জাফর ইকবাল, সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ ও টেকনাফ ঘুরে এসে
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:২২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

পাচার হয় খাদ্যপণ্য-ওষুধ বিনিময়ে আসে মাদক

রাখাইন সীমান্তে গড়ে উঠেছে ‘বিনিময় বাণিজ্য সাম্রাজ্য’
ছবি : কালবেলা গ্রাফিক্স
ছবি : কালবেলা গ্রাফিক্স

রাতের সমুদ্র তখন ঘন অন্ধকারে ঢাকা। সেন্টমার্টিনের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে ঢেউয়ের শব্দে মিশে যাচ্ছে ইঞ্জিনের গর্জন। জোয়ারের পানিতে দুলছে কয়েকটি ট্রলার, আলো নিভিয়ে এগিয়ে চলছে মিয়ানমারের রাখাইনের দিকে। ট্রলারের ভেতর বস্তাভর্তি চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা পণ্য। মাছ ধরার গল্পে ঢাকা পড়ে থাকা ভয়ংকর এক বাণিজ্যের গন্ধ রয়েছে এখানে। কারণ, এসব বাংলাদেশি পণ্যের বিনিময়ে ফিরবে কোটি টাকার ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ (আইস)।

নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগর ঘেঁষা সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ ও টেকনাফ এখন এই ‘পণ্য বিনিময়ে মাদক কারবারের’ নতুন হটস্পট। মাত্র ২০ লাখ টাকার খাদ্য ও প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দিলে ফেরে অন্তত ২ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য। গভীর সমুদ্রপথ ও মৎস্যঘাট ব্যবহার করে চলছে এই গোপন লেনদেন। চক্রে জড়িত স্থানীয় প্রভাবশালী, জেলে ও রোহিঙ্গারা। নেতৃত্বে কুখ্যাত ‘সেভেন স্টার গ্রুপ’।

মেসোপটেমিয়া, সিন্ধু, মিশর ও মায়া সভ্যতার যুগে তখনো মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়নি। মানুষ নিজের উৎপাদিত অতিরিক্ত পণ্য বিনিময় করত প্রয়োজনীয় অন্য পণ্যের সঙ্গে—চালের বিনিময়ে গম, মাছের বিনিময়ে সবজি। এই বিনিময় প্রথার শুরু হয় নগর সভ্যতা গঠনেরও আগে, প্রাগৈতিহাসিক যুগে। হাজার বছর পেরিয়ে সেই প্রাচীন পদ্ধতিই যেন আজ ফিরে এসেছে ভয়ংকর এক রূপে।

রাখাইনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির খাদ্য ও ওষুধ নির্ভরতা কাজে লাগিয়ে সীমান্তের এই অসাধু চক্র গড়ে তুলেছে এই বিনিময় বাণিজ্য সাম্রাজ্য। স্থানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ‘বাংলা মাল’। রাতে সমুদ্রপথে পাচার হয় এই ‘বাংলা মাল’, ভোরের আলো ফোটার আগেই রাখাইন থেকে ফেরে মাদকভর্তি ট্রলার। নারী, শিশু ও রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করা হয় বহন ও খালাসে। সন্দেহ এড়াতে সাজানো হয় ‘অপহরণ নাটক’।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ডের তথ্য বলছে, গত ৯ মাসে দেড়শ কোটি টাকার মাদক এবং কোটি টাকার বাংলাদেশি পণ্য জব্দ করা হয়েছে। শতাধিক পাচারকারী গ্রেপ্তার হলেও গভীর সমুদ্রের অন্ধকারে এখনো সক্রিয় ‘তিনমুখী’ এই সিন্ডিকেট। এই তিন মুখ টেকনাফ, শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিনের প্রতিটি ঘাট।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সামরিক জান্তা সরকারকে হটিয়ে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেখানকার বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। তারা নিয়ন্ত্রণ নিলেও এই গোষ্ঠী সেখানে কার্যত জিম্মি অবস্থায় রয়েছে। জান্তা সরকার মিয়ানমারের মূল ভূখণ্ড থেকে রাখাইনের সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। ফলে বেঁচে থাকার খাদ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও ওষুধের জন্য আরাকান আর্মিকে নির্ভর করতে হচ্ছে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের ওপর। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে সীমান্ত এলাকার কিছু অসাধু বাসিন্দা, যাদের অধিকাংশই মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা। চক্রে রয়েছে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলে।

