‘গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা’ এ বিষয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত মতামত প্রকাশ করা হলো।
শাহনুর শাহীন : বাংলাদেশে কিছু দিন পরপরই শোনা যায় সভার, আশুলিয়া বা মিরপুরে গামেন্টস শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছেন। কখনো বেতন বৃদ্ধির দাবিতে, কখনো বকেয়া পাওনা পরিশোধের দাবিতে, কখনো বা ঈদ-উৎসবে সময় মতো বেতন ও বোনাস আদায়ের দাবিতে মাঠে নামেন শ্রমিকরা। প্রশ্ন হলো শ্রমিকরা যেটা পাবে, যেটা তার অধিকার সেটার জন্য তাকে আন্দোলন কেন করতে হবে? বাস্তবে কোনো প্রতিষ্ঠান লোকসানে থাকলে শ্রমিকরা কখনো আন্দোলন করে না। প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যায়। কিন্তু প্রতিষ্ঠান ও নিজের ক্ষতির ঝুঁকি নেয় না। বরং মালিকরা পাওনা পরিশোধে গড়িমসি করলেই শ্রমিকরা মাঠে নামতে বাধ্য হয়। ২০০৬ সালে প্রণীত শ্রম আইন সর্বশেষ ২০১৮ সালে সংশোধন করা হয়। শ্রম আইনের নির্দেশনা বা বর্ণনা মোতাবেক প্রতি পাঁচ বছর পর পর শ্রমিকদের মজুরি পুনর্মূল্যায়ন করার কথা বলা হয়েছে। ওই বছরের নভেম্বরে ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা ঘোষণা করা হয়। সেই হিসেবে চলতি বছর পুনর্মূল্যায়নের কথা। এই বিবেচনায় শ্রম মন্ত্রণালয় ও পোশাক কারখানার মালিক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিজিএমইএ ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে। গুঞ্জন উঠে সরকার এটাই চূড়ান্ত করতে যাচ্ছিল। সেজন্য এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মাঠে নামে শ্রমিকরা। তাদের দাবি ন্যূনতম মজুরি ২২-২৫ হাজার টাকা করার। যদিও শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণ খুঁজতে গেলে শ্রমিক বঞ্চনার ধারাবাহিকতার মিছিলকেই দায়ী করতে হবে বলে মনে করছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা ১২ হাজার ৫০০ টাকায় গিয়ে ঠেকছে। এতে শ্রমিকরা সন্তুষ্ট হতে পারেনি। যার ফলে আন্দোলন এখনো চলছে। ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে আরও জোরালভাবে মাঠে নেমেছে শ্রমিকরা।
এম এন রোমান হাসান : আমার মতে যা দিছে ঠিক আছে। কারণ, এত দিন আট হাজার ছিল, এখন চার হাজার বাড়ছে।
মো. আফজাল মিয়া : বর্তমান সময়ের বাজার অনুযায়ী গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৩,০০০ টাকা থেকে ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হওয়া উচিত।
এমডি তারেক : সারা দেশে গার্মেন্টস মালিক থেকে শুরু করে বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বর্তমান যে হারে মজুরি দিচ্ছে তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টদায়ক। গার্মেন্টসের মজুরি খাতায় লেবার কোডকে কত টাকা দেখাচ্ছে মালিক কর্তৃপক্ষ সেটা তদন্ত করে তারপর একটি নিরপেক্ষ বোর্ড বসিয়ে শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণ করার জোর দাবি জানাচ্ছি। আমিও কোনো না কোনো একটা প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক।
মিসেস নীলা : যোগ্যতা অনুযায়ী বেতন দেওয়া উচিত।
কাজী হানিফুর রহমান : ১২ বছর এই লাইনেই আছি শ্রমিকদের দাবি পূরণ করতে গেলে বিশ্বের অনেক দেশ থেকে কাজ দেওয়া বন্ধ করে দেবে। বাংলাদেশে কম মূল্য পাওয়ায় তারা কাজ দিচ্ছে। এতে শ্রমিকরা খেটে খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। নইলে গ্রামে বসে বসে দিন মজুরি ছাড়া গতি ছিল না।
