শহীদুল হাসান খোকন
  ০২ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:০০ এএম
অনলাইন সংস্করণ
ফার্স্টপোস্টের নিবন্ধ

পশ্চিমা অর্থায়নে পরিচালিত মানবাধিকার সংস্থার টার্গেটে হাসিনা সরকার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সৌজন্য

বাংলাদেশে মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে কাজ করছে বেশ কিছু বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সংক্ষেপে যাদের বলা হয় এনজিও। সংস্থাগুলোর বেশিরভাগই চলে পশ্চিমা বিশ্বের অর্থায়নে। আর এ কারণে তারা কোথা থেকে পরিচালিত হয় সেটা তাদের মনেও রাখতে হয়। স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ নানা সময়ে ধর্মীয় মৌলবাদীদের শিকার হয়েছেন। ধর্মীয় মৌলবাদীদের দ্বারা নির্যাতিতও হয়েছেন তারা। তবে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা এনজিওগুলো এসব বিষয়ে কথা বলেছে বা প্রতিবাদ জানিয়েছে বলে তেমন নজির নেই।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের বড় কয়েকটি ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি আমরা। যশোরের অভয়নগর কিংবা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়ি ছাড়া করার ঘটনা এখনো সবার মনে দাগ কাটে। সংখ্যালঘু নিপীড়নের এসব ঘটনায় পশ্চিমা অর্থায়নে পরিচালিত কোনো এনজিও প্রতিবেদন প্রকাশে এগিয়ে আসেনি। এনজিওগুলোর কার্যক্রমে এটা স্পষ্ট যে, ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থান নিয়ে পশ্চিমারা মোটেই চিন্তিত নয়। উল্টো ধর্মীয় মৌলবাদীদের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেছে অধিকাংশ এনজিওকে। মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে এসব এনজিও মৌলবাদীদের পক্ষে মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করেছে এমন অভিযোগও রয়েছে।

২০১৩ সালে বাংলাদেশের একটি শীর্ষ ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী হেফাজতে ইসলামের একটি সমাবেশকে ঘিরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল দেশ এবং দেশের বাইরে। ওই সমাবেশকে কেন্দ্র করে ‘অধিকার’ নামে একটি মানবাধিকার সংস্থার মিথ্যা মানবাধিকার প্রতিবেদন বিশ্ব মিডিয়ার উন্মাদনা সৃষ্টি করেছিল। সরকার তখন এই মানবাধিকার সংস্থাটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়। উক্ত মামলায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠন হেফাজত ইসলামের মতিঝিলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অধিকারের তৈরি করা মানবাধিকার প্রতিবেদনটি ছিল মিথ্যা।

এ কারণে সংগঠনটির প্রধানসহ এনজিওর দুই কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্ব এখন আদালতের ওই রায়ের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে! বিষয়টা নিয়ে এখন লেখালেখি হচ্ছে বিশ্ব মিডিয়ায়। এই নিবন্ধটি সেই ঘটনার বিশ্লেষণ তুলে ধরার লক্ষ্যে। মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপরাধে ‘অধিকার’ সম্পাদক আদিলুর রহমান খানের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদের সমালোচনা করেছে বাংলাদেশ।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঘোষিত রায়ে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক বলেছেন, প্রতিবেদনের মাধ্যমে আদিলুরের সংগঠন মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রায়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের একটি মিথ্যার পরাজয় ঘটেছে। ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকায় ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে সংঘটিত সহিংসতা ও দাঙ্গার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান সম্পর্কে ‘অধিকার’ অপপ্রচারমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। অধিকারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে হেফাজতে ইসলামের অন্তত ৬১ সদস্য নিহত হয়েছেন। যদিও এই বানোয়াট দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ সরকারের কাছে উপস্থাপন করতে পারেননি আদিলুর। বিশ্লেষকরা বলছেন, আদিলুরের নেতৃত্বাধীন সংগঠন ‘অধিকার’ মূলত ক্ষমতাসীন সরকারকে বিব্রত করতে এবং মানবাধিকার ইস্যুতে দেশকে কলঙ্কিত করতে এই ভুয়া প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের দায়ে আদালতের দেওয়া কারাদণ্ডে তা আরও স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

সেদিন কী ঘটেছিল শাপলা চত্বরে?