সমুদ্রপথে মাছ ধরার নামে এই গোষ্ঠীটি বাংলাদেশি চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ, সার, সিমেন্টসহ নানা প্রয়োজনীয় পণ্য রাখাইনে পৌঁছে দেয়। বিনিময়ে তারা মিয়ানমার থেকে দেশে নিয়ে আসে ভয়ংকর সব মাদক—ইয়াবা, ক্রিস্টাল মেথ। প্রতি ২০ লাখ টাকার বাংলাদেশি পণ্যের বিনিময়ে পাওয়া যায় অন্তত ২ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য।

এই পাচারের প্রধান হটস্পট সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ, টেকনাফ ও কক্সবাজার উপকূলের গভীর সমুদ্রপথ। ‘বাংলা মাল’-এর বিনিময়ে আনা মাদক ফিশারিঘাটের মাধ্যমে খালাস করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আর এই কাজে ব্যবহার করা হয় নারী, শিশু ও রোহিঙ্গাদের।

পরিচয় গোপন রেখে চলতি মাসের ৩ তারিখে সেন্টমার্টিন জেটিঘাটে কথা হয় পাচারচক্রের এক প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আব্দুর রশিদ ওরফে রশিদ মেম্বার।

তিনি জানান, ২০০৯ সাল থেকে তিনি রাখাইনের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছেন। প্রথমদিকে সেখান থেকে তরমুজ এনে ঢাকার সদরঘাটে বিক্রি করতেন। ব্যবসার প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে নাফ নদ পাড়ি দিয়ে রাখাইনে যেতেন, যেখানে তার একটি বড় সিন্ডিকেট রয়েছে বলেও জানান তিনি।

রশিদ মেম্বার বলেন, ‘বাংলা মালের বিনিময়ে মাদক কারবার বেশি লাভজনক। ধরা পড়লেও তেমন লোকসান হয় না। মাত্র ২০ লাখ টাকার মাল নিয়ে গেলে ২ কোটি টাকার মাদক মেলে। তাই পাঁচটা চালানের মধ্যে যদি দুই-তিনটাও ধরা পড়ে, তবু দুই থেকে তিনগুণ লাভ থাকে।’

সরাসরি মাদক ব্যবসায় যুক্ত থাকার কথা স্বীকার না করলেও তিনি গর্বের সঙ্গে বলেন, ‘আমার ট্রলার আরাকান আর্মি সম্প্রতি আটবার আটক করেছে। এর মধ্যে চারবার আমি নিজেই বোটে ছিলাম। প্রতিবারই পণ্য আর মাছ রেখে আমাদের ছেড়ে দিয়েছে।’

কালবেলার অনুসন্ধানে পণ্য পাচারের অন্তত ৪টি স্পটের সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলো হলো—দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল (ছেঁড়াদ্বীপ সংলগ্ন অঞ্চল), পশ্চিম উপকূল (ওয়েস্ট বিচ), ডাববাড়িয়া পয়েন্ট ও তার আশপাশ এবং দ্বীপের উত্তর-পূর্ব কোণ।

তখন সন্ধ্যার শেষ আলো সমুদ্রের ওপর আছড়ে পড়ছে। ঢেউয়ের ধ্বনি যেন সুর ছড়াচ্ছে গোপন এক নাটকের। এই প্রতিবেদক পাড়ি দিলেন সেন্টমার্টিনের ছেঁড়াদ্বীপ সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল, যেখানে সবচেয়ে বেশি ‘বাংলা মাল’ পাচার হয়। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় পরিচিত কয়েকজন জেলে, যারা সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন।

দ্বীপটি জোয়ারের সময় মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দিনের আলোয় হেঁটে বেড়ানো মানুষও কম, কিন্তু রাতের এই নির্জনতা সম্পূর্ণ থ্রিলার পরিবেশ। প্রতিবেদক চোখ রাখলেন অন্ধকারের জলে ভেসে চলা মাঝারি আকারের ট্রলারের দিকে। প্রতিটি ট্রলারে রাখা অস্থায়ী তাঁবুতে লুকানো চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ, সার। এই ‘বাংলা মাল’ সমুদ্রপথে নিয়ে যাওয়া হবে রাখাইনের উদ্দেশে।

