কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ০২:৪৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

উৎপাদনের মতোই গুরুত্ব দিতে হবে খাদ্যপণ্যের সংরক্ষণে

গ্রাফিক্স : কালবেলা
গ্রাফিক্স : কালবেলা

দৈনিক কালবেলায় ১৬ অক্টোবর (সোমবার) ‘উৎপাদনের সঙ্গে বাড়ছে খাদ্যপণ্যের ব্যয়ও’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরের বিষয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত মতামত প্রকাশ করা হলো।

বাংলাদেশ চাল, মাছ, মাংস এবং শাকসবজি উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও গম, মসলা, ভোজ্যতেল, তৈলবীজ, ডাল, চিনি ও দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্যের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা এখনো রয়ে গেছে। পাশাপাশি উৎপাদন ব্যয় (পরিবহন, শ্রমিক, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, কীটনাশক, সার, রক্ষণাবেক্ষণ) বৃদ্ধি এবং সিন্ডিকেটের কারণে সাধারণ মানুষকে উচ্চমূল্যে ভোগ্যপণ্য কিনতে হচ্ছে। ফলে সার্বিক মূল্যস্ফীতির সঙ্গে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার রক্ষণাবেক্ষণ ইস্যুতে পাঠক নীরব রব লেখেন, ‘দেশে সংরক্ষণের অভাবে বছরে ৩০ শতাংশ খাদ্যপণ্য নষ্ট হয়। তাই পচনশীল খাদ্যপণ্য যেমন আলু, মরিচ, বেগুন, পটোলসহ বিভিন্ন সবজি যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য উপজেলাভিত্তিক হিমাগার স্থাপন করা দরকার। উপজেলাভিত্তিক হিমাগার স্থাপন করতে পারলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।’

অপরদিকে সিন্ডিকেটকে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন নুর আহমাদ সিদ্দিকী। তিনি লেখেন, ‘প্রথমত দেশে সিন্ডিকেটই বড় সংকট। এই সিন্ডিকেটের কাছে খাদ্যমন্ত্রীও অসহায়। কয়দিন আগে পরিকল্পনামন্ত্রী বললেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সিন্ডিকেট কী করে সরকার থেকেও শক্তিশালী হয়ে গেল। জনগণের দুর্দশায় সরকার কেন নির্বিকার? মানুষের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। মাসের ২০ তারিখ পেরোতেই মানুষের পকেট শূন্য হয়ে পড়ছে। অধিকাংশ মানুষ ধারদেনা করে দিনাতিপাত করছে। সরকারের সঠিক পদক্ষেপ না থাকাটা বর্তমান সংকটের অন্যতম কারণ। উৎপাদন থেকে শুরু করে সর্বত্র ব্যয় বাড়ছে। দেশে যতটা না সমস্যা এর চেয়ে বেশি কৃত্রিম সংকট সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে।’ এ ছাড়া আরও অন্যান্য কারণ উল্লেখ করে পাঠকরা লেখেন,

হাফেজ হোসাইন আহমেদ : সবকিছু দুর্নীতির কারণে হচ্ছে। সরকারের ব্যর্থতা, সরকারদলীয় দুর্নীতি এর কারণ। হাজার হাজার কোটি টাকা সুইস ব্যাংকে পাচার না হলে হয়তো এই সমস্যায় পড়তে হতো না।