২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে একটি সমাবেশ ও 'ঢাকা অবরোধ' কর্মসূচির আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে গঠিত গণজাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীদের নাস্তিক ও মুরতাদ ঘোষণা করে তাদের শাস্তির দাবি জানায় সংগঠনটি। হেফাজতে ইসলাম সারাদেশ থেকে কওমি মাদ্রাসার হাজার হাজার নিরীহ ছাত্রকে এই সমাবেশে নিয়ে আসে। সমাবেশে ১৩টি সংবিধানবিরোধী ও মধ্যযুগীয় দাবি পেশ করা হয়। সরকার পতনের হুমকিও দেওয়া হয়েছিল সেই সমাবেশ থেকে।

হেফাজতের কর্মসূচি শুধু সমাবেশে সীমাবদ্ধ ছিল না। সকাল থেকেই ঢাকার প্রবেশপথ অবরোধের পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্টে আগুনও দেওয়া হয়। বায়তুল মোকাররম মার্কেট, ট্রাফিক পুলিশ অফিস, হাউস বিল্ডিং, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিবহন পুল, মুক্তি ভবনসহ অনেক প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটে ভাঙচুর চালানো হয়। অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার পতনের পরিকল্পনায় বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট হেফাজতের এ আন্দোলনকে সর্বোচ্চ সমর্থন দেয়। দিনভর চলা হেফাজত ইসলামের নাশকতা মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দেয়। নির্ধারিত সময়ে সমাবেশ শেষ করে তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।

কিন্তু সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শান্তিপূর্ণ আহ্বান উপেক্ষা করে শাপলা চত্বরে রাত কাটানো এবং তাণ্ডব চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকে হেফাজত। জনগণের জানমাল রক্ষায় ৫ মে রাতে অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে কমলাপুর স্টেশনমুখী সড়ক ও বঙ্গভবনের পাশের সড়ক ফাঁকা রেখে দৈনিক বাংলা মোড় এলাকা, দিলকুশা, ফকিরাপুল, নটরডেম কলেজ এলাকায় অবস্থান নেয়। অভিযান চলাকালে সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হেফাজত কর্মীরা কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই শাপলা চত্বর ত্যাগ করে। প্রাণহানি এড়াতে সর্বোত্তম প্রচেষ্টা সত্ত্বেও পুলিশের ধারণামতে অভিযানে ১১ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে পথচারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন। তাদের অধিকাংশই নিহত হয়েছিলেন দিনব্যাপী সংঘর্ষের ফলে। (প্রথম পর্ব)

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নির্বাচন থেকে সরে গেলেন প্রতিমন্ত্রী জাকির ও তার ছেলে

বাংলাদেশের লিড ৩০০ ছাড়াল

বলিউডের সাবেক অভিনেত্রীর মুখে পাকিস্তানি আলেমের প্রশংসা

আবারও ব্যর্থ সোহান

ইউক্রেনে মাইন বিস্ফোরণে রুশ জেনারেল নিহত

সুপারস্টার তকমা নিতে চান না রণবীর

গাজায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ, লড়াই শুরু

ছুটির দিনে বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান কত?

মুশফিককে হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মৃত্যু

১০

যৌন নিপীড়নে সহায়তার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি দম্পতি গ্রেপ্তার

১১

সাগরে নিম্নচাপ, সমুদ্রবন্দরে সতর্কসংকেত

১২

দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায়

১৩

‘যা পামু তাই বেশি, পরে তো সব হারামু’

১৪

ব্রিটিশ আমলে নির্মিত মাধনগর রেলওয়ে স্টেশনে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি

১৫

উ. কোরিয়াকে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

১৬

ভুলেও খালি পেটে যেসব খাবার খাবেন না

১৭

এমপির আত্মীয়দের লক্ষ্য করে বোমা ও গুলি, নিহত ১০

১৮

দুপুরে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসবে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’

১৯

অনুপমকে জানানো সমবেদনা পাচ্ছেন অবিবাহিত অনুপম হাজরা!

২০
X