এক জেলে জানালেন, আলো জ্বালালে কোস্টগার্ড বা নৌবাহিনীর নজর পড়বে। তাই ট্রলারের আলো নিভিয়ে রাখা হয়। প্রতিবেদক নিজে কয়েক ধাপ দূরে দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেছেন। প্রতিটি ট্রলারের নড়াচড়া, জেলের হাতের ইঙ্গিত, রাতের অন্ধকার—সবকিছুই যেন এক গোপন মুভির দৃশ্য। প্রতিবেদক তাদের ছায়া অনুসরণ করে দেখেছেন, কীভাবে ট্রলার থেকে মালপত্র নামানো হয়, ছোট নৌকায় সরিয়ে নেওয়া হয়, আর রাতের অন্ধকারে রাখাইনের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ডাববাড়িয়া পয়েন্ট ও ওয়েস্ট বিচও অনেকটা একই কৌশল কার্যকর।

বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সীমান্ত নিরাপত্তায় নিয়োজিত এই বাহিনী অভিযান চালিয়ে ১৫৮ কোটি ৯৭ লাখ ৮২ হাজার ১৩৬ টাকার মূল্যের মাদকদ্রব্য আটক করেছে। এ ছাড়া প্রায় ২১ লাখ টাকার বেশি বাংলাদেশি বিভিন্ন পণ্য পাচারের সময় আটক করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ৭৯ জন পাচারকারীকে হাতেনাতে আটক করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ৯৯টি।

গত ৯ মাসে বিজিবি ১৩৯ কোটি ৮০ লাখ ৬৬ হাজার ৬০০ টাকার মূল্যের ইয়াবা আটক করেছে। এসব ঘটনায় ৭৭ মামলায় ৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই সময়ে বিজিবির জালে ধরা পড়েছে ২ দশমিক ৯৪৬ কেজি ক্রিস্টাল মেথ (আইস), যার বাজারমূল্য প্রায় ১৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এই ঘটনায় দুই মামলায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া মদ, বিয়ার, গাঁজা, ফেনসিডিল ও হেরোইন আটক করা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ১২ হাজার টাকা মূল্যের। এসব ঘটনায় সাত মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের তথ্যমতে, গত জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে মিয়ানমারে পাচারের সময় ৩০৪ দশমিক ৮৬ গ্রাম স্বর্ণ, ৫১৫ বস্তা ইউরিয়া সার, ১ হাজার ২৮০ বস্তা সিমেন্ট ও ১১৫ টন প্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ বিভিন্ন মালপত্র জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া পাচারে ব্যবহৃত ১৫টি বোট আটক করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত ১৪টি মামলায় ১০২ জন পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে কোস্টগার্ড।

পাচারের রুটম্যাপ, স্থানীয় গোয়েন্দা সূত্র ও কালবেলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপ উপকূলীয় জলসীমা ব্যবহার করে বাংলাদেশে মাদক পাচারসহ অন্যান্য অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে। রাখাইন রাজ্যের উপকূলবর্তী নাইকান্দিয়া ক্যাম্প থেকে সমুদ্রপথে মাদক পাচারের জন্য গভীর সমুদ্র দিয়ে একটি নির্দিষ্ট রুট ব্যবহার করা হয়। এই রুট সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ এবং টেকনাফের উপকূলীয় জলসীমা অতিক্রম করে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। প্রথমে নাইকান্দিয়া ক্যাম্প থেকে সমুদ্রপথে মাদক ও ইয়াবা আনা হয় এবং বাংলাদেশের জলসীমা থেকে ১০-১২ নটিক্যাল মাইল দূরে নৌযান পুলে রাখা হয়। এরপর সময় ও সুযোগমতো সেখান থেকে ছোট ছোট ট্রলার ও নৌযান ব্যবহার করে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করানো হয়।

পাচারচক্রে যারা: তথ্য বলছে, সেন্টমার্টিন দ্বীপে ‘বাংলা মাল’ বিনিময় চক্রের মূলহোতা বোট মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ ওরফে ডান্ডা রশিদ, আব্দুর রশিদ মেম্বার এবং আবুল কাশেমের ছেলে রোহিঙ্গা মোনাফ ওরফে বার্মাইয়া মোনাফ। সেন্টমার্টিনকেন্দ্রিক মাদক পাচার, চোরাচালানসহ সব ধরনের

