতুন একটি কূপে ব্যবহারযোগ্য গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। ভোলার প্রাপ্ত গ্যাসকেও এলএনজিতে রূপান্তরের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমাদের সৌরবিদ্যুতে ব্যাপকভাবে যেতে হবে। প্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে উন্নয়ন অবকাঠামোর অপর্যাপ্ততার কারণে। ভৌত অবকাঠামোগত অপর্যাপ্ততা অনেক কমে এসেছে। বিশ্বসংকট কেটে না যাওয়া পর্যন্ত মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়তো আর সম্ভব হবে না।
মন্তব্য করুন