মো. রওশন আলী : সিন্ডিকেট ও দুর্নীতি কারণে খাদ্যের দাম বাড়ছে।

মীর কাশেম : আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম কমে এলেও তা উল্টো বেড়ে চলছে। সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা যদি অতি ব্যবসাবান্ধব হন, তখন জনজীবনে এর কুপ্রভাব পড়ে। মুনাফাখোর রাজনৈতিক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বাজারে চাল, ডাল, তেল, মাছ, মাংস, শাকসবজিসহ সব খাদ্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। বাজার করতে গেলে মানুষ দিশেহারা হয়ে যায়। আয়-ব্যয় হিসাব মেলাতে মাথাঘুরে পড়ে যাওয়ার দশা হয়। এ অবস্থায় উৎপাদন পর্যায়ে খরচ বাড়লে খাদ্যপণ্যের দাম আরও বাড়বে। ভুক্তভোগীরা সীমিত আয়ের মানুষ। জীবনযাত্রার তাল মেলাতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে। অসহায় হয়ে অনেকে খাদ্যপণ্যের তালিকা কাটছাঁট করছে। অনেকে পুষ্টিকর মাছ, মাংস এমনকি ডিম খাওয়াই ছেড়ে দিয়েছে। বাজারে খুচরা বিক্রেতারা বলেন, পাইকারিতে পণ্য কিনতে ব্যয় বেশি হাওয়ায় সামান্য লাভে তাদের বিক্রি করতে হয়। পাইকারি বিক্রেতারা বলেন, উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় উৎপাদকরা দাম কমাতে পারছেন না। তদুপরি বাজারঘাটে রাজনৈতিক চাঁদাবাজি, অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি, ব্যবসায়ীরা সুযোগসন্ধানী, নানা অজুহাতে তারা খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায়। রাজনৈতিক যোগসাজশ থাকায় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সরকারি বাজার তদারকি সংস্থাগুলো আসাধু বাণিজ্য সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সাহস করে না। এমনকি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরাও অজানা কারণে সিন্ডিকেট ভাঙতে অসহায়ত্ব দেখান। এ অবস্থায় অসহায় জনগণের কপালে আরও দুর্ভোগ ও দুর্গতি অপেক্ষা করছে মনে হচ্ছে।

এ বিষয়ে পাঠকদের কিছু তথ্য জেনে রাখা প্রয়োজন। তা হলো গত ১৪ বছরে দেশের বিশেষজ্ঞরা ৭০৮টি নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রবর্তন করেছেন। এগুলো শক্তি, পানি, সার, বীজ ও কীটনাশক ব্যবহারের দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করেছে। ফলে বৈরী পরিবেশ সহনশীল জাতসহ মোট ৬৯৯টি উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল উদ্ভাবন হয়েছে। এর মধ্যে ধানের জাত ৮০টি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের প্রথম দুই মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলা কমেছে ৩৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। একই সময়ের তুলনামূলক বিচারে চলতি বছর এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ০ দশমিক ৭২ শতাংশ। অর্থাৎ কমেছে ভোগ্যপণ্যের আমদানি।

এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে গত ১১ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে চাল, গম ও ধানের ১৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৯০ টন মজুদ ছিল। এ পরিস্থিতিকে সন্তোষজনক বলে মনে করছেন গবেষক-বিশ্লেষকরা।

কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পর দেশে উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। ২০০৮-০৯ সালে মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ২৮ লক্ষ ৯৬ হাজার টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে ৪ কোটি ৭৭ লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন হয়েছে। গত ১৫ বছরে ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৯ গুণ, আলু ২, ডাল ৪, তেলবীজ ২ দশমিক ৫ ও সবজি ৮ গুণ। কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশের এ সাফল্য বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে। ধান, পেঁয়াজ, পাটসহ ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ।

কৃষি পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্যের পরও দেশের পরিস্থিতি নিয়ে পাঠক মো. জাহিদ বিন ওমর লেখেন, ‘দিন দিন মানুষ খাদ্যপণ্য কেনার ক্ষমতা হারাচ্ছে। এদিকে আবার দেশের অসাধু ব্যাবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সাধারণ মানুষকে আরও কষ্টের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। দুর্নীতির কথা আর কী বলবো। সর্বাঙ্গে ঘা মলম লাগাবো কোথায়- এমনটাই চলছে। এ পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হতে দেশের যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে দেশকে সংকটমুক্ত করতে হবে।’