অপরাধ-অপকর্মের মূলহোতা এরা। এদের সঙ্গে রয়েছেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত নুরা মিয়ার ছেলে ও সেন্টমার্টিন স্পিডবোট লাইনম্যান জাহাঙ্গীর, ৬ নম্বর ওয়ার্ড পূর্ব পাড়ার আব্দুল হাসেমের ছেলে আজিম উদ্দিন, একই এলাকার মৃত জামাল হোসেনের ছেলে মো. জুবায়ের, মৃত জাফর আহমদের ছেলে নজির আহমেদ, মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে আবু তালেব, মৃত জসিম উদ্দিনের ছেলে কামাল হোসেন (পুরাতন রোহিঙ্গা, পরিচয়পত্র আছে), ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ, পূর্ব পাড়ার মো. নুরুল হকের ছেলে ও বিচকর্মী আশেকুর রহমান, পশ্চিম পাড়ার ১ নম্বর ওয়ার্ডের আবু সামার ছেলে নুরুল ইসলাম, পূর্ব পাড়ার কেফায়েত উল্লাহ, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব পাড়ার মকবুল আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আলম।

শাহপরীর দ্বীপ, টেকনাফ ও সাবরাং ইউনিয়ন এলাকায় মূলহোতাদের মধ্যে রয়েছেন—সাবরাং ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মান্নান, মুন্ডার ডেইল-আলীর ডেইল এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন দানু ও বাইট্র মার্কিন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ফজল হক, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দেলোয়ার ডাকাত। এ ছাড়া নাইট্টং পাড়া করিডোর নিয়ন্ত্রণ করেন গুরা মিয়া, সাবেক কমিশনার শাহআলম, দুলু, মো. ইকবাল ও সরওয়ার। টেকনাফ সদরের তুলাতলী সীমান্তে কাদের ও আব্দুল আজিজ সব ধরনের মাদক কারবারে জড়িত। বাহারছড়া ঘাট, লম্বরী ঘাট, মহেশখালীয়া পাড়া ঘাট ও খুরের মুখ নৌঘাটে সক্রিয় রয়েছে জাফর ওরফে বেজি জাফর, জসিম, মাহমুদুল হক, আজিজুল হক ওরফে আরজু, গোদার বিলের মো. কাশেম ও তার ভাই ছৈয়দ কাশেম এবং সেবর আলম। জিরো পয়েন্ট-সাবরাং বাজার এলাকায় মো. ইসমাইল, একরাম এবং শমসু মেম্বার সক্রিয়। কাটাবনিয়া এলাকায় উমর, ফারুক ও রিদুয়ান। হ্নীলা পূর্ব সিকদারপাড়ার আতর সাইফুল, হ্নীলা ২ নম্বর ওয়ার্ডের বেলাল মেম্বার, কোনারপাড়ার মো. ইদ্রিসের ছেলে রমিজ উদ্দিন, ওয়াব্রাংয়ের মোস্তাক, সেলিম, নওশেদ, ঝিমংখালীর মামুন, কানজরপাড়ার জামাল, কানজরপাড়ার বাদশা মিয়ার ছেলে সাদ্দাম হোসেন, মৌলভীবাজারের বেলাল মেম্বার, চাম বাদশার ছেলে সাদ্দাম, নুরুল হুদা মেম্বার, হোয়াইক্যং নয়া বাজারের শমসু উদ্দিন এবং উনচিপ্রাংয়ের খেলনার দোকানের আনোয়ার।

মাদক কারবারে অপহরণ নাটক, নাফ নদের দুই পাড়েই সক্রিয় সিন্ডিকেট: স্থানীয় গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, অনেক সময় ট্রলার আটকের ঘটনায় সাজানো নাটক থাকে। পাচার চক্রের জেলেরা নিজেরাই ‘বাংলা মাল’ নিয়ে স্বেচ্ছায় রাখাইনে যান। এরপর সেখানে গিয়ে অপহরণ নাটক সাজান তারা। কিছুদিন পরে আবার ফিরে আসেন। দুই পাড়ের সিন্ডিকেটের সদস্যরা আরাকান আর্মির কাছ থেকে মাদক এনে টাকা না দেওয়ার কারণেও জেলেদের আটকের তথ্য পাওয়া গেছে। জেলেদের আটক করে পাওনা টাকা উদ্ধারের তদবির করার তথ্য পাওয়া গেছে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে।