মোহাম্মদ আলী : ২০ হাজার থেকে শুরু করা উচিত। কারণ, শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল স্বরূপ মালিকরা হাজার হাজার কোটি টাকার পাহাড় বানাচ্ছে।
মো. নাদিম খান : কমপক্ষে বেসিক বেতন ১৮ হাজার টাকা করা উচিত।
মো. রাশিদুল ইসলাম : সব কিছুর দাম কমলে সাড়ে ১২ হাজার থাক। এতে কোনো সমস্যা নেই।
মোস্তাক মো. মোস্তাফিজুর রহমান : বর্তমান বাজার অনুযায়ী গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৩,০০০ টাকা থেকে ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হওয়া উচিত।
আবু তাহের : তেলের দাম, চিনির দাম, আলুর দাম, ডিমের দামসহ সব নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য তো আন্দোলন করতে হয় না। তলে তলে সিন্ডকেট করে বাড়িয়ে দেয়। তাহলে শ্রমিকের বেতন বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করতে হবে কেন? না কি তারা গরিব বলে জীবনের মূল্য নেই। কর্তৃপক্ষের উচিত কমপক্ষে ১৮ হাজারের বেশি করা।
মো. পারভেজ : এখনকার সময়ে ১২ হাজারে চলে কীভাবে? ২০ হাজার করা দরকার।
শাহ মো. আশিকুর রহমান : বাজারদর অনুযায়ী একটি পরিবার ১২ হাজার ৫০০ টাকায় কীভাবে চলবে। তাই হিসাব করে মোটামুটি ১৫,০০০ টাকা দিলেও আমার মনে হয় চলতো।
রাজিব মাহমুদ : বর্তমান বাজারে জিনিসপত্রের দাম অনুযায়ী এই বেতনে হয় না।
মো. আকরাম হোসাইন : ২০১৮ সালে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যা ছিল এখন সেটা দাঁড়াইছে ডাবলের চেয়ে বেশি। সেই তুলনায় ন্যূনতম মজুরি ১৬ থেকে ২০ হাজার টাকা করা উচিত।
মো. আশিকুর রহমান সবুজ : বর্তমান সময়ের বাজার অনুযায়ী গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৫,০০০ টাকা থেকে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত হওয়া উচিত বলে মনে করি। তবে সেটা যোগ্যতার ভিত্তিতে হোক।
মীর কাশেম : খেটে খাওয়া শ্রমিকরাই বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্প বিপ্লবের মূল কারিগর। জাতীয় আয়ে তাদের অবদান অগ্রগণ্য। তাদের যথাযথ সম্মান ও মজুরি দেওয়া মালিকের জাতীয় কর্তব্য। মজুরিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ঠিক থাকলে মালিক বা প্রতিষ্ঠানেরই বরং লাভ বা উন্নতি বেশি হয়। কারণ, শ্রমিকরা সন্তুষ্ট থাকলে উৎপাদন বা কাজকামে ব্যঘাত ঘটে না। তাই শ্রমিকদের প্রস্তাব বা চাহিদা বিবেচনায় মজুরি আরো বেশি হলে ভালো হতো। যা বাড়ানো হয়েছে তা গুড়ের লাভ পিঁপড়ায় খাওয়ার মতো। বাড়িভাড়া ও খাদ্যপণ্যের বাড়তি দাম দিতেই তা শেষ হয়ে যাবে।
মোহাম্মদ পারভেজ : বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য একজন শ্রমিকের সর্বনিম্ন মুজরি হওয়া উচিত ১৮-২০ হাজার টাকা। ১২,৫০০ টাকা দিয়ে শ্রমিকদের সংসার চলবে না। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, খাওয়া-দাওয়া, চিকিৎসা এবং বাচ্চাদের শিক্ষার জন্য সর্বনিম্ন ২০,০০০ টাকা প্রয়োজন। ১২,৫০০ টাকায় তাদের চলার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। অতি দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় আমাদের দেশের অর্থনীতি যাদের ওপর টিকে আছে, যারা পোশাক বানিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে মোটা অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনছে তাদের বেতন বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করতে হয়।
আল আমীন হোসাইন : দ্রব্যমূল্যের আকাশচুম্বীতে সাড়ে ১২ হাজার টাকা সকালের নাস্তার খরচ। এই টাকাতে একটা পরিবার চলতে পারে না। তাই বর্তমান বাজারের অবস্থা অনুযায়ী বেতন আরও বাড়ানো জরুরি।
মন্তব্য করুন