সভাপতি সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি ও সন্ধানী আন্তর্জাতিক চক্ষু ব্যাংক। বাংলাদেশের ১৪ লক্ষ অন্ধ ব্যক্তির মধ্যে ৫ লক্ষ কর্নিয়াজনিত অন্ধ। বাংলাদেশের যেহেতু কর্নিয়াজনিত অন্ধত্ব নিয়ে কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই তাই আমরা ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের একটি পরিসংখ্যানকে ব্যবহার করে তুলনামূলক আলোচনা করছি। এই পাঁচ লক্ষ অন্ধ মানুষের চোখের আলো ফিরিয়ে দিতে হলে বর্তমানে বাংলাদেশের যে পরিমাণ কর্নিয়া পাওয়া যায় এবং করনিয়ার অপারেশন হয় তাতে প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার বছর লাগবে।
এ যুগে এসে এত মানুষকে অন্ধত্বের মধ্যে রেখে আমরা আমাদের সামাজিক অর্থনৈতিক কোনো মানদণ্ডেই নিজেদের উন্নত বলে দাবি করার সুযোগ নেই। তাই এই জনগোষ্ঠীকে যদি আমরা মূল স্রোতের সাথে সম্পৃক্ত করতে চাই অর্থনীতির সাথে সম্পৃক্ত করতে চাই তাহলে আমাদের অবশ্যই তাদের অন্ধত্ব নিবারণ করতে হবে এবং এটা নিয়ে ভাবতে হবে। আসুন আমরা আলোচনা করি কীভাবে কর্নিয়াজনিত অন্ধ মানুষদের পাশে দাঁড়ানো যায় এবং কীভাবে তাদেরই অভিশাপ থেকে মুক্ত করে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক মূল স্রোতের সাথে সম্পৃক্ত করা যায়?
সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি ১৯৮৪ সাল থেকে এই অন্ধত্ব নিবারণের জন্য নিরলস কাজ করে আসছে। ৪০০০ এর অধিক কোনিয়া কালেকশন করেছে এবং সাড়ে তিন হাজারের মতো কর্নিয়াজনিত অন্ধ মানুষকে আলো ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। বিশাল এই অন্ধ জনগোষ্ঠীর জন্য এই পরিসংখ্যানটা মোটেও কোনো রিমারকেবল সফলতা না।
কর্নিয়া সংগ্রহ বাড়াতে হলে আমাদের কিছু স্বল্পমেয়াদি এবং কিছু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনা:
১) হাসপাতালে মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনের কাছে কর্তব্যরত চিকিৎসক নার্স এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা কর্নিয়ার জন্য আবেদন করা এবং হসপিটাল থেকে কর্নিয়াটি সংগ্রহ করে তা আই ব্যাংকে প্রেরণ করা।
২) এক্সিডেন্টাল ডেথ, যেগুলো পোস্ট মডেম হয় সেই ধরনের ডেড বডি থেকে কর্নিয়া সংগ্রহ করার জন্য হসপিটাল কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করলে প্রচুর পরিমাণে কর্নিয়া সংগ্রহ করা সম্ভব। অন্ধ ব্যক্তির চোখে তা সংযোজন করে সুন্দর পৃথিবী দেখানো সম্ভব।
৩) যারা সচেতন তারা হসপিটাল ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় মৃত ব্যক্তির পরিবারের কাছে মৃত্যুর পরে আবেদন করতে পারেন চোখের জন্য এবং তারা চোখ দিতে রাজি হলে সন্ধানী আন্তর্জাতিক চক্ষু ব্যাংকে খবর দেওয়া।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা:
১) পাঠ্য পুস্তকে আই ডোনেশন সম্পর্কে গল্প অথবা প্রবন্ধ সংযোজন করা। বিখ্যাত চক্ষু দাদাদের গল্পগুলো শোনানো যাতে করে ছোট ছোট কমলমতি শিশুরা বুঝতে পারে চক্ষুদান একটি ভালো কাজ।
২) ড্রাইভিং লাইসেন্স, জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদিতে চক্ষুদানের বিষয়ে একটি কলাম উল্লেখ রাখা যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে রয়েছে।
৩) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ইমামদের যারা ট্রেনিং করছে তাদের অবহিত করা মরণোত্তর চক্ষু দানে কোনো ধর্মীয় বাধা নেই এবং এই কথাটি যাতে তারা মসজিদে মসজিদে প্রচার করেন খুতবার সময়। এতে করে সাধারণ মানুষ বিষয়টিকে খুব সহজভাবে নিবেন।
আইনি সহযোগিতা:
২০১৮ সালের মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনটি চক্ষু দানের ক্ষেত্রে অনেকটা সহযোগী যা মানবদেহ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ১৯৯৯ সংশোধনকল্পে প্রণীত হয়েছে। এখানে অনেক কিছুই সহজীকরণ করা হয়েছে। তারপরও এক্সিডেন্টাল ডেথ যেগুলোর পোস্টমর্টেম প্রয়োজন হয় এগুলির থেকে চোখ নেওয়ার বিষয়টি সংযুক্ত করলে আরও অধিক কর্নিয়া সংগ্রহের পথ উন্মুক্ত হবে এবং এই দেশের ৫ লক্ষ কর্নিয়াজনিত মানুষ তারা অন্ধত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে।
ডা. মনিলাল আইচ লিটু: নাক, কান, গলা, থাইরয়েড রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
মন্তব্য করুন