স্থানীয় গোয়েন্দা সূত্র বলছে, বাংলাদেশ অংশে এই চক্রের অন্যতম প্রধান হোতা আজাদ নামে এক ব্যক্তি। তার বাবার নাম কালু মিয়া। আরাকান আর্মির ৯৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। টাকা না দেওয়ার কারণে সম্প্রতি টেকনাফ এলাকার বেশ কয়েকটির বোটসহ জেলেদের একসঙ্গে ধরে নিয়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

একই অভিযোগ সেন্টমার্টিন বোট মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধেও। সেন্টমার্টিনের বেশ কয়েকজন জেলে কালবেলাকে জানিয়েছেন, আব্দুর রশিদ অন্তত ৩টি ট্রলার ব্যবহার করেন আরাকানে ‘বাংলা মাল’ পাচারে। তার মধ্যে কালো রঙের একটি বড় ট্রলার সবচেয়ে বেশি মাল নিয়ে গেছে। তিনিও আরাকান আর্মির টাকা মেরে দিয়েছেন। যার কারণে মাছ ধরার সময় কালো রঙের সেই বোট দেখলেই আরাকান আর্মি এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ত। এ ছাড়া সম্প্রতি সেন্টমার্টিন থেকে ৩টি ট্রলারে ১৮ জন জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে এটিও থাকতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয় জেলেরা। আর বাংলাদেশি পাচার চক্রের প্রায় পুরো সিন্ডিকেট মিয়ানমারে বসে পরিচালনা করেন মো. রফিক নামে এক ব্যক্তি। তিনি মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যের ধন্যাবতী (ধনু মন্ডু) এলাকায় থাকেন। এই রফিক বিভিন্ন পরিচয়ে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে আসেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় গোয়েন্দা সূত্রগুলো। এ ছাড়া এই সিন্ডিকেটে আবুল কালাম, গৌড়া পুতু, জুহুর আহম্মদ, সালেহ আহম্মদ, মিজানসহ একাধিক ব্যক্তি জড়িত বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘আটক জেলেদের উদ্ধারে আমরা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে চেষ্টা করছি। জেলেরা যাতে মায়ানমার সীমান্তে না যান, সে ব্যাপারেও তাদের সচেতন করছি। এ ছাড়া মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘পাচারকারীদের বিরুদ্ধে বিজিবির জিরো টলারেন্স নীতি। সীমান্তে কঠোর নজরদারির বাইরেও আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শনিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

দীর্ঘ ১৭ বছর কারাভোগের পর নির্বাচন করব কল্পনাও করিনি : বাবর

আল্লাহর করুণা আমরা আ. লীগ থেকে দুজনই বহিষ্কার হয়েছি : লতিফ সিদ্দিকী

বগুড়ায় অস্ত্র ও হত্যা মামলার আসামি স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গ্রেপ্তার

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শ্রাবণের মতবিনিময়

যশোর-৫ / মিন্টুকে বরণ করে নিলেন মতুয়া সম্প্রদায় হাজারো নারী-পুরুষ

‘জামায়াতের বিরুদ্ধে বেহেস্তের টিকিট বিক্রির অপবাদ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’

ঐক্যে যাতে ফাটল না ধরে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে : সাকি

পাওনা টাকা চাওয়ায় মোবাইল ব্যবসায়ীকে খুন, গ্রেপ্তার ১

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অবরুদ্ধ

১০

শোডাউনে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় জামায়াত কর্মীর মৃত্যু

১১

৮৩ ইনিংস পর বাবরের সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানের সিরিজ জয়

১২

আইওজেএইচের পুরস্কার প্রত্যাহার করল ডিজিটাল মিডিয়া ফোরাম

১৩

আঙ্গোলায় অদ্ভুত প্রীতি ম্যাচে গোল–অ্যাসিস্টে আলো ছড়ালেন মেসি

১৪

মোহাম্মদপুরে গোপন ককটেল কারখানার সন্ধান, যা পাওয়া গেল

১৫

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রদূতের নৈশভোজে বিএনপি মহাসচিব

১৬

পরকীয়ার জেরে ব্যবসায়ীর মরদেহ ২৬ টুকরা : এবার প্রেমিকা শামীমা গ্রেপ্তার

১৭

বিএনপির এক নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

১৮

ব্যবসায়ীর মরদেহ ২৬ টুকরা করার কারণ জানা গেল

১৯

ষড়যন্ত্রের পথ ছেড়ে ভোটের রাজনীতিতে ফিরে আসুন : মোশারফ হোসেন

২০
X