সাইফুল বিন হানিফ
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৪০ পিএম
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৪৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আমার মা-ই আমার দুর্গা

লেখক : সাইফুল বিন হানিফ।
লেখক : সাইফুল বিন হানিফ।

সবার মঙ্গল লাভের তীব্র আকাঙ্ক্ষায় সারাদেশে পালিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গা উৎসব। হেমন্তের রোদেলা দুপুরে মধ্যাহ্ন ভোজের পর সিদ্ধান্ত নিলাম ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যাওয়ার। আগারগাঁও, বিআইসিসি, গণভবন, সংসদ ভবন, খামারবাড়ী, ইন্দিরারোড়, গ্রিনরোড়, নীলক্ষেত হয়ে ঢাকেশ্বরীতে পৌঁছালাম বিকাল পাঁচটায়। যাওয়ার সময় রাস্তায় চোখে পড়ল ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’ ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’। গাড়ি যথাস্থানে রেখে মণ্ডপে ঢুকে ইচ্ছামত ছবি তুললাম। সুদীর্ঘ লাইনে দাঁড়ালাম প্রসাদ নেওয়ার বাসনায়। অধিক প্রত্যাশার প্রসাদ পেয়ে কোক ও মিষ্টি কিনে গাড়িতে বসে খেলাম আর আমাদের সাথে যুক্ত হলো সজল ঘোষ।

তারপর গেলাম জগন্নাথ হল মণ্ডপে। ঢুকার পর হাতের বাম পাশে পড়ল জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা হল। অন্তচুক্ষুয় ভেসে উঠল মেঘনা’ দির (ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা) টলমল চোখে যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও তার বাবার স্মৃতিচারণ। মণ্ডপে অসুরের রক্তস্নাত বক্ষ দেখে মনে পড়ল ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঠিক আগমুহূর্তে এদেশীয় কুলাঙ্গার রাজাকারদের সহায়তায় বুদ্ধিজীবীদের হত্যার সেই নারকিয়তায়। হঠাৎ করে বুক কেঁপে উঠল, লোম দাঁড়িয়ে গেল, স্তব্ধ হয়ে বাষ্পরুদ্ধ হয়ে রইলাম ক্ষণিক সময়। ফেরার পথে চোখে পড়ল মৃৎশিল্পের দোকানের দিকে। জিজ্ঞাসা করলাম দোকানের এগুলো কি আপনি তৈরি করেন? সে বলল আমার কি আর সাধ্য আছে বাবা; ভগবান আমাদের দিয়ে করায়। ভগ্নিপতি বানায় আর আমার বউ ফিনিসিং দেয়। বৌদ্ধ মহামানব ছিলেন এত কষ্ট করে বানিয়ে আমরা এ মহৎ শিল্পকে বিক্রি করতে বাধ্য পেটের জন্য। শুনে স্তম্বিত হয়ে ধিক্কার দিলাম রাষ্ট্রের অকৃতজ্ঞ নীতিনির্ধারকদের। যারা শুধু ভোটের সময় তেল মারলেও পরে বাঁশ মারতেও দ্বিধাবোধ করে না।

বিদেশে অর্থপাচার, শেয়ারবাজার কেলেংকারি, হলমার্ক, রানাপ্লাজা ধ্বংস, ঘুষ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারীর মত শত জঘন্য কাজে ক্ষমতাশালীরা জড়িত থাকলেও মৃৎশিল্প বাঁচানোর কোনো উদ্যোগ তো নেইই বরঞ্চ দেশ ত্যাগের পরিবেশ তৈরি করে জমি দখলের হিড়িক চলছে দেশজুড়ে।

কাগজে কলমে স্বাধীনতার এত বছরেও স্বজন হারানো শহীদ পরিবারের সদস্যদের কষ্টের দুঃখের সকল আনন্দ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আটকে গেছে হঠকারিতায়, বিচারের দাবিতে সোচ্চার গণজাগরণ মঞ্চও বিক্রিত, নেতাকর্মিরা হতাশ। অনেকের কাছেই এ উৎসব যেন বেদনাবিধুর হতাশায় নিরাশা। তাই আনন্দের দিনেও কাঁদতে হচ্ছে আমাদের আজো। কেউ কি বলতে পারবে বিচার শেষ হবে কবে, কবে একসাথে আনন্দ উপভোগ করবো প্রতিশোধের স্পৃহায়?