মীর সাব্বির : দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই কেনাকাটা কমিয়ে দেবে। আর যেসব পণ্যের কেনাকাটা কমিয়ে দিবে, সেটা সবজি হোক বা অন্য কিছু; সেসব জিনিসের উৎপাদনেও প্রভাব পড়বে। অপরদিকে উৎপাদন কম হলে সেটার উৎপাদন খরচ আরও বেশি হবে।

খোরশেদ আলম : মিষ্টি কুমড়াও এখন কেজি হিসেবে বিক্রি করা হয়। কাঁচাবাজারে নিম্ন আয়ের মানুষ দিশেহারা।

মো. শান্ত : বড় ব্যাবসায়ীরাই সিন্ডিকেটের মূল হোতা।

মো. মোস্তাফিজুর রহমান : অমি আগাম জাতের ফুলকফি চাষ করেছি। এক বিঘা জমিতে আমার খরচ হয়েছে ৪৫-৫০ হাজার টাকা। গত কয়েক দিন আগে তিন দিন তিন রাত লাগাতার বৃষ্টিতে সব শেষ। ক্ষেতে পচন ধরছে। এখন যা আছে তাতে ১০ হাজার টাকা পাব কি না সন্দেহ। এখন পর্যন্ত কোনো কৃষি কর্মকর্তা আমার কাছে আসেননি।

আবদুল্লাহ সাঈদ : দ্রুতগামী ঘোড়ার মতো লাফিয়ে লাফিয়ে দ্রব্যমূল্যের ব্যয় বাড়ছে। এর কারণ তিনটি। মূল্যস্ফীতি, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে ঘাটতি।

গ্রন্থনা : আব্দুল্লাহ আল মাছুম

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে সাতক্ষীরায় যুবলীগের মশাল মিছিল

সরোজ মেহেদীর মায়াজালের মোড়ক উন্মোচন

যুবদলের কমিটিতে স্থান পাওয়া সেই ছাত্রলীগ-যুবলীগের পাঁচজনের পদ স্থগিত

নারী ফুটবল ইস্যু / জটিলতা কাটলেও ক্ষত শুকাবে তো!

গ্রামের বাড়িতে গিয়েও রক্ষা হলো না আ.লীগ নেত্রী দোলনার

ভাতা করে দেওয়ার নামে টাকা নেন মেম্বার

পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগে বিশেষ উদ্যোগ সরকারের

ইউক্রেনকে সহায়তা করবে ট্রাম্প, চায় দুর্লভ খনিজের অর্ধেক মালিকানা

সেই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি

ইমরানুর নেই, দ্রুততম মানব কে!

১০

‘আশিয়ান সিটি’ দিচ্ছে ঢাকায় জমি ক্রয়ের সুযোগ

১১

বান্দরবানে ধর্ষণের দায়ে দুজনের যাবজ্জীবন

১২

এক বাসাতেই লুকিয়ে ছিলেন জামাই-শ্বশুর, অতঃপর...

১৩

চট্টগ্রামে ওয়াসার মোড়ে বোমা সদৃশ বস্তুর খবরে আতঙ্ক

১৪

জলবায়ু নিয়ে ঢালাও রাষ্ট্রীয় বয়ান পরিবর্তন জরুরি : শারমীন এস মুরশিদ

১৫

নির্বাচনের জন্য জনগণকে যেন রাস্তায় মরতে না হয় : গয়েশ্বর

১৬

‘কাগমারী সম্মেলনে স্বাধীনতার বীজ বুনেছিলেন মওলানা ভাসানী’

১৭

নারীরাই ধরিয়ে দিলেন নেত্রীকে, অতঃপর...

১৮

পিরোজপুরে মহিলা কলেজে ভোটের মাধ্যমে ছাত্রদলের কমিটি

১৯

হাসপাতাল থেকে কারাগারে সাবেক এমপি লতিফ

২০
X