ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান
প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:১৯ পিএম
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:১৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামানের সাক্ষাৎকার

সংঘর্ষ কারো জন্যই ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না

ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান। ছবি : সৌজন্য
ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান। ছবি : সৌজন্য

ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক। সংসদীয় প্রক্রিয়া, বিরোধীদলের রাজনীতি, রাজনৈতিক দলের কার্যাবলি, তুলনামূলক রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনাসংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচন-পূর্ববর্তী সময়ে বড় দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থান ও সমাবেশ বিষয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুজাহিদুল ইসলাম

কালবেলা : বাংলাদেশ একটি রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি কেন?

ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান : এই মুহূর্তে বাংলাদেশ যে রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সেটা একেবারেই যে নতুন তা নয়। এটা শুরু হয়েছে আরও অনেক আগে। বিশেষ করে যখন বাংলাদেশের রাজনীতি দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছিল তখন থেকেই। বাংলাদেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে সেই থেকেই একটি সাংঘর্ষিক সম্পর্ক লক্ষ্য করা গেছে।

আর এই সাংঘর্ষিক সম্পর্কটি আরও বেশি প্রবল হয় যখন জাতীয় নির্বাচন সামনে চলে আসে। জাতীয় নির্বাচন কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়েও এই প্রধান এবং পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক জোট দুটির মধ্যে মতবিভক্তি রয়েছে। দুটি পক্ষের মধ্যেই ছাড় দেওয়ার কোনো মানসিকতা নেই। আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান, সেটি অতীতেও দেখা যায়নি এবং এখনও তার কোনো আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। এই সাংঘর্ষিক সংস্কৃতি লালন করছে সহমতের অভাবে। এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় পাওয়া যাচ্ছে না বলেই সাংঘর্ষিক সম্পর্কটি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সামনে আমাদের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের আগে খুব বেশি সময় হাতে নেই। ফলে নির্বাচনকে সামনে রেখে এই সাংঘর্ষিক সম্পর্কটি আরও বেশি ঘনীভূত হয়েছে। দুটি দলের পক্ষ থেকেই সমাধানের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এমনকি অভ্যন্তরীণ নিরপেক্ষ তৃতীয়পক্ষ থেকেও কোনো উদ্যোগ সামনে আসবে এমন লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না।

আজ ২৮ অক্টোবর বিএনপি, জামায়াত এমনকি আওয়ামী লীগও একই সময়ে রাজধানীতে সমাবেশ ডেকেছে। নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি, শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ ডেকেছে জামায়াত ইসলামী এবং বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ ডেকেছে আওয়ামী লীগ। পরস্পর বিরোধী এই দুটি জোটের একই দিনে একই জায়গার সমাবেশকে ঘিরে জনমনে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। আমরা আশা করছি এই সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবেই হবে। যে কোনো ধরনের সংঘর্ষ ইতিবাচক কোনো ফল বয়ে আনবে না।

কালবেলা : চলমান এই রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের কি কোনো উপায় নেই?

ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান : উত্তরণ ঘটানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আর উত্তরণের প্রধান রাস্তা হলো- অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। শুধু একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়েই এই সংকট থেকে উত্তরণ পাওয়া যাবে তা নয় বরং নির্বাচন ব্যবস্থাকে একটি স্বাধীন এবং শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ করতে হবে।

আমাদের দেশে প্রধান যে দুটি রাজনৈতিক দল রয়েছে তাদের নিজস্ব বিশাল সমর্থক গোষ্ঠী রয়েছে। দুটি দলেরই ক্ষমতায় যাওয়াসহ নানা ধরনের রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। দুটি দল যদি সমাধানের দিকে না আসে তাহলে রাজনৈতিক নৈরাজ্য এবং সংকট আরও বৃদ্ধি পাবে। এবার আর ২০১৪ বা ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন হবে না বলে এক ধরনের ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক শক্তিগুলোর এক ধরনের সম্পৃক্ততা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে এক ধরনের উদ্যোগ আমরা দেখতে পাচ্ছি। তবে সংকট থেকে সমাধানের জন্য তারা কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করবে তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। সেক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের সমস্যা অভ্যন্তরীণভাবেই সমাধান করতে হবে। নির্বাচনের আগে একটি সমাধান না হলে এর নেতিবাচক প্রভাব দেশবাসীকে ভোগ করতে হবে এবং সেক্ষেত্রে দলীয় রাজনীতি, গণতন্ত্রসহ সব ধরনের প্রত্যয়গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য।

কালবেলা : ২৮ অক্টোবর জামায়াতের মহাসমাবেশের ডাক, পুলিশের অনুমতি না দেওয়া এবং পুলিশের বাধার বিরুদ্ধে জামাতের সমাবেশ কর... এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?

ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান : ২৮ অক্টোবর কে একটি বিশেষ দিন হিসেবে স্মরণ করে জামায়াতে ইসলামী। তাদের বক্তব্য মতে এই দিনে তাদের ওপর এক ধরনের মারাত্মক আক্রমণ হয়েছিল। সেটাকে স্মরণ রেখেই তারা এই দিনে সমাবেশ করতে চাচ্ছে। এই সমাবেশে যুক্ত হয়েছে আরও অন্যান্য দাবি দাওয়া। বিএনপি, জামায়াত এবং আওয়ামী লীগ তিনটি রাজনৈতিক দলকে একই দিনে একই জায়গায় সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে হয়তো প্রশাসনের আপত্তি রয়েছে। হয়তো কোনো সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির আশঙ্কা থেকে জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। জামায়াতের যেহেতু রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন নেই সুতরাং আগামী নির্বাচনকে ঘিরে তারা হয়তো অন্যান্য দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে। আর এটা নির্ভর করছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তার ওপর। আজকের এই সমাবেশকে জামায়াত একটি টেস্ট কেস হিসেবে নিয়েছে। তারা যদি এই সমাবেশকে সফল করতে পারে তার ওপর নির্ভর করবে তাদের পরবর্তী রাজনৈতিক কার্যক্রম।

কালবেলা : রাজনৈতিক সমাবেশ করতে পুলিশের অনুমতির প্রয়োজন। এই বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান : আমরা জানি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সমাবেশ করার অধিকার একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশ সংবিধানেও এটি নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। সুতরাং প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম এবং সভা সমাবেশের অনুমতি দিতে হবে। আর এই রাজনৈতিক সভা সমাবেশ করতে পুলিশের অনুমতির বিষয়টি সাংবিধানিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করা যেতে পারে। কিন্তু এটাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে- যদি সমাবেশের মাধ্যমে সহিংসতার আশঙ্কা করা হয় সেক্ষেত্রে হয়তো ক্ষেত্রবিশেষে আইনের ব্যত্যয় ঘটতে পারে। তবে সমাবেশের অধিকার যে নাগরিক অধিকার সেটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

কালবেলা : আগামী জানুয়ারির মধ্যেই নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। আমাদের সামনে সময় খুব বেশি নেই। অথচ এখনো আমরা কোনো সমাধান দেখতে পাচ্ছি না। নির্বাচনকে সামনে রেখে এই অল্প সময়ের মধ্যে সংকট থেকে উত্তরণের উপায় কী বলে আপনি মনে করেন?

ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান : সংকট সমাধানের জন্য দুটো দলকেই এগিয়ে আসতে হবে। সংকট উত্তরণের লক্ষ্য থাকলে দুটো দলকেই ছাড় দেওয়ার মানসিকতা পোষণ করতে হবে। এই মুহূর্তেই দুই পক্ষের মধ্যে আলাপ আলোচনার একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত করা জরুরি। সামনে সময় খুবই কম। গণতন্ত্রের সহশক্তি হিসেবে আমাদের দেশে অন্যান্য যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের এগিয়ে আসতে হবে। মূল কথা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বাঞ্ছনীয়।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিমানে ব্যাপক পরিবর্তন আনছে ট্রাম্প প্রশাসন

পারভেজ হত্যায় গ্রেপ্তার টিনা, ৫ দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ

আইভীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশের গাড়িবহরে হামলা

ভারতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা, অস্বীকার পাকিস্তানের

পাকিস্তানে আরেকটি ভারতীয় ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত

‘৯ মাসেও গণহত্যাকারী দল নিষিদ্ধ হলো না কেন’

বাদ জুমা বড় জমায়েতের ডাক হাসনাত আবদুল্লাহর

এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা / নিহত ৪ জনের দুজন ছিলেন মসজিদের ইমাম

রাতে শিবির মাঠে নামায় পাল্টে গেল দৃশ্যপট

যমুনার সামনে রাতভর যা যা হলো

১০

কয়টি রাফায়েল আছে ভারতের, একেকটির দাম কত?

১১

ফের গোলাগুলি শুরু, উত্তেজনা তুঙ্গে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে

১২

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে নাক গলাতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র

১৩

দুপুরের মধ্যেই আ.লীগকে নিষিদ্ধের দাবি ড. মাসুদের

১৪

সকালেও বিক্ষোভ চলছে যমুনার সামনে

১৫

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে কোমলমতি শিশুরা

১৬

আগুনে ঘি ঢালা নয়, শান্তি চাই : এরদোয়ান

১৭

শুক্রবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৮

আরব সাগরে ভারতের অভিযান, টার্গেটে পাকিস্তান

১৯

০৯ মে : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

২০
X