আসুন, প্রতিজ্ঞা করি, আগামীতে মা আসার আগেই শেষ করব রাজাকার ও তার দোসরদের বিচার। সেইসাথে ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করা দল বা সংগঠন নিষিদ্ধের দাবি করি। মানবিক আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকল্প নেই। মৌলবাদি অপশক্তি রোধে দরকার সাংস্কৃতিক বিপ্লব। কতটুকু সম্ভব এই সরকারের আমলে। ওরাও তো মৌলবাদি স্বৈরাচার।

কালোটাকার মালিকরা অনেক জায়গায় কোটি টাকা খরচ করে পূজা করছে তবে কি মা অশুরের কাছে পরাজিত? কেন মা প্রতিবাদ করে না? মণ্ডপের পাশে ক্ষুধার্ত শিশু ক্ষুধার জ্বালায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে অথচ পূজা উপলক্ষে প্রসাদ, অতিথি আপ্যায়নের দ্রবাদি ও নেশা জাতীয় কুখাদ্যের জন্য লাখ টাকা ক্ষয় হয় তবুও মা নিশ্চুপ কেন বৈষম্যময় সমাজে। মাটির মাকে পূজার চেয়ে জীবিত মায়ের পূজা শ্রেয়।

মল্লিকা সেন গুপ্তের কথায় মিল রেখে বলতে চাই- ‘আমার দুর্গা পথে প্রান্তরে স্কুল ঘরে থাকে। আমার দুর্গা বিপদে আপদে আমাকে মা বলে ডাকে। আমার দুর্গা আত্মরক্ষা শরীর পুড়বে মন না। আমার দুর্গা নারী গর্ভের রক্ত মাংস কন্যা। আমার দুর্গা গোলগাল মেয়ে আমার দুর্গা তন্বী। আমার দুর্গা কখনো ঘরোয়া কখনো আগুন বহ্নি। আমার দুর্গা মেধা পাঠিকার তিস্তা শীতলার বাঁধেরা। আমার দুর্গা মোম হয়ে জ্বলে অমাবস্যার আধেরা। আমার দুর্গা মণিপুরজুড়ে নগ্ন মিছিলে হাঁটে। আমার দুর্গা কাস্তে হাতুড়ি আউস ধানের মাঠে। আমার দুর্গা ত্রিশূল ধরেছে স্বর্গে এবং মর্ত্যে আমার দুর্গা বাঁচতে শিখেছে নিজেই নিজের শর্তে’

সনাতনীদের শারদীয় উৎসব শুভ হোক, হোক শুভ বুদ্ধির। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান একই প্রকৃতির সন্তান। তাই সুসচেতন, বিবেকবান, মানবিক মানুষদের উচিত ধর্মীয় বিভেদ ভুলে সকলে মিলেমশে আগামীর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে শ্রম-কর্ম-পেশাজীবীদের প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে হবে ‘অংশিদ্বারিত্বের গণতন্ত্র’। আসবে সমতা, সুশাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র।

পূর্বপূরুষদের লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস ও তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে রাষ্ট্র ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ও শাসন কাঠামোর বিনির্মাণ এবং সময়োপযোগী সংবিধান প্রণনয়ন করে শহীদের স্বপ্নের আগামীর বাংলাদেশ গড়ে উঠুক। উন্নত মানসিকতা ও বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তা হোক উন্নয়নের মাপকাঠি।

মা বারবার আসবেন, বারবার বিসর্জিত হবে কিন্তু হবে না অসুরের অশুভ শক্তির বিনাশ। এবারের প্রতীমা বিসর্জনের সাথে বিসর্জন হোক সাম্প্রদায়িকতা, গণতন্ত্রহীনতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কারচ্ছন্নতা, হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ ও মিথ্যাবাক।

জয় হোক মানুষের জয় হোক মানবতার

জয় বাংলা।।

লেখক : সাইফুল বিন হানিফ; প্রধান সমন্বয়ক, আগামীর বাংলাদেশ।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বৃষ্টির প্রতীক্ষা, সুসংবাদ কবে?

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস চলবে কি না জানাল মন্ত্রণালয়

৩৫ বছরপূর্তি উদযাপন করবে দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র

হাওরে ৮০ শতাংশ ধান পাকলে কেটে ফেলার নির্দেশ

বড় হারে সিরিজ শুরু জ্যোতিদের

তিন ঘণ্টা পর সিলেটের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক

নানা কর্মসূচিতে শেখ জামালের জন্মদিন পালিত

আবারও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল ঢাকা আহছানিয়া মিশন

ছাত্রলীগ নেতা হত্যা / স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়কসহ ৩ নেতাকে বহিষ্কার

টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা / ১৮ মাস পর আবার জাতীয় দলে সাইফউদ্দিন

১০

দেশের দুই জেলায় ভূমিকম্প

১১

রমজান বাহিনীর হাতে জিম্মি তিস্তা চরের মানুষ

১২

ছবি এডিট করে মেয়েদের ব্ল্যাকমেইল করত তারা

১৩

একীভূত হতে এবার আপত্তি ন্যাশনাল ব্যাংকের

১৪

হবিগঞ্জে শিলাবৃষ্টি, ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

১৫

ঢাকাসহ ৫ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা

১৬

তীব্র গরমে শ্রেণিকক্ষে অসুস্থ হয়ে পড়ল ১৮ শিক্ষার্থী

১৭

মোস্তাফিজকে একাদশে নিয়েই ব্যাটিংয়ে চেন্নাই

১৮

গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ধ্বংসের জন্য সরকার দায়ী : এবি পার্টি

১৯

নিয়োগ দিচ্ছে র‌্যাংগস ইলেকট্রনিক্স, আবেদন করুন শুধু পুরুষরা

২০
*/ ?>
X